পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৯৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লড রিপশের উংসবের জমখমার্চ এমন কথা বলিতেছি না, কিন্তু পথ বড় পিচ্ছিল, এজন্য এটকু বলিলাম, মার্জনা করিবেন। তাঁহার কাছে অনেক ভরসা করি, এই জন্য বলিলাম। তিনি এত অল্প বয়সেও বাঙ্গালার উতজবল র–আশীৰ্ব্বাদ করি, দীর্ঘজীবী হইয়া আপনার প্রতিভার উপষক্ত পরিমাণে দেশের উন্নতি সাধন করন। গ্রীবঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়—‘প্রচার: অগ্রহায়ণ ১২৯১. প. ১৬৯-১৮৪।


লর্ড রিপণের উৎসবের জমা-খরচ


এ উৎসবে আমরা পাইলাম কি ? হারাইলাম কি ? যে সংযী লোক. সে সকল সময়ে আপনার জমা-খরচটা খতাইয়া দেখে। আমাদের জাতীয় জমা-খরচটার মধ্যে মধ্যে কৈফিয়ৎ কাটিয়া দেখা ভাল। আগে দেখা যাউক, আমাদের লাভের অঙ্কে কি ? প্রথমতঃআমরা এ উৎসবে লাভ করিয়াছি রাজভক্তি। অনেকে বলিবেন, আমাদের রাজভক্তি ছিল বলিয়াই, উৎসব করিয়াছি। সকলেই বঝেন যে, ঠিক তাহা নহে; অন্য কারণে এ উৎসব উপস্থিত হইয়াছে। উৎসবেই আমাদের রাজভক্তি বাড়িয়াছে। রাজভক্তি বড় বাঙুনীয়। রাজভক্তি জাতীয় উন্নতির একটি গবেতের কারণ। রাজভক্তির জন্য ইহা প্রয়োজনীয় মহে যে, রাজা স্বয়ং একটা ভক্তির যোগ্য মনষ্যে হইবেন। ইংলন্ডের এলিজাবেথ বা প্ৰষিযার দ্বিতীয ফ্রেড্রিক, এতদভযের কেহই ভক্তির যোগ্য ছিলেন না। এরপ নশংস-চরিত্র নরনারী পথিবীতে দলভ। কিন্তু এলিজাবেথের প্রতি জাতীয় রাজভক্তি ইংলন্ডের উন্নতির একটি কারণ। ফ্রেড্রিকের প্রতি জাতীয় রাজভক্তি প্ৰষিয়ার উন্নতির একটি কারণ । আমাদের দ্বিতীয় লাভ, জাতীয় ঐক্য। এই বোধহয়, ঐতিহাসিক কালে প্রথম সমস্ত ভারতবর্ষ এক হইয়া একটা কাজ ব রিল। আমরা এই প্রথম বঝিলাম যে আমাদের মধ্যে ঐকা ঘটিতে পারে। আমরা এই প্রথম বঝিলাম. ভারতবষীয়েরা একজাতি। তৃতীয লাভ, রাজকীয় শক্তি। রাজকীয় শক্তি কতকটা ঐক্যের ফল বটে, কিন্তু ঐক্য থাকিলেই যে শক্তি থাকে, এমত নহে। সকল সমাজেই, সমাজই রাজা। রাজা সমাজ শাসন করেন বটে, কিন্তু সে সমাজের প্রতিনিধিরপে। সমাজ রাজার উপর আবার রাজা। কেবল সমাজ রাজার দণ্ড পরেকারের কর্তা। যে সমাজ রাজাকে দণ্ডিত বা পরকৃত করিয়া থাকে . সেই সমাজেরই রাজনৈতিক শক্তি আছে। প্রকৃত রাজদণ্ড সেই সমাজেরই হাতে। আজ, লর্ড রিপণকে সংশাসনের জন্য পরেত করিয়া ভারতবষীয সমাজ সেই রাজদণ্ড বহস্তে গ্রহ করিয়াছে। ইহাই স্বাধীনতা আমাদের চতুর্থ লাভ, -এটকে কেবল বাঙ্গালার লাভ :-সমাজের কর্তৃত্ব ভূমাধিকারীদের। হাত হইতে এই প্রথম মধ্যবিত্ত লোকের হাতে গেল। অর্থাৎ কর্তৃত্বধনের হাত হইতে বদ্ধি বিদ্যার হাতে গেল। এখন হইতে বাঙ্গালাষ ধনবানেরা আর কেহই নহেন, শিক্ষিত সম্প্রদায়ই কন্তু। ইহা সমাজের পক্ষে বিশেষ মঙ্গলকর উন্নতির লক্ষণ, এবং উন্নতির সোপান। এখনকার নতন সমাজ নেতৃগণের নিকট আমাদের নিবেদন, তাঁহারা সমাজ ধীরে ধীরে সপথে চালাইলে, বিপ্লব না ঘটে এই গেল লাভেব অঙ্ক জমা। এক্ষণে খরচটা দেখা যাউক। সামাদের প্রথম ক্ষতি এই যে, এ উৎসবে দ্বেষক ইংরেজসম্প্রদায়ের সঙ্গে বৈরিতা বড় বাড়িয়া উঠিল। মসুখে যিনি যাহা বলন. তাঁহারা এ উৎসব কথন মার্জনা করিবেন না। তাঁহাদের সঙ্গে আর গোল মিটিবে না। ইহাতে সময়ে সময়ে আমাদিগকে ক্ষতিগ্রস্ত হইতে হইাবে। আমাদের দ্বিতীয় ক্ষতি এই যে, কিছ, “ীম” ছাড়া হইয়াছে. যে সঞ্চিত বলে সমাজ-ধর্ষ দ্রুতবেগে চলিবে. তাহার কিছয় ব্যয় হইয়াছে। সেটা নিতান্ত মন্দও হয় নাই। বড় বেশী স্টীম। জমিলে বিপ্লব উপস্থিত হয আমাদের তৃতীয় ক্ষতি এই যে, গলাবাজির দোরাত্ম্যটা বড় বাড়িয়া গেল। কথার ছড়াছড়ি বড় বেশী হইয়া গিয়াছে। সেটা কুশিক্ষা। একে ত বাঙ্গালী সহজেই কেবল বাক্য-বাহাদপুর, তার উপর বস্তৃতা নামে বিলাতি মালের আমদানি হইয়াছে। সোপা বলিয়া সোহাগা বিক্রয় হইতেছে। আমাদের ভর, পাছে আপনাদের বাকজালে আপনারাই জড়াইয়া পড়ি, কথার কুয়াশায় আার পথ দেখিতে না পাই; তুবড়ী বাজির মত মখে সে সো করিয়া ফাটিয়া ধাই। ৯১৯