পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৮৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

बष्किम ब्रा5नाववा কাতর হইত, দীনবন্ধ তদুপ বা ততোধিক কাতর হইতেন। ইহার একটি অপব্ব উদাহরণ আমি প্রত্যক্ষ করিয়াছি। একদা তিনি যশোহরে আমার বাসায় অবস্থিতি করিতেছিলেন। রাত্রে তাঁহার কোন বন্ধর কোন উৎকট পীড়ার উপক্রম হইল। যিনি পীড়ার আশঙ্কা করিতেছিলেন, তিনি দীনবন্ধকে জাগরিত করিলেন, এবং পীড়ার আশঙ্কা জানাইলেন। শনিয়া দীনবন্ধ মচ্ছিত হইলেন। যিনি স্বয়ং পীড়িত বলিয়া সাহায্যাৰ্থ দীনবন্ধকে জাগাইয়াছিলেন, তিনিই আবার দীনবন্ধর শাশ্রষায় নিযক্ত হইলেন। ইহা আমি সর্বচক্ষে দেখিয়াছি। সেই দিন জানিয়াছিলাম যে, অন্য যাহার যে গণ থাকুক, পরের দঃখে দীনবন্ধর ন্যায় কেহ কাতর হয় না। সেই গণের ফল নীল-দপণ। নীল-দপািণ ইংরেজিতে অনাবাদিত হইয়া ইংলন্ডে যায়। লং সাহেব তৎপ্রচারের জন্য সপ্রীম কোটের বিচারে দন্ডনীয় হইয়া কারাবদ্ধ হয়েন। সীটনকার সাহেব তৎপ্রচার-জন্য অপদস্থ হইয়াছিলেন। এ সকল বৰ্ত্তান্ত সকলেই অবগত আছেন। এই গ্রন্থের নিমিত্ত লং সাহেব কারাবদ্ধ হইয়াছিলেন বলিয়াই হউক, অথবা ইহার কোন বিশেয গণ থাকার নিমিত্তই হউক, নীল-দপণ ইউরোপের অনেক ভাষায় অনাবাদিত ও পঠিত হইয়াছিল। এই সৌভাগ্য বাঙ্গালায় আর কোন গ্রন্থেরই ঘটে নাই। গ্রন্থের সৌভাগ্য যতই হউক, কিন্তু যে যে ব্যক্তি ইহাতে লিপ্ত ছিলেন, তাঁহারা সকলেই কিছ কিছ বিপদগ্ৰস্ত হইয়াছিলেন। ইহার প্রচার করিয়া লং সাহেব কারাবদ্ধ হইয়াছিলেন; সীটনকার অপদস্থ হইয়াছিলেন। ইহার ইংরেজি অন্যবাদ করিয়া মাইকেল মধ্যসািদন দত্ত গোপনে তিরস্কৃত ও অবমানিত হইয়াছিলেন এবং শনিয়াছি শেষে তাঁহার জীবননিৰ্ব্ববাহের উপায় সম্প্রীম কোটের চাকুরি পর্য্যন্ত ত্যাগ করিতে বাধ্য হইয়াছিলেন। গ্রন্থকত্তা নিজে কারাবদ্ধ কি কৰ্ম্মমচু্যত হয়েন নাই বটে, কিন্তু তিনি ততোধিক বিপদগ্ৰস্ত হইয়াছিলেন। এক দিন রাত্রে নীল-দপণ লিখিতে লিখিতে দীনবন্ধ মেঘনা পার হইতেছিলেন। কাল হইতে প্রায় দই ক্রোশ দরে গেলে নৌকা হঠাৎ জলমগ্ন হইতে লাগিল। দাঁড়ী মাঝি সকলেই সন্তরণ আরম্ভ করিল ; দীনবন্ধ তাহাতে