পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৮৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেবতত্ত্ব ও হিন্দযন্ম-চৈতন্যবাদ নাই। মন্তিকের রোগে, কিবা ভ্রমবশতঃ মনয্যে ভূত দেখে, ইহা বলা যাউক। যে কারণে হউক। মনকেষ্য ভূত দেখে। মরা মানষের ভূত দেখিলে অসভ্য মানষের মনে এমন হইতে পারে যে শরীর গেলেও চৈতন্য থাকে। এই বিশ্বাসই পরলোকে বিশ্বাস, এইখানেই ধমের প্রথম সত্রপাত। ইহা বলিয়াছি যে, অসভ্য মনষ্য বা আদিম মানষে, যাহাকে ক্রিয়াবান, আপনার ইচ্ছানসারে ক্রিয়াবান দেখে, তাহারই চৈতন্য আছে বিশ্বাস করে। জীব, আপনি ইচ্ছানসারে ক্রিয়াবান, এজন্য জীবের চৈতন্য আছে, নিজজীব। ইচ্ছানসারে ক্রিয়াবান নহে, এজন্য নিস্তজীব চেতন নহে। কিন্তু আদিম মনীষ্য সকল সময়ে বঝিতে পারে না, কোনটা চৈতন্যযক্ত, কোনটা চৈতন্যযক্তি নহে। পাহাড় পৰ্ব্ববত, জড়পদার্থ সচরাচর ইচ্ছানসারে ক্রিয়াবান নহে, সচরাচর ইহাদের অচেতন বলিয়া বকিতে পারে, কিন্তু মধ্যে মধ্যে এক একটা পাহাড় অগ্নি উদগীরণ করিয়া অতি ভয়াবহ ব্যাপার সম্পাদন করে। সেটাকে ইচ্ছানসারে ক্রিয়াবান বলিয়া বোধ হয়; আদিম মনষ্যের সেটাকে সচৈতন্য বলিয়া বোধ হয়। কলনদিনী নদী, রাত্ৰি দিন ছটিতেছে, শব্দ করিতেছে, বাড়িতেছে, কমিতেছে, কখন ফাঁপিয়া উঠিয়া দাই কলে ভাসাইয়া দিয়া সৰ্ব্বনাশ করিতেছে, কখন পরিমিত জলসেচ করিয়া শস্য উৎপাদন করিতেছে, ইহাকেও ইচ্ছানসারে ক্রিয়াবতী বলিয়া বোধ হয়। সায্যের কথা বড় আশ্চৰ্য্য। জগতে যাহাঁই হোক না কেন, ইনি ঠিক সেই নিষমিত সময়ে পািব্বদিকে হাজির। আবার ঠিক আপনার নিন্দিভট পথে সমস্ত দিন ফিরিয়া, ঠিক নিয়মিত সময়ে পশ্চিমে লক্কায়িত। ইহাকেও স্বেচ্ছাক্রিয় বলিয়া বোধ হয়, ইহাও সচৈতন্য বোধ হয়। চন্দ্র ও তারা সম্পবন্ধেও এইরূপ হইতে পারে। কোথা হইতে আকাশে মেঘ আসে ? মেঘ আসিয়া কেন বমিট করে ? বলিট করিষা কোথায় চলিসা যায ? মেঘ আসিলেই বা সকল সময়ে বন্টি হয় না কেন ? যে সময় বান্টির প্রয়োজন যে সমযে বান্টি হইলে শস্য হইবে, সচরাচর ঠিক সেই সময়ে বন্টি হয় কেন ? সচরাচর তাহা হয়, কিন্তু এক এক সময়ে তাই বা হয় না কেন ? কখন কখন অনাবান্টিতে দেশ জাদুলিয়া যাম কেন ? এ সব আকাশের ইচ্ছা, মেঘের ইচ্ছা, বা বন্টির ইচ্ছা, এজন্য