পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৭৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্কিম রচনাবলী এইরূপ প্রবত্তিত চক্রের যে অন্যবিত্তীর্ণ না হয়, সে পাপজীবন ও ইন্দ্রিয়ারাম, হে পাৰ্থ, সে অনাথক জীবন ধারণ করে। ১৬ ৷৷ (ইন্দ্ৰিয়সখে যাহার আরাম, সেই ইন্দ্রিয়ারাম।) ব্ৰহ্ম হইতে বেদ, বেদ হইতে কম্পমা, কৰ্ম্মম হইতে যজ্ঞ, যজ্ঞ হইতে মেঘ, মেঘ হইতে অন্ন, অন্ন হইতে জীব। টীকাকারেরা ইহাকে জগচ্চক্ৰ বলিয়াছেন। কম্পমা করিলে এই জগচ্চত্রুের অনবৰ্ত্তন করা হইল। কেন না, কৰ্ম্মম হইতে যজ্ঞ হইবে, যজ্ঞ হইতে মেঘ হইবে, মেঘ হইতে অন্ন হইবে। অন্ন হইতে জীবনযাত্রা নিৰ্ব্ববাহ হইবে। এই হইল চক্রের এক ভাগ। এ ভাগ সত্য নহে; কেন না, আমরা জানি, কৰ্ম্মম করিলে যজ্ঞ হয় না, যজ্ঞ করিলেই মেঘ হয় না, মেঘ হইলেই শস্য হয় না। (সকল মেঘে বলিষ্ট নাই এবং অতিবন্টিও আছে) ইত্যাদি। পক্ষান্তরে যজ্ঞ ভিন্ন কৰ্ম্মম আছে, বিনা যজ্ঞেও মেঘ হয়, বিনা মেঘেও শস্য হয় (যথা রবিখন্দ), শস্য বিনাও জীবনযাত্রা নিৰ্ব্ববাহ হয় (উদাহরণ, সকল অসভ্য ও অদ্ধ সভ্য জাতি মািগয়া বা পশপালন করিয়া খায়) ইত্যাদি। চক্রের দ্বিতীয় ভাগ এই যে, ব্ৰহ্ম হইতে বেদ, বেদ হইতে কলম । ইহাও বিরোধের স্থল। ব্ৰহ্ম হইতে বেদ না বলিয়া, অনেকে বলেন, বেদ অপৌরষেয়। অনেকে বলিতে পারেন, বেদ আপৌরষেয়ও নহে, ব্ৰহ্মসম্পভূতও নহে, ঋষিপ্রণীত মাত্র, তাহার প্রমাণ বেদেই আছে। তার পব বেদ হইত। কম্পম. এ কথা কেবল শ্রেীতি কম ভিন্ন আর কোন প্রকার কৰ্ম্মম সম্পবন্ধে সত্য নহে } পাঠক দেখিবেন, দশম শ্লোক হইতে আর এই ষোড়শ পয্যন্ত আমরা অনৈসগিক কথার ঘোরতর আব্বত্তে পড়িয়াছি। সমস্তই অবৈজ্ঞানিক (mnsClientific) কথা। এখানে মহষিতুল্য প্রাচীন ভাষ্যকারেরা কেহই সহায় নহেন; তাঁহারা বিশ্বাসের জাহাজে পাল ভরিয়া অনাযাসে উত্তীণ হইয়া গিয়াছেন। আমরা স্পেলচ্ছের শিষ্য; আমাদের উদ্ধাবের সে উপায় নাই। তবে ইহা আমরা অনায়াসে বঝিতে পারিব যে, গীতা বিজ্ঞান-বিষয়ক গ্রন্থ নহে। বিশদ্ধ বৈজ্ঞানিক তত্ত্বপ্রচার জন্য Huxley বা tVIndiale) ইহার প্রণযন