অক্ষম। দীনবন্ধ, নীল-দপণ হস্তে করিষা, জলমণ্ডজনোন্মািখ নৌকায় নিস্তন্ধে বসিয়া রহিলেন। এমন সময়ে হঠাৎ একজন সন্তরণকারীর পদ মাত্তিকা সপেশ করিয়া সে সকলকে ডাকিয়া বলিল, “ভয় নাই, এখানে জল অলপ, নিকটে অবশ্য চর আছে।” বাস্তব নিকটে চর ছিল, তথায় নৌকা আনীত হইয়া চরলগ্ন হইতে দীনবন্ধ উঠিয়া নৌকার ছাদের উপর বসিয়া রহিলেন। তখনও সেই আদ্র নীল-দপণ, তাঁহার হস্তে রহিয়াছে। এই সময় মেঘনায় ভাঁটা বহিতেছিল, সত্বরেই জোয়ার আসিয়া এই চর ডুবিয়া যাইবে এবং সেই সঙ্গে এই জলপািণ ভগ্ন তৈরি ভাসিয়া যাইবে, তখন জীবনরক্ষার উপায় কি হইবে, এই ভাবনা দাঁড়িী, মাঝি সকলেই ভাবিতেছিল, দীনবন্ধও ভাবিতেছিলেন। তখন রাত্রি গভীর, আবার ঘোর অন্ধকার, চারি দিকে বেগবতীর বিষম স্রোতধবনি, কাচিৎ মধ্যে মধ্যে নিশাচর পক্ষীদিগের চীৎকার। জীবনরক্ষার কোন উপায় না। দেখিয়া দীনবন্ধ একেবারে নিরাশ্বাস হইতেছিলেন, এমত সময়ে দরে দাঁড়ের শব্দ শনা গেল। সকলেই উচ্চৈঃস্বরে পািনঃ পািনঃ ডাকিবায় দরবত্তীর্ণ নৌকারোহীরা উত্তর দিল, এবং সত্বরে আসিয়া দীনবন্ধ ও তৎসমভিব্যাহারীদিগের উদ্ধার করিল। ঢাকা বিভাগ হইতে দীনবন্ধ পােনকবার নদীয়া প্রত্যাগমন করেন। ফলতঃ নদীয়া বিভাগেই তিনি অধিক কাল নিযক্ত ছিলেন; বিশেষ কাৰ্য্য-নিৰ্ব্ববােহ জনা তিনি ঢাকা বা অন্যত্র প্রেরিত হইতেন । ঢাকা বিভাগ হইতে প্রত্যাগমন-পরে দীনবন্ধ “নবীন তপস্বিনী” প্রণয়ন করেন। উহা কৃষ্ণনগরে মাদ্রিত হয়। ঐ মাদ্রাযন্ত্রটি দীনবন্ধ প্রভৃতি কয়েক জন কৃতবিদ্যের উদ্যোগে স্থাপিত হইয়াছিল, কিন্তু স্থায়ী হয় নাই। দীনবন্ধ নদীয়া বিভাগ হইতে পােনকবার ঢাকা বিভাগে প্রেরিত হয়েন। আবার ফিরিয়া আসিয়া উড়িষ্যা বিভাগে প্রেরিত হয়েন। পনেকবার নদীয়া বিভাগে আইসেন। কৃষ্ণনগরেই তিনি অধিক কাল অবস্থিতি করিয়াছিলেন। সেখানে একটি বাড়ী কিনিয়াছিলেন। সন ১৮৬৯ সালের শেষে বা সন ১৮৭০ সালের প্রথমে তিনি কৃষ্ণনগর পরিত্যাগ করিয়া, কলিকাতায় সপারনিউমররি ইনস্পেকাটিং পোস্টমাস্টার নিযক্ত হইয়া আইসেন। পোস্টমাস্টার জেনেরালের সাহায্যই এ পদের কায্য। দীনবন্ধর সাহায্যে পোস্ট আপিসের কায্য কয় বৎসর অতি সচার tf NVa