আকাশ সচেতন, মেঘ সচেতন, বা বলিষ্ট সচেতন বলিয়া বোধ হয়। ঝড়, বা বায় সম্পবন্ধেও ঐরােপ। বীজ বা বিদ্যৎ সম্পবন্ধেও ঐরাপ ঘটে। অগ্নি সম্পবন্ধেও যে ঐরাপ ঘটিবে, তাহা অগ্নিব ক্রিয়া সকলের সমালোচনা করিলে সহজে বঝা যাইতে পারে। অগাধ, দস্তর, তরঙ্গ-সভকুল, জলচরে সংক্ষািন্ধ রত্নাকর সমদ্র সম্পবন্ধেও সেই কথা হইতে পারে। ইত্যাদি। এইরূপে জড়ে চৈতন্য আরোপ, ধৰ্ম্মেব দ্বিতীয সোপান। ইহাকে ধৰ্ম্ম না বলিয়া, উপধৰ্ম্ম বলিতে কেহ ইচ্ছা করেন, আপত্তি নাই। ইহা সমরণ রাখিলে যথেস্ট হইবে যে, উপধৰ্ম্মমই সত্য ধন্মের প্রাথমিক অবস্থা। বিজ্ঞানের প্রথমাবস্থা যেমন ভ্ৰমজ্ঞান, ইতিহাসের প্রথমাবস্থা যেমন লৌকিক উপন্যাস বা উপকথা, ধৰ্ম্মের প্রথমাবস্থা তেমনি উপধৰ্ম্মম। মতান্তর আছে, তাহা আমরা জানি, কিন্তু মনষ্যের আদিম অবস্থায় বিজ্ঞান নিকৃষ্ট, ইতিহাস নিকৃষ্ট, দশন কাব্য সাহিত্যশিলপ, সৰ্ব্বপ্রকার বিদ্যা বদ্ধি, সবই নিকৃণাট, কেবল তত্ত্বজ্ঞান উৎকৃষ্ঠািট হইবে ইহা সম্ভব নহে। তার পর ধর্মের তৃতীয় সোপান। যে সকল জড়পদার্থে মনীষা চৈতনারোপ করিতে আরম্ভ করে, তাহার মধ্যে অনেকগলি অতিশয় ক্ষমতাশালী, তেজস্বী, বা সন্দের। সেই আগ্নেয়গিরি একেবারে দেশ উৎসন্ন দিতে পারে, তাহার ক্রিয়া দেখিয়া মনষ্যবিদ্ধি স্তম্ভিত, লগুপ্তপ্রাশ হইয়া যায়। সেই কালপরিপ্লাবিনী, ভূমির উৎপাদিকা শক্তির সঞ্চারিণী নদী, মঙ্গলে অতিশয় প্রশংসনীয়া, অমঙ্গলে অতি ভয়ঙ্করী বলিয়া বোধ হয়। ঝড়, বান্টি, বায় বঞ্জ, বিদ্যৎ, অগ্নি, ইহাদের অপেক্ষা আর বলবান কে? ইহাদের অপেক্ষা ভীমকমা কে ? যদি ইহাদের অপেক্ষা শ্ৰেষ্ঠ কেহ থাকে, তবে সােয্য; ইহার প্রচন্ড তেজ, আশ্চৰ্য্য গতি, ফলোৎপাদন জীবোৎপাদন শক্তি, আলোক, সকলই বিস্ময়কর। ইহাকে জগতের রক্ষক বলিয়া বোধ হয়, ইনি যতক্ষণ অনাদিত থাকেন, ততক্ষণ জগতের ক্রিয়াকলাপ প্রায় বন্ধ হইয়া থাকে। এই সকল শক্তিশালী মহামহিমাময় জড় পদার্থ, যদি সচেতন, স্বেচ্ছাচারী বলিয়া বোধ হইল, তবে মানষের মন ভয়ে বা প্ৰীতিতে অভিভূত হয়। ইহাদের কেবল শক্তি এত বেশী। তাই নহে, মনয্যের মঙ্গলামঙ্গল ইহাদিগের অধীন। সচরাচর দেখা যায় যে, যে চৈতন্যযক্তি, সে তুষ্ট হইলে ভাল করে, রন্ট হইলে অনিষ্ট করে। এই সকল মহাশক্তিযক্তি মঙ্গলামঙ্গল-সম্পাদক {ፉOå