পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্কিম রচনাবলী মনে মনে বঝিয়াছি যে, এ সংসারে আমার মন কোথাও নাই। রহস্য ছাড়িয়া সত্য কথা বলিতেছি, কিছুতেই আমার আর মন নাই। শারীরিক সখি স্বচ্ছন্দতায় মন নাই, যে রহস্যালাপের আমি প্রিয় ছিলাম, সে রহস্যালাপে আমার মন নাই। আমার কতকগলি ছোড়া পথি ছিল—তাহাতে আমার মন থাকিত, তাহাতে আমার মন নাই। অর্থসংগ্রহে। কখন ছিল না। -এখনও নাই। কিছতে আমার মন নাই— আমার মন কোথা গেল ? বঝিয়াছি, লঘচেতাদিগের মনের বন্ধন চাই; নাহিলে মন উড়িয়া যায়। আমি কখন কিছতে মন বাঁধি নাই-এজন্য কিছতেই মন নাই। এ সংসারে আমরা কি করিতে আসি, তাহা ঠিক বলিতে পারি না-কিন্তু বোধ হয়, কেবল মন বাঁধা দিতেই আসি। আমি চিরকাল আপনার রহিলাম-পরের হইলাম না, এই জন্যই পথিবীতে আমার সখ নাই। যাহারা স্বভাবতঃ নিতান্ত আত্মপ্রিয়, তাহারাও বিবাহ করিয়া, সংসারী হইয়া, সত্ৰী পত্রের নিকট আত্মসমপণ করে, এজন্য তাহারা সখী। নচেৎ তাহারা কিছতেই সখী হইত না। আমি অনেক অন্যাসন্ধান করিয়া দেখিয়াছি, পরের জন্য আত্মবিসর্জন ভিন্ন পথিবীতে স্থায়ী সখের অন্য কোন মল নাই। ধন, যশঃ, ইন্দ্রিয়াদিলব্ধ সখি আছে বটে, কিন্তু তাহা স্থায়ী নহে। এ সকল প্রথম বারে ষে পরিমাণে সখদায়ক হয়, দ্বিতীয় বারে সে পরিমাণে হয় না, তৃতীয় বারে আরও অলপ সখদায়ক হয়, ক্ৰমে অভ্যাসে তাহাতে কিছই সখি থাকে না। সখি থাকে না, কিন্তু দাইটি অসখের কারণ জন্মে; প্রথমতঃ অভ্যন্ত বস্তুর ভাবে সখি না হউক, অভাবে গরতের অসখি হয়; এবং অপরিতোষণনীয়া আকাঙ্ক্ষার বদ্ধিতে যন্ত্রণা হয়। অতএব পথিবীতে যে সকল বিষয়, কাম্য বস্তু বলিয়া চিরপরিচিত, তাহা সকলই অতৃপ্তিকর এবং দঃখের মলে। সকল স্থানেই যশোর অনগামিনী নিন্দা, ইন্দ্ৰিয়সখের অনগামী রোগ, ধনের সঙ্গে ক্ষতি ও মনস্তাপ; কান্ত বাপ, জরাগ্রস্ত বা ব্যাধিদন্ট হয়; সনামেও মিথ্যা কলঙ্ক রটে ; ধন পত্নীজারেও ভোগ করে; মান সম্প্রম মেঘমালার ন্যায়। শরতের পর আর থাকে না। বিদ্যা তৃপ্তিদায়িনী নহে, কেবল অন্ধকার হইতে গাঢ়তর অন্ধকারে লইয়া যায়, এ সংসারের তত্ত্বজিজ্ঞাসা কখন নিবারণ করে না। সর্বীয় উদ্দেশ্য সাধনে বিদ্যা কখন সক্ষম হয় না। কখন শনিয়াছ, কেহ বলিয়াছে, আমি ধনোেপাডজািন করিয়া সখী হইয়াছি বা যশস্বী হইয়া সখী হইয়াছি ? যেই এই কয় ছত্ৰ পড়িবে, সেই বেশ করিয়া সমরণ করিয়া দেখক, কখন এমন শনিয়াছে কি না। আমি শপথ করিয়া বলিতে পারি, কেহ এমন কথা কখন শানে নাই। ইহার অপেক্ষা ধনমানাদির অকাৰ্য্যকারতার গারতের প্রমাণ আর কি পাওয়া যাইতে পারে? বিস্ময়ের বিষয় এই ষে, এমন অকাট্য প্রমাণ থাকিতেও মনষ্যেমাত্রেই তাহার জন্য প্রাণপাত করে। এ কেবল কুশিক্ষার গণ্য। মাতৃস্তন্য দন্ধের সঙ্গে সঙ্গে ধনমানাদির সব্বাসারবত্তায় বিশ্বাস শিশর হৃদয়ে প্রবেশ করিতে থাকে-শিশ দেখে, রাত্রিদিন পিতা মাতা ভ্ৰাতা ভগিনী গর ভূত্য প্রতিবেশী শত্র মিত্ৰ সকলেই প্ৰাণপণে হা অর্থ, হা যশ, হা মান, হা সম্পন্দ্ৰম! করিয়া বেড়াইতেছে। সতরাং শিশী কথা ফটিবার আগেই সেই পথে গমন করিতে শিখে। কবে মনষ্যে নিত্য সখের একমাত্ৰ মল অন্যসন্ধান করিয়া দেখিবে ? যত বিদ্বান, বদ্ধিমান, দার্শনিক, সংসারতত্ত্ববিৎ, যে কেহ আস্ফালন কর, সকলে মিলিয়া দেখ, পরসখবদ্ধ ন ভিন্ন মনষ্যের অন্য সখের মািল আছে কি না। নাই। আমি মরিয়া ছাই হইব, আমার নাম , কিন্তু আমি মক্তকণ্ঠে বলিতেছি, এক দিন মনষ্যেমাত্রে আমার এই কথা বঝিবে যে, মনষের স্থায়ী সখের অন্য মল নাই। এখন যেমন লোকে উন্মত্ত হইয়া ধন মান ভোগাদির প্রতি ধাবিত হয়, এক দিন মনষ্যেজাতি সেইরােপ উন্মত্ত হইয়া পরের সখের প্রতি ধাবমান হইবে। আমি মরিয়া ছাই হইব, কিন্তু আমার এ আশা একদিন ফলিবে! ফিলিবে, কিন্তু কে কথাটি প্রাচীন। সাদ্ধা দ্বিসহস্ৰ বৎসর পকেবা শাক্যসিংহ এই কথা কত প্রকারে বলিয়া গিয়াছেন। তাহার পর, শত সহস্ৰ লোকশিক্ষক শত সহস্ৰ বার এই শিক্ষা শিখাইয়াছেন। কিন্তু কিছতেই লোকে শিখে না-কিছতেই আত্মাদরের ইন্দ্ৰজাল কাটাইয়া উঠিতে পারে না। আবার আমাদের দেশ ইংরেজি মািলক হইয়া এ বিষয়ে বড় গন্ডগোল বাধিয়া উঠিয়াছে। ইংরেজি শাসন, ইংরেজি সভ্যতা ও ইংরেজি শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে “মেটিরিয়েল প্রসেপরিটির’ক্ষ উপর অন্যরাগ

  • বািহ্য সম্পদ। V0. "