পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৯২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সর উইলিয়ম গ্রে ও সারা জজ কাৰেজ সে রীতি দই প্রকার। একটি রীতি, একটি সামান্য উদাহরণের দ্বারা বঝাইব । মনে কয়, বাঁধের কথা উপস্থিত। কমিশ্যনরের রিপোটো হউক, বোডের রিপোটো হউক, ইঞ্জিনিয়ারদিগের রিপোটো হউক, সংবাদপত্রে হউক, লেঃ গবণর জানিলেন যে নদীতীরস্থ প্রাচীন বাঁধ সকল রক্ষিত হইতেছে না।--তাহার উপায় করা কত্তব্য। তখন লেঃ গবৰ্ণরের হকুম হইল যে, রিপোর্ট তলৰ কর। এই হকুমে ১যদি কোন বিশেষ গণেশালিত্ব বা যোগ্যতা থাকে, তবে সে গণিশালিত্ব বা যোগ্যতা লেঃ গবণারের। সেক্রেটরি সাহেব হাকুম পাইয়া, বোডে চিঠি লিখিলেন-তাঁহার চিঠিতে কথাটা একটা বিস্ততি পাইল-তিনি বলিলেন ইহার বিশেষ অবস্থা জানিবে-অধীনস্থ কৰ্ম্মচারীদিগের অভিপ্রায় কি তাহা লিখিবে, ইহার কিরােপ উপায় হইতে পারে তাহা লিখিবে। বোড ঐ পত্রিখানির একাদশ খন্ড অতি পরিস্কার অনলিপি প্রস্তুত করিয়া, একাদশ কমিশানরের নিকট পাঠাইলেন। একাদশ কমিশনের, অনলিপি প্রাপ্ত হইয়া তাহার কোণে পেনসিলে প্রাপ্তির তারিখ লিখিয়া বাক্সে ফেলিলেন, তাঁহার গারতের কত্তব্য কাৰ্য্য সমাপ্ত হইল। বাক্স প্রাচীন প্রথানসারে যথাসময়ে চাপরাশির সকন্ধে আরোহণ করিয়া, কেরাণীর নিকট পৌছিল। কেরাণী তাহার। আর এক খন্ড পরিস্কার অনলিপি প্রস্তুত করিয়া সাত দিনের মিয়াদ লিখিয়া দিয়া, কালেক্টরদিগের নিকট পাঠাইলেন। যে পথে মহাজনা যায়। সেই পথ-দোপদন্ড প্রচন্ড প্রতাপান্বিত শ্ৰীল শ্ৰীযক্ত কালেক্টর বাহাদর, চুরািট খাইতে খাইতে চিঠির কোণে লিখিলেন “সাবডিবিজন ও ডেপটিগণ বরাবর।” চিঠি এইরপে বড় ডাকঘর হইতে মেজো ডাকঘরে, মেজো ডাকঘর হইতে ছোট ডাকঘরে, এবং তথা হইতে শেষে আটচালা নিবাসী বোতামশান্য চাপকানধারী কালকোল নাদস নদীস ডিপটি বাহাদরের ছিন্ন পাদকৌমন্ডিত শ্ৰীপাদপদ্মযােগলে মধলব্ধ ভ্ৰমরের ন্যায় আসিয়া পড়িল। ডিপটি বাহাদরেরা প্রায় উদারস্থ মহাত্মাদিগের অন্যাকরণ করিয়া, ইংরেজি চিঠির বাঙ্গালা পরওয়ানা করিয়া সাব-ইনস্পেক্টরগণের নিকট ফেলফোর রিপোর্ট তলব করিলেন-সবইনস্পেক্টর পরওয়ানা কনভেন্টবলের হাওয়ালা করিল-কনস্টেবল যে গ্রামে বাঁধ সেইখানে, কাল কোত্তা কাল দাড়ি এবং মোটা রইেল