পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৮৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেবতত্ত্ব ও হিন্দধৰ্ম্ম-উপাসনা ‘প্রচারের প্রথম সংখ্যা হইতে বৈদিক দেবতা তত্ত্ব সম্বন্ধে আমরা কি কি কথা বলিলাম। তাহা একবার সমরণ করিয়া দেখা যাউক । ১। ইন্দ্রাদি বৈদিক দেবতা, আকাশ, সৰ্য্যে, অগ্নি, বায় প্রভৃতি জড়ের বিকাশ ভিন্ন লোকাতীত চৈতন্য নহেন। ২। এই সকল দেবতাদিগের উপাসনা যেমন বেদে আছে, এবং ভারতবষীয়েরা যেমন ইহাদিগের দেবতা বলিয়া মানিয়া থাকে, সেইরূপ পথিবীর অন্যান্য জাতিগণ কারিত বা করে। ৩ । ইহার কারণ এই যে, প্রথমাবস্থায় মনষ্যে জড়ে চৈতন্য আরোপণ করিয়া, তাহার শক্তি, হিতকারিতা, বা সৌন্দৰ্য্য অনসারে, তাহার উপাসনা করে। ৪ । সেই উপাসনা ইন্টকারী এবং অনিন্টিকারী উভয়বিধ হইতে পারে। এখন দেখিতে হইবে, বেদে কিরােপ উপাসনা আছে। তাহা হইলেই আমরা বৈদিক দেবতা তত্ত্ব সমাপ্ত করি। —“প্রচার, ১ম বিষ, পঃ ৩৭৪-৮৩ ৷৷ উপাসনা পাবে উপাসনা সম্বন্ধে যাহা বলা গিয়াছে, তাহাতে দেখা গিয়াছে যে, উপাসনা দ্বিবিধ। এক, যাহাদের ফলপ্ৰদ বিবেচনা করা যায়, তাহদের কাছে ফলকামনাপবিবেক তাহদের উপাসনা, আর, এক যাহাকে ভালবাসি, বা যাহার নিকট কৃতজ্ঞ হই, তাহার প্রশংসা বা আদর। প্রথমোক্ত উপাসনা সকাম, দ্বিতীয় নিস্কাম। এইবােপ সামান্য নিস্কাম উপাসনা কেবল ঈশ্বর সম্পবন্ধে হইতে পারে। এমত নহে, সামান্য জড়পদার্থ সম্পবন্ধে হইতে পারে। ভিন্নজাতীয় মহাত্মাদিগের বিশ্বাস যে, হিন্দ গোেরর উপাসনা করে। বস্তুতঃ এমন হিন্দ, কেহই নাই যে, বিশ্বাস করে যে, আমি আমার গাইটির স্তবস্তুতি বা পজা করিলে সে আমাকে কোন ফল দিবে। গোর ঘাস খায়, আর দধি দেয়, তাহা ছাড়া আর কিছ, পারে না, তাহা সকলেই জানে। তবে সাধারণ হিন্দরে এই বিশ্বাস যে গোপকে যত্ন করিলে, আদর করিলে, দেবতা প্রসন্ন হয়েন। এ কথাটা তত অসঙ্গত নহে। যাহা উপকারী, তাহা আদরের। যাহা আদরের, তাহার আদর অনলেঠয় কাৰ্য্য ঈশ্ববান মোদিত। এইরাপ গোেরর আদরের একটা উদাহরণ বেদ হইতে উদ্ধত করিতেছি । শক্ৰ যজীব্বোদ সংহিতায় দশ পণ্যমাস যজ্ঞে বৎসােপাকরণ কায্যের মন্ত্রে আছে, “হে বৎসগণ, তোমরা ক্ৰীড়াপরবশ, সতরাং বায়বেগে দিগিদগন্তরে ধাবমান হও । বায়দেবতাই তোমাদিগের রক্ষক ৷৷ ৩ ৷৷ হে গাভীগণ, আমরা শ্রেষ্ঠতম কায্য আরম্ভ করিয়াছি। তৎসাধনাথ সবিতা-দেবতা তোমাদিগকে প্রভূত তৃণ বন প্রাপ্ত করান। ৪ ৷৷ হে (সবলপ বা বহতর) রোগশান্য অচিরপ্রসােতা অবধ্য গাভীগণ! তোমরা অক্ষব্ধ চিত্তে ঃশঙক ভাবে গোঠে প্রচুর তৃণ শস্য ভোজন করতঃ ইন্দ্র দেবতার ভোগের উপযোগী দন্ধের পরিবদ্ধন করা। তোমাদিগকে ব্যাঘ্ৰাদি হিংস্ৰ জন্তুবা বা চৌর প্রভৃতি পাপিগণ কেহই আয়ত্ত করিতে সমর্থ হইবে না। তোমরা এই যজমানের গহে চিরদিন বহাপরিবাব হইতে থােক। ৫ ॥"* ঐ যজ্ঞের দগ্ধকে সম্বোধন করিয়া ঋত্বিক বলেন, “হে দগ্ধ, যজ্ঞীয় সপবিত্ৰ শতধার এই পবিত্ৰে তুমি শোধিত হও। সবিতা-দেবতা তোমাকে পবিত্র করুন।” উখা অর্থাৎ হাঁড়িকে সম্বোধন করিয়া বলিতে হয়। “হে উখে! তুমি মন্ময়, সতরাং পথিবীর পিণী ত বটেই। অধিকন্তু তোমার সাহায্যে যজমানগণের দ্যলোক প্রাপ্তি হয়। অতএব দ্যরপাও তোমাকে বলিতে পারি। ২ ৷৷ “হে উখে, তোমার উদরে অবকাশ আছে। সতরাং বায়ার স্থান অন্তরীক্ষলোকও তোমার অধীন। অতএব তোমাকে অন্তরীক্ষলোকও বলিতে পারি। এতাবতা তুমি ত্ৰিলোকস্বরূপ।

  • এই প্রবন্ধে যজমান্ত্রের যে যে অন্যবাদ উদ্ধত হইল, তাহা শ্ৰীযক্ত সত্যৱত সামশ্রমীকৃত বাজসনেয়ী সংহিতার অন্যবাদ হইতে।

brö。