পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৮৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্কিম রচনাবলী জলতরঙ্গিণী, স্থলে স্থলশায়িনী, খানায় নিখাতিনী, ডোবায় নিমজিজনী, বিলে বিলবাসিনী, এবং মাচার নীচে অলাবসমাহারিণী সভা সকল সভ্য সংগ্রহের জন্য আকুল হইয়া বেড়াইতেছে। সে কাল আর এ কালের সন্ধিস্থানে ঈশ্বর গপ্তের প্রাদাভােব। এ কালের মত তিনি নানা সভার সভ্য, নানা স্কুল কমিটির মেম্পাবার ইত্যাদি ছিলেন-আবার ও দিকে কবির দলে, হাফ আখড়াইয়ের দলে গান বধিতেন। নগর এবং উপনগরের সখের কবি এবং হাফ আখড়াই দলসমহের সংগীতসংগ্রামের সময় তিনি কোন না কোন পক্ষে নিযক্ত হইয়া সংগীত রচনা করিয়া দিতেন। অনেক স্থলেই তাঁহার রচিত গীত ঠিক উত্তর হওয়ায় তাঁহারই জয় হইত। সখের দলসুতু মাগ্রে তাঁহাকেই হস্তগত করিতে চেন্টা করিত, তাঁহাকে পাইলে আর অন্য কবির আশ্রয় ନୌଦ୍\ଓ anT । সন। ১২৫৭ সাল হইতে ঈশ্বরচন্দ্র একটি নতন অনন্ঠান করেন। নববর্ষে অর্থাৎ প্রতি বষের ১লা বৈশাখে তিনি সর্বীয় যন্ত্ৰালয়ে একটি মহতী সভা সমাহত করিতে আরম্ভ করেন। সেই সভায় নগর, উপনগর, এবং মফস্বলের প্রায় সমস্ত সম্পভ্রান্ত লোক এবং সে সময়ের সমস্ত বিদ্বান ও ব্রাহ্মণ পন্ডিতগণ আমন্ত্রিত হইয়া উপস্থিত হইতেন। কলিকাতার ঠাকুরবংশ, মল্লিকবংশ, দত্তবংশ, শোভাবাজারের দেববংশ প্রভৃতি সমস্ত সম্প্রান্ত বংশের লোকেরা সেই সভায় উপস্থিত হঠাতেন। বাব দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রভৃতির ন্যায় মান্যগণ্য ব্যক্তিগণ সভাপতির আসন গ্রহণ করিতেন। ঈশ্বরচন্দ্র সেই সভায় মনোয়ম প্রবন্ধ এবং কবিতা পাঠ করিয়া, সভাস্থ সকলকে তুলট করিতেন। পরে ঈশ্বরচন্দ্রের ছাত্ৰগণের মধ্যে যাঁহাদিগের রচনা উৎকৃষ্ট হইত, তাঁহারা তাহা পাঠ করিতেন। যে সেকল ছাত্রের রচনা উৎকৃষ্ট হইত, তাঁহারা নগদ অর্থ পরিস্কার স্বরূপ পাইতেন। নগর ও মফস্বলের অনেক সম্পন্দ্ৰান্তলোক ছাত্ৰাদিগকে সেই পরিস্কার দান করিতেন। সভা ভঙ্গের পর ঈশ্বরচন্দ্ৰ সেই আমন্ত্ৰিত প্রায় চারি পাঁচ শত লোককে মহাভোজ দিতেন। প্রাত্যহিক প্রভাকরের কলেবর ক্ষদ্র, এবং তাহাতে সম্পাদকীয় উক্তি এবং সংবাদদি পর্যাপ্ত পরিমাণে প্ৰদান করিতে হইত, এজন্য ঈশ্বরচন্দ্ৰ তাতাতে মানের সাধে কবিতা লিখিতে