পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৭৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্ৰীমদ্ভগবদগীতা শঙ্কর ও শ্ৰীধর সবামী বলেন, (বলিবার বিশেষ প্রয়োজন দেখা যায় না) “পণগুযজ্ঞাদিভিরদত্ত্বা", পণ্ডিযজ্ঞাদির দ্বারা না দিয়া খায়, সে চোর। পঞ্চ যজ্ঞ যথা । অধ্যাপনং ব্রহ্মযজ্ঞঃ পিতৃষজ্ঞস্তু তপণম। হোমো দৈবে বলিভেনীতো নযজ্ঞোহতিথিভোজনম৷ অর্থাৎ ব্ৰহ্মযজ্ঞ বা অধ্যাপন, পিতৃ যজ্ঞ বা তপণ, দৈব যজ্ঞ বা হােম, ভূতযজ্ঞ বা বলি, এবং নরষজ্ঞ বা অতিথি-ভোজন। ইহা স্মরণ রাখা কৰ্ত্তব্য যে, শ্ৰীধর “পঞ্চযজ্ঞৈরদত্ত্বা” বলেন না, “পণ্ডিযজ্ঞাদিভিরদত্ত্বা” বলেন। যজ্ঞশিলটাশিনঃ সন্তো মচ্যন্তে সৰ্ব্বব্যাকিলিবষৈঃ। ভুঞ্জতে তে ত্বঘং পাপা যে পচন্তাত্মকারণাৎ ৷৷ ১৩ ৷৷ যে সজনগণ যজ্ঞাবশিষ্ট ভোজন করেন, তাঁহারা সব্বপাপ হইতে মক্ত হয়েন। যাহারা কেবল আপনার জন্য পাক করে, সেই পাপিন্ঠেরা পাপ ভোজন করে। ১৩ । অন্নাদ্ভবন্তি ভূতানি পঙজন্যাদন্নসম্ভবঃ। যজ্ঞাদ্ভবতি পজন্যো যজ্ঞঃ কৰ্ম্ম সমাপ্তবঃ৷৷ ১৪ ৷৷ অন্ন হইতে ভূতসকল উৎপন্ন; পডজন্য হইতে অন্ন জন্মে; যজ্ঞ হইতে পডজন্য জন্মে। কৰ্ম্মম হইতে যজ্ঞের উৎপত্তি। ১৪ ৷৷ " একটি বৈদিক দেবতা। তিনি বলিষ্ট করেন। এখানে পডজন্য অর্থে বলিষ্ট বঝিলেই অনুষ হইতে জীবের উৎপত্তি । কথাটা ঠিক বৈজ্ঞানিক না হউক, অসত্য নয় এবং বোধগম্য বলে। টীকাকারেরা বঝাইয়াছেন, অন্ন রােপান্তবে শক্ৰ শোণিত হয়, তাহা হইতে জীব জন্মে। ইহাই যথেস্ট । তার পর বলিষ্ট হইতে অন্ন। তাহাও স্বীকার কাে1া যাইতে পারে ; কেন না, বলিট না হইলে ফসল হয় না। কিন্তু যজ্ঞ হইতে বন্টি এ কথাটা বৈজ্ঞানিক স্বীকার করবেন না। টীকাকারেরা বলেন, যজ্ঞের ধামে মেঘ জন্মে। অন্য ধ্যমেও মেঘ জন্মিতে পারে। অধিকাংশ মেঘ ধােম ব্যতীত জন্মে। যে দেশে যজ্ঞ হয় না, সে দেশেও মেঘ ও বান্টি হয়। সে যাহা হউক, বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব এ স্থলে আলোচিত হইতেছে না। তবে কি ভগবদ্যক্তি অসত্য ও অবৈজ্ঞানিক ? ক্ৰমশঃ তােহাঁই বৰঝাইতেছি। কৰ্ম্মম ব্রিহ্মোণ্ডবং বিদ্ধি ব্ৰহ্মাক্ষরসমস্তুৰম । তস্মাৎ সব্বগতং ব্ৰহ্ম নিত্যং যজ্ঞে প্রতিষ্ঠিতম। ১৫ ৷৷ কৰ্ম্ম ব্ৰহ্ম হইতে উদ্ভূত জানিও; ব্ৰহ্ম অক্ষর হইতে সমস্তৃত; অতএব সব্বগত ব্ৰহ্ম নিত্যু যজ্ঞে প্ৰতিস্ঠিত। ১৫ । টীকাকারেরা বলেন, ব্ৰহ্ম শব্দে এখানে বেদ বঝিবে। এবং অক্ষর পরমাত্মা। তবে কেহে কেহ এই গোলযোগ করেন যে, প্রথম চরণে ব্ৰহ্ম শব্দে বেদ বঝিয়া, দ্বিতীয় চরণে ব্ৰহ্ম শব্দে পরব্রহ্ম বাঝেন। নহিলে অর্থ হয় না। কালীপ্রসন্ন সিংহের মহাভারতকার এবং অন্যান্য অনাবাদকেরা এই মতের অন্যবিত্তী হইয়াছেন। কিন্তু শঙ্করাচাৰ্য্য স্বয়ং দ্বিতীয় চরণেও ব্রহ্ম শব্দে বেদ বঝিয়াছেন, অতএব এই শ্লোকের এই দই প্রকার অর্থ করা যায়। প্রথম শ্ৰীধারাদির মতে “কৰ্ম্মম বেদ হইতে, এবং বেদ পরব্রহ্ম হইতে সমস্তুত হইয়াছে; অতএব সৰ্ব্বগত ব্ৰহ্ম নিয়তই যজ্ঞে প্ৰতিস্ঠিত আছেন।” দ্বিতীয়, শঙ্করাচায্যের মতে “কম্পম বেদ হইতে, এবং বেদ পরব্রহ্ম হইতে সমভূত হইয়াছে; অতএব বেদ সকবাথপ্রকাশকত্ব হেতু নিয়তই যজ্ঞে প্রতিষ্ঠিত আছেন।” পাঠকের যে ব্যাখ্যা ইচ্ছা, তাহাই গ্রহণ করিতে পারেন; স্থলে তাৎপয্যের বিঘা কোনও ব্যাখ্যাতেই হইবে না। এবং প্রবত্তিতং চক্ৰং নানবেত্তীয়তীহ যঃ । অঘায়ারিন্দ্রিয়ারামো মোঘং পাৰ্থ স জীবতি ॥ ১৬ ৷৷ RS