করেন নাই। তিন সহস্ৰ বৎসর পকেবাঁ যে গ্রন্থ প্রণীত হইয়াছে, উনবিংশ শতাব্দীর বিজ্ঞান তাহতে পাওয়ার প্রত্যাশা করা যায় না। তবে পাঠক বলিতে পারেন যে, যাহা তুমি ভগবদ্যুক্তি বলিতেছ, তাহা ভ্ৰমশনা ও অসত্যুশন্য হওয়াই উচিত। অবৈজ্ঞানিক হইলে অসত্য হইল। ঈশ্বরের অসত্য কথা কি প্রকারে সন্তবে : কিন্তু এই সাতটি শ্লোক যে ভগবদ্যুক্তি, তাহা আমি বলিতে পারি না। আমি পকেবই বলিয়াছি যে, গীতায় যাহা কিছ আছে, তাহাই যে ভগবদ্যুক্তি, এমন কথা বিশ্বাস করা উচিত নহে। আমি বলিয়াছি যে, কৃষ্ণকথিত ধৰ্ম্মম অন্য কর্তৃক সঙ্কলিত হইয়াছে। যিনি সঙ্কলন করিয়াছেন, তাঁহার নিজের মতামত অবশ্য ছিল। তিনি যে নিজ-সঙ্কলিত গ্রন্থে কোথাও নিজেব মত চালান নাই, ইহা সম্ভব নহে। শ্ৰীধর স্বামীর ন্যায় টীকাকারও সঙ্কলনকৰ্ত্তা সম্পবন্ধে “প্রায়শঃ শ্ৰীকৃষ্ণমখাদ্বিনিঃসন্তানেব শ্লোকান লিখৎ,” ইহা বলিয়া সম্ববীকার করিয়াছেন যে, “কাংশ্চিৎ তৎসঙ্গতয়ে স্বয়ণ্ড ব্যরচয়ৎ।” এখানে দেখিতে পাইতেছি, কৃষ্ণোক্ত নিস্কাম ধমের সঙ্গে এই সাতটি শ্লোকের বিশেষ বিরোধ। এজন্য ইহা ভগবদ্যক্তি নহে-সংকলনকত্তার মত-ইহাই আমার বিশ্বাস । তবে ইহাও আমার বক্তব্য যে, ইহা যদি প্রকৃতপক্ষে কৃষ্ণোক্তিই হয়, তবে যে এ সকল কথা উনবিংশ শতাব্দীর বিজ্ঞানসঙ্গত হওয়া উচিত ছিল, এমন বিশ্বাস আমার নাই। আমি কৃষ্ণচরিত্রে দেখাইয়াছি যে, কৃষ্ণ মানষিী শক্তির দ্বারা পার্থিব কৰ্ম্মসকল নিৰ্ব্ববাহ করেন, ঐশী শক্তি দ্বারা নহে। মনষ্যত্বের আদশের বিকাশ ভিন্ন, ঈশ্বরের মনষ্যিদেহ গ্ৰহণ করা বঝা যায় না। কৃষ্ণ অসম্ভব; কেন না, কোন মানষেরই ঐশী শক্তি নাই-মানষের আদশেও থাকিতে পারে না। কেবল মানষিী শক্তির ফল যে ধৰ্ম্মতত্ত্ব, তাহাতে তিন সহস্ৰ বৎসর পরবত্তীৰ্ণ বৈজ্ঞানিক সত্য প্রত্যাশা করা যায় না। ঈশ্বরের তাহা অভিপ্রেত নহে।

  • যদি বল, শ্রেীতি সমােত্ত কম্পমাই কম্পমা, কাজেই যজ্ঞ ভিন্ন কম্পমা নাই, তাহা হইলে “ন হি কশিচৎ ক্ষণমপি জাতু তিষ্ঠিত্যকৰ্ম্মমকৃৎ” (৫ম শ্লোক), এবং “শরীর যাত্ৰাপি চ তে ন প্রসিধ্যেদকৰ্ম্মণঃ” (৮ শ্লোক) ইত্যাদি বাক্যের অর্থ নাই।

€A 6k SR