পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৯৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ৰফিস রচনাবলী নবজীবনসম্পাদক অক্ষয় বাব, এ পত্রের কোন উত্তর দিলেন না। কিন্তু নবজীবনের আর এক জন লেখক এখানে চুপ করিয়া থাকা উচিত বোধ করিলেন না। আমার প্রিয় বন্ধ বাব চন্দ্ৰনাথ বস, ঐ পত্রের উত্তর দিয়াছিলেন। এবং গালাগালির রকমটা দেখিয়া "ইতর" শব্দটা লইয়া একট, নাড়াচাড়া করিয়াছিলেন তদত্তরে সঞ্জীবনীতে আর একখানি বেনামী পত্র প্রকাশিত হইল। নাম নাই বটে, কিন্তু নামের আদ্য অক্ষর ছিল--“র' লোকে কাজেই বলিল পত্ৰখানি রবীন্দ্র বাবার লেখা। রবীন্দ্র বাব ইত্তর শব্দটা চন্দ্র বাবাকে পালটাইয়া বলিলেন । নবজীবনের পনর দিন পরে, প্রচারের প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হইল। প্রচার, আমার সাহায্যে ও আমার উৎসাহে প্রকাশিত হয়। নবজীবনে আমি হিন্দ, ধৰ্ম-যে হিন্দধৰ্ম‘ আমি গ্রহণ করি—তাহার পক্ষ সমর্থন করিয়া নিয়মক্রমে লিখিতেছিলাম। প্রচারেও ঐ বিষয়ে নিয়মক্রমে লিখিতে লাগিলাম। সেই ধৰ্ম্ম অদি ব্রাহ্ম সমাজের অভিমত নহে। যে কারণেই হউক, প্রচার প্রকাশিত হইবার পর আমি আদি ব্রাহ্ম সমাজ-ভুক্ত লেখকদিগের দ্বারা চারি বার আক্রান্ত হইয়াছি। রবীন্দ্র বাবর এই আক্রমণ চতুর্থ আক্রমণ। গড় পড়তায় মাসে একটি। এই সকল আক্রমণের তীব্রতা একট: পরদা পরদা উঠিতেছে। তাহার একট. পরিচয় আবশ্যক প্রথম। তত্ত্ববোধিনীতে "নব্য হিন্দু সম্প্রদায়" এই শিরোনামে একটি প্রবন্ধে আমার লিখিত ধৰ্ম্মজিজ্ঞাসা" সমালোচিত হয়। সমালোচনা আক্রমণ নহে। এই লেখক বিজ্ঞ, গম্ভীর, এবং ভাবক আমার মাহা বলিবার আছেতাহা সব শনিয়া. যদি প্রথম সংখ্যার উপর সম্পূর্ণ নির্ভর না করিয়া, তিনি সমালোচনায় প্রবত্ত হইতেন, তবে তাঁহ৷র কোন দোষই দিতে পারিতাম না। তিনি যদি অকারণে আমার উপর নিরীশ্বরবাদ প্রভৃতি দোষ আরোপিত না করিতেন, তবে আজ তাঁহার প্রবন্ধ এই গণনার ভিতর ধরিতে পারিতাম না। তিনি ষে দয়ার সহিত সমালোচনা করিয়াছিলেন. তাহাতে তিনি আমার ধন্যবাদের পাত্র। বোধ হয় বলায় দোষ নাই যে, এই লেখক বয়ং তত্ত্ববোধিনী-সম্পাদক বাব দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর দ্বিতীয়। তত্ত্ববোধিনীর ঐ সংখ্যায় "নতন ধৰ্মমত" ইতিশীৰ্ষক দ্বিতীয় এক প্ৰবন্ধে অন্য লেখকের দ্বারা প্রচার ও নবজীবনের প্রথম সংখ্যায় ধর্ম সবন্ধে আমার যে সকল মত প্রকাশিত হইয়াছিল, তাহা সমালোচিত নহে—তিরকৃত হয়। লেখকের নাম প্রবন্ধে ছিল না। লেখক কে তাহা জানি না, কিন্তু লোকে বলে, উহা বিজ্ঞবর শ্রীক্ত বাব, রাজনারায়ণ বসরে লেখা। তিনি আদি ব্রাহ্ম সমাজের সভাপতি। উহাতে "নাস্তিক" "জঘন্য কোমত মতাবলম্বী" ইত্যাদি ভাষায় অভিহিত হইয়াছিলাম। এই লেখক যিনিই হউন, বড় উদার-প্রকৃতি। তিনি উদারতা প্রয:ক্ত, ইংরেজেরা যাহাকে বলির ভিতর হইতে বিড়াল বাহির করা বলে, তাহাই করিয়া বসিয়াছেন। একট, উদ্ধত করিতেছি। "ধর্মজিজ্ঞাসা"-প্রবন্ধলেখক তাঁহার প্রস্তাবের শেষে বলিয়াছেন "যে ধর্মের তত্ত্বজ্ঞানে অধিক সত্যউপাসনা যে ধর্মের সর্বাপেক্ষা চিত্তশদ্ধিকর এবং মনোব্যক্তি সকলের দৃত্তিদায়ক, যে ধন্মের নীতি সর্বাপেক্ষা ব্যক্তিগত এবং জাতিগত উন্নতির উপযোগী. সেই ধৰ্মই অবলম্বন করিবে। সেই ধৰ্ম্ম সন্ধ শ্রেষ্ঠ। হিন্দধেরে সার ব্রাহ্মধর্মই এই সকল লক্ষণাক্রান্ত আমাদিগের ব্রাহ্মধর্ম গ্রন্থের প্রথম খণ্ডে তত্ত্বজ্ঞান বিষয়ক ষে সকল শ্লোক আছে, সকলই সত্য ব্রহ্মোপাসনা যেমন চিত্তশ:দ্ধিকর ও মনোব,ত্তি সকলের গত্তি দায় এক, এমন অন্য কোন ধর্মের উপাসনা নহে। ঐ ধর্মের নীতি যেমন ব্যক্তিগত এবং জাতিগত উন্নতির উপযোগী, এমন অন্য কোন ধর্মের নীতি নহে। ব্রাহ্মধর্মই বঙ্গদেশের শিক্ষিত লোক মাত্রেরই গ্রহণযোগ্য। তাহাতে জাতীয় ভাব ও সত্য উভয়ই রক্ষিত হইয়াছে। উহা দেশের উন্নতির সঙ্গে সমসঙ্গত। উহা সমস্ত বঙ্গ দেশের লোক গ্রহণ করিলে বঙ্গ দেশের অশেষ কল্যাণ সাধিত হইবে।” (তত্ত্ববোধিনী-ভাদ্র, ৯১ পাঠা। ইহার পরে আবার নতন হিন্দুধর্ম সংকারের উদ্যম, নবজীবন ও প্রচারের ধন্টতার পরিচয় বটে তৃতীয়। তৃতীয় আক্রমণ, তত্ত্ববোধিনীতে নহে, এবং ধর্ম সম্বন্ধে কোন বিচারেও নহে প্রচারের প্রথম সংখ্যায় “বাঙ্গালার কলক বলিয়া একটি প্রবন্ধ লিখিত হয়। নব্যভারতে বাব কৈলাসচন্দ্র সিংহ নামে একজন লেখক উহার প্রতিবাদ করেন। তত্ত্ববোধিনীতে দেখিয়াছি যে, ইনি আদি ব্রাহ্মসমাজের সহকারী সম্পাদক। শনিয়াছি ইনি ঘোড়াসাঁকোর ঠাকুর মহাশরদিগের ৯১৪