পারিতেন না। সেইজন্যই তিনি ১২৬o সালের ১লা তারিখ হইতে এক একখানি স্থািলকায় প্রভাকর প্রতি মাসের ১লা তারিখে প্রকাশ করতেন । মাসিক প্রভাকরে নানাবিধ খন্ড কবিতা ব্যতীত গদ্যপদ্যপণ্য গ্রন্থও প্রকাশ করিতে থাকেন। প্রভাকরের দ্বিতীয় বার অভু্যদয়ের কয়েক বর্ষ পর হইতেই ঈশ্বরচন্দ্র দৈনিক প্রভাকর সম্পাদনে ক্ষান্ত হয়েনি। কেবল মধ্যে মধ্যে কবিতা লিখিতেন এবং বিশেষ রাজনৈতিক বা সামাজিক কোন ঘটনা হইলে, তৎসম্বন্ধে সম্পাদকীয় উক্তি লিখিতেন। সহকারী সম্পাদক সাব, শ্যামাচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় সমস্ত কাৰ্য্য সম্পাদনা করিতেন। মাসিক পত্ৰ সন্টির পর হইতে ঈশ্বরচন্দ্র বিশেষ পরিশ্রম করিয়া, তাহা সম্পাদনা করিতেন। শেষ অবস্থায় ঈশ্বরচন্দ্রের দেশপৰ্যটনে বিশেষ অনােরাগ জন্মে। সেই জন্যই তিনি সহকারীব হস্তে সম্পাদকভার দান করিষা, পয্যটনে বহির্গত হইতেন। কলিকাতায় থাকিলে, অধিকাংশ সময়ে উপনগণের কোন উদ্যানে বাস করিতেন। শারদীয়া পাজার পর জলপথে প্রায়ই ভ্ৰম7ণ বহির্গত হইতেন। তিনি পািবব বাঙ্গালা ভ্ৰমণে বহিগতি হইয়া, রাজা রাজবল্লাভের কীৰ্ত্তিনাশ দশনে কবিতা প্রণয়নপত্ৰক প্রভাকরে প্রকাশ করেন। আদিশরের যজ্ঞস্থলের ইতিবত্তও প্রকাশ করিয়াছিলেন। গৌড় দশন করিয়া তাহার বংসাবশেষ সম্পবন্ধে কবিতা রচনা করেন। গয়া, বারানসী, প্রয়াগ প্রভৃতি প্রদেশ ভ্ৰমণে বর্ষাধিক কাল অতিবাহিত করেন। তিনি যেখানে যাইতেন, সেইখানেই সমাদর এবং সম্পমানের সহিত গহীত হইতেন। যাঁহারা তাঁহাকে চিনিতেন না, তাঁহারাও তাঁহার মিল্টভাষিতায় মািন্ধ হইয়া আদর করিতেন। এই ভ্ৰমণসত্রে সবদেশের সকল প্রান্তের সম্ভ্রান্ত লোকের সহিতই তাঁহার আলাপ পরিচয় এবং মিত্ৰতা হইয়াছিল। তাঁহাকে প্রাপ্ত হইয়া, মফস্বলের ধনবান জমীদারগণ মহানন্দ প্রকাশ করিতেন এবং অযাচিত হইয়া পাথেয়াস্বরপ পৰ্যাপ্ত অৰ্থ এবং নানাবিধ মল্যবান দ্রব্য উপহার দিতেন। যাঁহার সহিত একবার আলাপ হইত, তিনিই ঈশ্বরচন্দ্রের মিত্রতা-শঙ্খলে আবদ্ধ হইতেন। মিস্টভাষিতা এবং সরলতার দ্বারা তিনি সকলেরই হৃদয় হরণ করিতেন। ভ্ৰমণকালে কোন অপরিচিত স্থানে নৌকা লাগিলে, তীরে উঠিয়া পথে যে সকল বালককে খেলিতে দেখিতেন, তাহাদিগের সহিত আলাপ করিয়া, তাহাদিগের বাটীতে যাইতেন। তাহাদিগের ኪታ8ዪ9