পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৮০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্কিম রচনাবলী করবে। শ্ৰীধরের টীকার মন্মথ এই। ইহাতে এ শ্লোক হইতে ইহাই পাওয়া যায় যে, ভগবদ্যারাধনাই কৰ্ত্তব্য। অন্যান্য অনষ্ঠান মাক্তির বিঘা। শঙ্করাচাৰ্য্য অনােরপ বাকাইয়াছেন। তিনি এই শ্লোক উপলক্ষে একটি দীঘ এবং জটিল প্ৰবন্ধ রচনা করিয়াছেন, তাঁহার স্থল কথা এই-আত্মা ক্রিয়ানিলিপ্তি; কম্পম ইন্দুিয়াদির দ্বারাই কৃত হইয়া থাকে; কিন্তু ভ্ৰমব্ৰুমেই আত্মাতে কম্পমারোপ হইয়া থাকে। যিনি ইহা জানেন, তিনি কম্মেম অকৰ্ম্ম দেখেন। আর ইন্দ্ৰিয়াদি বিহিতানঠিানে বিরত হইলেও সেই অকম্পমাকেও তিনি ইন্দুিয়াদির কম দেখেন। কিন্তু আমাদের ক্ষদ্র বদ্ধিতে, পরবত্তী শ্লোকের উপর দন্টি রাখিলে একটা সোজা অৰ্থ পাওয়া যায়। কামসঙ্কলপ-বিবভিজাত, ফলকামনাশন্য যে কৰ্ম্ম, সে অকৰ্ম্ম-কৰ্ম্মশান্যতা। আর যিনি অনন্ঠেয় কমে বিরত, তাঁহার কৰ্ত্তব্য-বিরতির ফলভাগিন্তু আছেই আছে—অতএব এখানে কৰ্ম্মশান্যতাও কৰ্ম্ম। কেন না, ফলোৎপত্তির কারণ। যিনি ইহা বঝিতে পারেন, তিনিই জ্ঞানী। যস্য সবে সমারম্ভাঃ কামসঙকলপবাডিজতাঃ । জ্ঞানাগ্নিদগ্ধকম্পমাণং তমাহঃ পন্ডিতং বন্ধঃ ৷ ১৯ ৷৷ যাঁহার সকল চেন্টা কাম ও সঙ্কলািপবিভিজাত, এবং যাঁহার কম জ্ঞানাগ্নিতে দগ্ধ, তাঁহাকেই জ্ঞানিগণ পশ্চিডত বলেন। ১৯ । “কামসঙ্কলপ” এই পদের অর্থের উপর শ্লোকের গৌরব কিয়ৎপরিমাণে নিভাির করে। শঙ্করাচাৰ্য্যকৃত এই অর্থ,-“কামসঙ্কলপবভিজন্তাঃ”, “কামৈস্তৎকারণৈশ্চ সঙ্কলৈপিবডিজ তাঃ”। শ্ৰীধরকৃত ব্যাখ্যা এই, “কাম্যতে ইতি কামঃ। ফলং তৎসঙ্কলেপন ব্যক্তিজন্তাঃ।” মধ্যসদন সরস্বতী বলেন, “কামঃ ফলতৃষ্ণা। সঙ্কলেপাহহং করোমীতি কর্তৃত্বাভিমানস্তাভ্যাং বিজিতাঃ”। এইরপ নানা মানির নানা মত। মধ্যসদন সরস্বতীকৃত সঙ্কলপ শব্দের অর্থ আভিধানিক নহে, কিন্তু এখানে খাব সঙ্গত। শঙ্করাচায্যকৃত, কাম এবং তাহার কারণ সঙ্কলপি উভয়-বিবক্তিজািত হইলে কৰ্ম্মেম প্রবত্তির অভাব জন্মিবে। যে কক্ষমা করিবার অভিলাষ রাখে, এবং ফল কামনা করে না, সে কৰ্ম্ম করিবে কেন ? এ জন্য শঙ্করাচাৰ্য্য নিজেই বলিয়াছেন, “মাধৈব চেন্টামাত্রম অনঙ্গঠীয়ন্তে প্ৰবত্তেন চেল্লোকসংগ্ৰহাৰ্থং নিবত্তেন জীবনযাত্ৰাৰ্থং।” অর্থাৎ ঈদশ ব্যক্তির সমারম্ভসকল অনৰ্থক চেষ্টা মাত্র। প্রবত্তিমাগে কেবল লোকশিক্ষাৰ্থ, এবং নিবত্তিমাগে কেবল জীবনযাত্রানিববােহাৰ্থ। পাঠকদিগের নিকট আমার বিনীত নিবেদন যে, তাহা হইলেও কামও সঙ্কলপবাজিত হইল না। মধ্যসদন সরস্বতীও “লোকশিক্ষাৰ্থং” ও “জীবনযাত্ৰাৰ্থং” কথা দাইটি রাখিয়াছেন, কিন্তু “কামসঙ্কলপবাজিজািত” পদের তিনি যে ব্যাখ্যা করিয়াছেন, তাহা পাঠক নিঃসঙ্কোচে গ্ৰহণ করিতে পারেন। ফলতৃষ্ণা এবং অহঙ্কার রহিত যে কম্পমানন্ঠান, তাহাই বিহিত, এবং তাহাই কমশন্যতা। সচরাচর লোকে ফলকামনাতেই কম্পমান ঠানে প্রবত্ত হয়—এবং আমি এই কাম করিতেছি। বা করিয়াছি, এই অহঙ্কার তাহার সঙ্গে সঙ্গে থাকে। ভগবদভিপ্ৰায় এই যে, দইয়ের অভাবই কমের লক্ষণ, কমে তদািভয়ের অভাবই কম্পমশিন্যতা। এইরুপ বঝিলেই কি আপত্তির মীমাংসা হইল ? হইল বৈ কি। ফলকামনাতেই লোকে সচরাচর কলেম প্রবত্ত হয় বটে, কিন্তু ফলকামনা ব্যতীত যে কৰ্ম্মে প্রবত্ত হওয়া যায় না, এমন নহে। যদি তাই হইত, তাহা হইলে নিম্পাকাম শব্দের অর্থ নাই-এমন বস্তুর অস্তিত্ব নাই। যদি তাই হইত, তাহা হইলে গীতার এক ছত্রেরও কোন মানে নাই। কথাটা পন্ধেব বাবান হয় নাই। এখন বঝান যাউক । কতকগলি কাষ্য আছে, যাহা মনষ্যের অনন্ঠেয়। যে সে কৰ্ম্মের ফলকামনা করে না, তাহারও পক্ষে অনন্ঠেয়। এমন মনষ্যে আছে সন্দেহ নাই, যে জীবন রক্ষা কামনা করে নামরিতে পারিলেই তাহার সব যন্ত্রণা ফারায়। কিন্তু আত্মজীবন রক্ষা তাহার অনন্ঠেয়। যে শালরোগী আত্মহত্যা করে, সে পাপ করে সন্দেহ নাই। শত্রর জীবনরক্ষা সচরাচর কেহ কামনা করে না, কিন্তু শত্র মঙ্গজেনোমাখ বা অন্য প্রকারে মাতৃত্যুকবলগ্রস্তপ্রায় দেখিলে তাহার রক্ষা আমাদের অনদ্ঠেয় কম। শত্রকে উদ্ধারকালে মনে হইতে পারে, “আমার চেষ্টা নিস্ফল হইলেই ভাল।” এখানে ফলকামনা নাই, কিন্তু কম্পমা আছে। (9S