লইয়া, দশন দিয়া এক অন্নাভাবে শীর্ণ ক্লিন্ট চৌকিদারকে ধরিল। ধরিয়াই জিজ্ঞাসা করিল যে, “তোদের গাঁয়ের বাঁধ থাকে না কেন রে?” চৌকিদার ভীত হইয়া বলিল, “আজ্ঞা, জমীদারে মেরামত করে না, আমি গরিব মানষে কি করিব ?” কনভেন্টবল তখন জমীদারী কাছারিতে পদরেণ। অপণ করিয়া গোমস্তাকে কিছ. তবেী করিলেন। গোমস্ত জমীদারী খাতায় পাঁচ টাকা খরচ লিখিয়া কনজোঁটবল বাবকে দেড় টাকা পারিতোষিক দিয়া বিদায় করিলেন। কনভেন্টবল আসিয়া সাব-ইনস্পেক্টর সমক্ষে রিপোর্ট করিলেন “বাঁধ সব বেমেরামত-জমীদার মেরামত করে না-জমীদার মেরামত করিলেই মেরামত হইতে পারে।” ডিপটি বাহাদর লিখিলেন, “বাঁধ সব বেমেরামত,-জমীদারেরা মেরামত করে না।--তাহারা মেরামত করিলেই হয়।” কালেক্টর বাহাদর সেই সকল কথা লিখিলেন, অধিকন্তু “এক্ষণে জমীদারদিগকে বাঁধ মেরামত করিতে বাধ্য করা উচিত।” কমিশ্যনর, সেই সকল কথা লিখিয়া বোডে জিজ্ঞাসা করিলেন, “এক্ষণে, কি প্রকারে জমীদার বাঁধ মেরামত করিতে বাধ্য হইতে পারে?” বোর্ড তত্তদাক্তি পনরক্ত করিয়া, একটা যাহা হয় উপায় নিন্দিািলট করিলেন। সেক্রেটরি সাহেব সেই সকল কথা সাজাইয়া লিখিয়া এক রিজলিউশনের পান্ডুলিপি প্ৰস্তৃত করিয়া পাঠাইলেন, লেঃ গবণর সাহেব সক্ষমত হইয়া তাহাতে দস্তখত করিয়া দিলেন । আজ্ঞা দেশে প্রচারিত হইল; লেঃ গবণর বাহাদরের যশ দেশে বিদেশে ঘোষিল। যাহারা মিত্রপক্ষ তাহারা গবণর বাহাদরের প্রশংসা করিতে লাগিল-শত্ৰপক্ষ নানা জাতীয় ইংরেজি বাঙ্গালায় তাঁহাকে গালি পাড়িতে লাগিল। নন্টের গোড়া চৌকিদার নিবিবাঘের সবদেশে কোদালি পাড়িতে व्लाळ । বাস্তবিক যে এইরূপ কোন প্রকৃত ঘটনা ঘটিয়াছে, এমত নহে। একটি কলিপাত ঘটনা অবলম্বন করিয়াই এ সকল কথা লিখিলাম। এইরূপ যে সচরাচরই ঘাঁটিয়া থাকে, এমত নহে। কিন্তু অনেক সময়ে ঘটে। সৌভাগ্যক্রমে যাহারা সহযোগ্য শাসনকৰ্ত্তা, তাঁহারা এ প্রথা অবলম্পকন করেন না, অযোগ্যেরা করিয়া থাকেন, এইরূপ কাৰ্য্যপ্রণালীকে “কলে শাসন” বলা যাইতে পারে। ধন্মের কলের ন্যায় শাসনের কােলও বাতাসে নড়িয়া থাকে; কোন দিক হইতে কোন কম্পমচারীর রিপোটের বাতাস, বা অন্য প্রকার ফাঁপি উঠিয়া, কলে লাগিলে, কল চলিতে আরম্ভ করে; তদন্তের হকুম হইতে কলের দাম আরম্ভ হইয়া বোর্ড কমিশনের প্রভৃতি অষোধঃ পৰ্যায়ক্রমে 护协剑