পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৭৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

RigwaqwgN বেদ সম্পবন্ধে শ্ৰীকৃষ্ণের যেরাপ মত আমরা বঝিয়াছি বা বসবাইয়াছি, তাহার সঙ্গে দেশী মতের অপেক্ষা বিলাতী মতটা বেশী সঙ্গত। তবে পাঠক ইচ্ছা করিলে শ্ৰীধর স্বামীকে এখানে বিলাতী দলে টানিয়া লইতে পারেন। এই শ্লোকে “শ্রীতিবিপ্রতিপন্না” ভিন্ন আর একটি মাত্র পদ বাবাইবার প্রয়োজন। যাহাতে চিত্ত সমাহিত হয়, তাহাই “সমাধি”। এক্ষণে অন্যবাদ পাঠ করিলে, পাঠক বোধ হয় শ্লোকাথা বঝিতে পারবেন। অজ্ঞজনে উবাচ। স্থিতপ্ৰজ্ঞস্য কা ভাষা সমাধিস্থস্য কেশব । স্থিতধীঃ কিং প্ৰভাষেত কিমাসীত ব্ৰজেত কিম৷ ৫৪ ৷৷ অজ্ঞজনে বলিলেন,- হে কেশব! যিনি সমাধিস্থ হইয়া স্থিতপ্ৰজ্ঞ হইয়াছেন, তাঁহার কি লক্ষণ ? স্থিতধী ব্যক্তি কি বলেন, কিরাপে অবস্থান করেন, কিরাপে চলেন ? ৷৷ ৫৪ ৷৷ ইতিপকেবা সাংখ্যযোগ কহিয়া, ভগবান এক্ষণে অজ্ঞজনকে কম্পমাযোগ বিকাইলেন। কম্পমযোগের শেষ কথা এই বলিয়াছেন যে, কমফল সম্পবন্ধে যাহা (বেদেই হউক, অন্যত্রই হউক) শনিয়াছ, তাহাতে তোমার বদ্ধি বিক্ষিপ্ত হইয়া আছে। যত দিন সেরাপ থাকিবে, তত দিন তুমি কৰ্ম্মম যোগ প্রাপ্ত হইবে না। কিন্তু যখন তোমার বদ্ধি সমাধিতে (পরমেশ্বরে) স্থির হইবে, তখন তুমি যোগ প্রাপ্ত হইবে। যাহার এইরােপ বদ্ধি স্থির হইয়াছে, তাহাকে স্থিতপ্ৰজ্ঞ বা স্থিতধী বলা যায়। অর্জন এক্ষণে সেই সমাধিস্থিত স্থিতপ্রজ্ঞের লক্ষণ জিজ্ঞাসা করিতেছেন। শ্ৰীভগবানবাচ। প্ৰজহাতি যদা কামান সৰ্ব্ববান পার্থ মনোগতান। আত্মন্যেবাত্মনা তুষ্টঃ স্থিতপ্ৰজ্ঞস্তদোচ্যতে ॥ ৫৫ ৷৷ যখন সকল প্রকার মনোগত কামনা ব্যক্তিজত হয়, আপনাতে বা (আত্মাতে) আপনি তুষ্ট থাকে, তখন স্থিতপ্ৰজ্ঞ বলা যায়। ৫৫ ৷৷ কামনার পরণেই মানষের সখি দেখিতে পাই। যে কামনা ত্যাগ করিল, তাহার। আর কি সখি রহিল ? শঙ্করাচাৰ্য্য বলেন, পরমাৰ্থ দশ নলাভে অন্য আনন্দ নিম্প্রয়োজন। বেদে তােদশ ব্যক্তিকে “আত্মারাম” বলা হইয়াছে। আমরা আর একটা সোজা উত্তরে সস্তুটি। আমরা স্বীকার করি, পরমেশ্বরই আনন্দ। তিনিই পরমানন্দ। কিন্তু বহিজগৎও ঈশ্বর হইতে বিযক্তি নহে। কামনাশন্য হইলে বহিকিবষয়ে আনন্দ উপভোগ করা যাইবে না কেন ? যে কামনাশন্য, সে কি জগতের সৌন্দৰ্য্য দেখিয়া মািন্ধ হয় না ? না, জ্ঞানালিজনে আনন্দ লাভ করে না ? না সৎকৰ্ম্ম-সম্পাদনে প্রফতুল্লা হয় না? কম্পেমাির অনন্ঠানই আনন্দময়-তাহার উপর সিদ্ধি ও অসিদ্ধি তুল্যজ্ঞান থাকিলে, সে আনন্দের আর কখন লাঘব হয় না; এবং এইরপ আনন্দ আত্মাতেই; কাহারও সাপেক্ষ নহে। যিনি এই কথাটা তলাইয়া না বঝিবেন, তিনি গীতার এই সকল উক্তি, এই শ্লোক, এবং ইহার পরবত্তী কয়টি শ্লোক Ascetic Philosophy বলিয়া গণ্য করবেন। বস্তুতঃ ইহা Asceticism নহে। সংসারে যে কিছ সখি আছে, তাহার নিবিঘা উপভোগের এই তত্ত্বই উপযোগী। সংসারে উপভোগ্য যে কিছ: সািখ আছে, তাহার উপভোগের বিঘা কামনা ও ইন্দুিয়াদির প্রাবল্য। তাহা বশবত্তীর্ণ হইলে সাংসারিক সখিসকলের উপভোগের আর কোন বিঘা থাকে না, সংসার পবিত্র ও সখময় কৰ্ম্মক্ষেত্রে পরিণত হয়। এই তত্ত্ব পরিস্ফাট করিবার জন্য মৎপ্রণীত অনশীলনতত্ত্বে (ধৰ্ম্মমতত্ত্ব, প্রথম ভাগ) আমি বিশেষ যত্ন পাইয়াছি, সতরাং পািনরক্তির প্রয়োজন নাই। পরবত্তী শ্লোক সকলে ইহা বিশেষ প্রকারে পরিসফট হইবে। দঃখে অবনদ্বিগ্নমনাঃ সমুখেষ বিগতস্পহঃ। বীতরাগভয়ক্রোধঃ স্থিতধীৰ্ম্মমনিরাচ্যতে৷৷ ৫৬ ৷৷ দঃখে যিনি অন্যদ্বিগ্নমনা, সখে বিনি সপহাশন্য, যাঁহার অন্যরাগ, ভয় ও ক্ৰোধ আর নাই, তাঁহাকে স্থিতধী মনি বলা যায়।। ৫৬ ৷৷ (9S