পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৮৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেবতত্ত্ব ও হিন্দধৰ্ম্মম-বেদের ঈশ্বরবাদ এইরপে বৈদিক ঋষিরা ক্ৰমে ক্রমে এক বেদে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। জানিলেন যে, এক জনই সব করিয়াছেন ও সব করেন। যাস্ক বলেন--"মাহাত্ম্যাদেবতায়াঃ এক আত্মা বহন্ধা স্তয়েতে। একস্যাত্মনোহন্যে দেবাঃ প্রত্যঙ্গানি ভবান্তি ।” মাহাত্ম্যপ্রযক্ত এক আত্মা বহ, দেবতা স্বরপে স্থূত হন। দেবতা সকলেই একই আত্মার প্রত্যঙ্গমাত্র। অতএব ঈশ্বর এক ইহা স্থির। (১) তিনি একাই এই বিশ্ব নিশ্চিমত করিয়াছেন, এই জন্য বেদে তাহার এক নাম বিশ্বকৰ্ম্মম। ঋগোিবদসংহিতার দশম মন্ডলের ৮১ ও ৮২ সক্তে জগৎকত্তার এই নাম—পরাণেতিহাসে বিশ্বকৰ্ম্মমা দেবতাদের প্রধান শিল্পকার মাত্র। সক্তে আছে যে, তিনি আকাশ ও পথিবী নিম্পমাণ করিয়াছেন (১o । ৮১ ৷ ২) বিশ্বময় (বিশ্বতঃ) তাঁহার চক্ষ, মাখ, বাহ, পদ (ঐ, ৩) ইত্যাদি। (২) তিনি হিরণ্যগভর্ণ। এই হিরণ্যগভোের নানা শাস্ত্রে নানা প্রকার ব্যাখ্যা আছে। হেমতুল্য নারায়ণসন্ট অন্ড হইতে উৎপন্ন বলিয়া ব্ৰহ্মাকে মনসিংহিতায় হিরণ্যগভর্ণ বলা হইয়াছে এবং পরাণেতিহাসেও হিরণ্যগৰ্ভ শব্দের ঐরােপ ব্যাখ্যা আছে। ঐ দশম মণডলের ১২১ সক্তে হিরণ্যগৰ্ভ সব্বাগ্রে জাত, সব্বভূতের একমাত্র পতি, সবগ মত্ত্যের সন্টিকৰ্ত্তা, আত্মদ, বলদ, বিশ্বের উপাসিত, জগতের একমাত্র রাজা, ইত্যাদি ইত্যাদি। (৩) তিনি প্রজাপতি। তাঁহা হইতে সকল প্রজা সন্টি হইয়াছে। স্থানে স্থানে সাহায্য বা সবিতাকে প্রজাপতি বলা হইয়াছে। কিন্তু পরিশেষে যাঁহাকে ঋষিরা জগতের একমাত্র চৈতন্যবিশিষ্ট সৰ্ব্বমন্টা বলিয়া বঝিলেন তখন তাঁহাকেই এই নামে অভিহিত করিতে লাগিলেন। ঐতিহাসিক ও পৌরাণিক দিনে ব্ৰহ্মাই এই নাম প্রাপ্ত হইলেন। ঋগোিবদসংহিতায় ব্ৰহ্মা শব্দ নাই। (৪) ব্ৰহ্ম শব্দও আমি ঋগোিবদসংহিতায় কোথাও দেখতে পাই নাই। অথচ বেদের যে পর্যভাগ, উপনিষদ, এই ব্ৰহ্ম নিরপেণ তাহার একমাত্র উদ্দেশ্য। ব্রাহ্মণ ভাগে ও বাজসনেরসংহিতায় ও অথব্ববেদে ব্ৰহ্মকে দেখা যায় । সে সকল কথা পরে হইবে । (৫) ঋগোিবদসংহিতার ৯o সক্তিকে পরষসক্ত বলে। ইহাতে সব্বব্যাপী পরিষের বর্ণনা আছে। এই পরিষ শতপথব্রাহ্মণে নারায়ণ নামে কথিত হইয়াছে। অদ্যাপি বিষ্ণুপজায় পরষসক্তের প্রথম ঋক ব্যবহৃত হয় সহস্রশীষঃ পরিষঃ সহস্রাক্ষঃ সহস্রপাৎ স ভূমিং বিশ্বতো বস্তৃত্বা অত্যাতিষ্ঠাৎ দশাঙ্গলং কথিত হইয়াছে যে, এই পরিষকে দেবতারা হবির সঙ্গে যজ্ঞে আহতি দিয়াছিলেন। সেই যজ্ঞফলে সমস্ত জীবের উৎপত্তি। এই পরিষ। “সব্বং যন্ধুতং যচ্চ ভাব্যং"-সমস্ত বিশ্ব ইহার এক পাদ মাত্র। বিশ্বকৰ্ম্মমা হিরণ্যগভর্ণ ও প্রজাপতির সঙ্গে, এই পরীষ একীভূত হইলে বৈদান্তিক পরব্রহ্মে প্রায় উপস্থিত হওয়া যায়। অতএব অতি প্রাচীন কালেই বৈদিকেরা জড়োপাসনা হইতে ক্ৰমশঃ বিশদ্ধ একেশ্বরবাদে উপস্থিত হইয়াছিলেন। কিছ দিন সঙ্গে সঙ্গে ইন্দ্রাদি বহা দেবের উপাসনা রহিল। ক্ৰমে ক্রমে দেখিব যে, সেই ইন্দ্রাদিও পরমাত্মায় লীন হইলেন। দেখিব যে, হিন্দধমের প্রকৃত মৰ্ম্ম একমাত্র জগদীশ্বরের উপাসনা। আর সকলই তাঁহার ভিন্ন ভিন্ন নাম মাত্র। যেহপ্যন্যদেবতাভক্ত যজন্তে শ্রদ্ধয়ান্বতাঃ । তেহপি মামেব কৌন্তেয় যজন্ত্যবিধিপৰিবািকং৷ গীতা ৯। ২৩ ৷৷ আমরা ঋগোিবদ হইতেই আরম্ভ করি, আর রামপ্রসাদের শ্যামা বিষয়* হইতেই আরম্ভ করি, এজন্য ‘প্রচারে উহার সমালোচনার সম্ভাবনা নাই। তবে, যে উদ্দেশ্যে ‘প্রচারে' এই বৈদিক প্রবন্ধগলি লিখিত হইতেছে, এই অনাবাদ সেই উদ্দেশ্যের সহায় ও সাধক। এই জন্য এই অনাবাদ সম্পবন্ধে এই কয়টি কথা বলা প্রয়োজন বিবেচনা করিলাম। বেদে কি আছে তাহা যাঁহারা জানিতে ইচ্ছা করেন, তাঁহাদিগকে বেদের অন্যবাদ পাঠ কবিতে হইবে-আমরা বেশী উদাহরণ উদ্ধত করি।-“প্রচারে এত স্থান নাই।

  • রামপ্রসাদ কালী নামে পরব্রহ্মের উপাসনা করিতেন।

প্ৰসাদ বলে, ভক্তি মাক্তি, উভয়কে মাথে ধরেছি। এবার শ্যামার নাম ব্ৰহ্মা জেনে, ধৰ্ম্ম কলম সব ছেড়েছি। S