পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৭৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্ৰীমন্তগবদ্গীতা যজ্ঞার্থাৎ কম্পমাণোহন্যত্র লোকোহয়ং কৰ্ম্মম বন্ধনঃ । তদৰ্থং কৰ্ম্ম কৌন্তেয় মক্তসঙ্গঃ সমাচর৷ ৯ ৷৷ যজ্ঞার্থ যে কম্পমা, তস্তিন্ন অন্যত্ৰ কৰ্ম্ম ইহলোকে বন্ধনের কারণ। হে কৌন্তেয়! তুমি সেই জন্য (যজ্ঞাথে) অনাসক্ত হইয়া কম্পমান ঠান করা। ৯। যজ্ঞ শব্দের অর্থের উপর এই শ্লোকের ব্যাখ্যা নিভর করে। সচরাচর বেদোক্ত ক্রিয়াকলাপকে প.ব্বে যজ্ঞ বলিত, যথা—অশ্বমেধাদি। এক্ষণে সৰ্ব্বপ্রকার শাস্ত্রোক্ত ক্রিয়াকলাপকেই যজ্ঞ বলে। প্রাচীন ভাষ্যকার শঙ্কর ও শ্ৰীধর এ অর্থ গ্রহণ করেন না। শঙ্কর বলেন,-“যজ্ঞো বৈ বিষ্ণুরিতি শ্ৰত্যেযজ্ঞ ঈশ্বরঃ”। শ্ৰীধর সেই অর্থ গ্রহণ করেন। মধ্যসদন সরস্বতীও এইরপে অর্থ করেন। রামানজ তাহা বলেন না। তিনি দ্রব্যাজনাদিক কম্পমাকে যজ্ঞ বলেন। শঙ্করান্দি-কথিত যজ্ঞ শব্দের অর্থ গ্রহণ করিলে, এই শ্লোকের অর্থ এইরহপ হয় যে, ঈশ্বরোন্দিন্ট ভিন্ন যে সকল কক্ষম, তাহা কেবল কম্পমফল ভোগের জন্য বন্ধন মাত্র। অতএব অনাসক্ত হইয়া কেবল ঈশ্বরোদেশেই কম্পমা করিবে। তাহা হইলে বিচাৰ্য্য শ্লোকের অর্থ এই হয় যে, ঈশ্বর।ারাধনাথ যে কম, তাহা ভিন্ন অন্য সকল কৰ্ম্মম, কৰ্ম্মফলভোগের বন্ধন মাত্র। অতএব কেবল ঈশ্বর।ারাধনােথই কৰ্ম্মম করিবে। এ স্থলে জিজ্ঞাস্য হইতে পারে, তাও কি হয় ? ভগবানই স্বয়ং বলিতেছেন, নিতান্ত পক্ষে প্রকৃতিতাড়িত হইয়া এবং জীবনযাত্রা নিৰ্ব্ববােহাৰ্থও কম্পমা করিত্বে হইবে। ঈশ্বরারাধনা কি সে সকল কৰ্ম্মেমরি উদ্দেশ্য হইতে পারে? আমি জীবনযাত্রা নিৰুদ্ধবাহাৰ্থ স্নান পান, আহার বায়ামাদি করি, তাহাতে ঈশ্বর।ারাধনার কি সম্পবিন্ধ থাকিতে পারে ? এ কথা বঝিবার আগে স্থির করিতে হয়, ঈশ্বর।ারাধনা কি ? মনষ্যের আরাধনা করিতে গেলে, আমরা আরাধ্য ব্যক্তির স্তবস্তৃতি করি। কিন্তু ঈশ্বরকে সেরাপ তোষামোদপ্রিয় ক্ষদ্রচেতা মনে করা যায় না। তাঁহার স্তবভূতি করিলে যদি আমাদের নিজের সখে, কি চিত্তোন্নতি হয়, তবে এরপে স্তবস্তৃতি করার পক্ষে কোন আপত্তিই নাই, এবং এরােপ স্থলে ইহা অবশ্য কৰ্ত্তব্য। কিন্তু তাই বলিয়া ইহাকে প্রকৃত ঈশ্বর।ারাধনা বলা যায় না। সেইরােপ যাহাকে সাধারণতঃ “যাগযজ্ঞ” বলে, পল্প চন্দন, নৈবেদ্য, হোম, বলি, উৎসব, এ সকলও ঈশ্বরীরাধনা নহে। ঈশ্বরের তুষ্টিসাধন ঈশ্বর।ারাধনা বটে, কিন্তু তোষামোদে তাঁহার তুষ্টিসাধন হইতে পারে না। তাঁহার অভিপ্ৰেত কায্যের সম্পাদন, তাঁহার নিয়ম প্রতিপালনই তাঁহার তুষ্টিসাধন—তাহাই প্রকৃত ঈশ্বর।ারাধনা। এই তাঁহার অভিপ্ৰেত কায্যের সম্পাদন ও তাঁহার নিয়ম প্রতিপালন কাহাকে বলি ? বিষ্ণুপরাণে প্ৰহাদ এক কথায় এই প্রশেনর অতি সন্দর উত্তর দিয়াছেন “সব্বত্র দৈত্যাঃ সমতামপেত সমত্ব মারাধনমচুতস্য৷” সব্বভূতে সমদণ্টিই প্রকৃত ঈশ্বরারাধনা; আমরা ক্রমশঃ ভূয়ো ভুয়ঃ দেখিব, গীতোক্ত ঈশ্বর।ারাধনাও তাই-সব্বভুতে সমদলিট, সব্বভুতে আত্মবৎ জ্ঞান, এবং সব্বভূতের হিতসাধন। অতএব কৰ্ম্মযোগীর কম্পেমর একমাত্র উদ্দেশ্য, সব্বভূতের হিতসাধন। যে কম্পমকত্তা, সে নিজেও সব্বভূতের অন্তর্গত। অতএব আত্মরক্ষাও ঈশ্বরাভিপ্রেত। জগদীশ্বর আত্মরক্ষার ভার, সকলকেই নিজের উপর দিয়াছেন। এ সকল কথা আমি সবিস্তারে ধৰ্ম্মমতত্ত্বে বাকাইয়াছি, পনরাক্তির প্রয়োজন নাই। এই নবম শ্লোকে বলা হইতেছে যে, “যজ্ঞ” (যে অর্থেই হউক) ভিন্ন অন্যত্র কম বন্ধন মাত্র। “বন্ধন” কি, এইটা বঝাইতে বাকি আছে। অন্যবিধ কৰ্ম্মম নিৰ্ম্মফল হয় বা পাপীজনক, এমন কথা বলা হইতেছে না-বলা হইতেছে, তাহা বন্ধনস্বরাপ। এই বন্ধন বঝিতে জন্মান্তরবাদ স্মরণ করিতে হইবে। কম্পমা করিলেই জলমান্তরে তাহার ফল ভোগ করিতে হইবে। কম্পমফিল-- হইবে। যত দিন জন্মের পর জন্ম হইবে, তত দিন জীবের মাক্তি নাই। মাক্তি প্রতিবন্ধক বলিয়াই কৰ্ম্মম বন্ধন মাত্র। এক্ষণে জিজ্ঞাস্য হইতে পারে,-যদি জলমান্তর না থাকে ? তাহা হইলেও গীতোক্ত নিৰ্ম্মকাম কৰ্ম্মই কি ধৰ্ম্মান মোদিত ? না, নিস্কাম কৰ্ম্মম ও যা, সকাম কৰ্ম্মও তা ? 3