পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/১০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙিকম রচনাবলী তাঁহার দয়াদু চিত্ত আরও আদ্রীভূত হইল। ওসমান কতল খাঁর ভ্ৰাতুলপত্র,* এজন্য অন্তঃপরেও কোথাও তাঁহার গমনে বারণ ছিল না, ইহা পর্ক্সেবাই দন্ট হইয়াছে। যে বিহারগাহে কতল খাঁর উপপত্নীসমােহ থাকিত, সে সস্থলে কতল খাঁর পত্রেরাও যাইতে পারিতেন না, ওসমানও নহে। কিন্তু ওসমান কতল খাঁর দক্ষিণ হসন্ত, ওসমানের বাহ বলেই তিনি আমোদর-তীর পয্যন্ত উৎকল অধিকার করিয়াছিলেন। সতরাং পৌরজন প্রায় কতল খাঁর যােদশ, ওসমানের তােদশ বাধ্য ছিল। এজন্যই অদ্য প্রাতে বিমলার প্রার্থনানসারে, চরমকালে তাঁহার সর্বামিসন্দশন ঘটিয়াছিল। বৈধব্য-ঘটনার দই দিবস পরে বিমলার যে কিছ অলঙ্কারাদি অবশিস্ট ছিল, তৎসমােদয় করিতেছেন ?” বিমলা কহিলেন, তুমি যেরপ কাল ওসমানের নিকট গিয়াছিলে, সেইরােপ আর একবার যাও ; কহিও যে, আমি তাঁহার নিকট আর একবার সাক্ষাতের প্রাথিতা; বলিও, এই শেষ, আর তৃতীয়বার ভিক্ষা করিব না।” দাসী সেইরাপ করিল। ওসমান বলিয়া পাঠাইলেন, “সে মহাল মধ্যে আমার যাতায়াতে উভয়েরই সঙ্কট; তাঁহাকে আমার আবাসমন্দিরে আসিতে কহিও ।” বিমলা জিজ্ঞাসা করিলেন, “আমি যাই কি প্রকারে ?” দাসী কহিল, “তিনি কঁহিয়াছেন যে, তিনি তাহার উপায় করিয়া দিবেন।” সন্ধ্যার পর আয়েষার একজন দাসী আসিয়া অন্তঃপাররক্ষী খোজাদিগের সহিত কি কথাবাত্তা কহিয়া বিমলাকে সমভিব্যাহারে করিয়া ওসমানের নিকট লইয়া গেল । ওসমান কহিলেন, “আর তোমার কোন অংশে উপকার করিতে পারি ?” বিমলা কহিলেন, “অতি সামান্য কথামাত্র ; রাজপতিকুমার জগৎসিংহ কি জীবিত আছেন ?” ও । জীবিত আছেন। বি। সবাধীন আছেন কি বন্দী হইয়াছেন ? ও। বন্দী বটে, কিন্তু আপাতত কারাগারে নহে। তাঁহার অঙ্গের অস্ত্রক্ষতের হেতু পীড়িত হইয়া শয্যাগত আছেন। কতল খাঁর অজ্ঞাতসারে তাঁহাকে অন্তঃপরেই রাখিয়াছি। সেখানে বিশেষ যত্ন হইবে বলিয়া রাখিয়াছি। বিমলা শনিয়া বলিলেন, “এ অভাগিনীদিগের সম্পপক মাত্রেই অমঙ্গল ঘটিয়াছে। সে সকল দেবতাকৃত। এক্ষণে যদি রাজপত্র পনস্তজীবিত হয়েন, তবে তাঁহার আরোগ্যপ্রাপিতর পর, এই পত্ৰখানি তাঁহাকে দিবেন; আপাততঃ আপনার নিকট রাখিবেন । এইমাত্র আমার ভিক্ষা ।” ওসমান লিপি প্রত্যপণ করিয়া কহিলেন, “ইহা আমার অন্যচিত কাৰ্য্য; রাজপত্র যে অবস্থাতেই থাকুন, তিনি বন্দী বলিয়া গণ্য। বন্দৰীদিগের নিকট কোন লিপি আমরা নিজে পাঠ না করিয়া যাইতে দেওয়া অবৈধ, এবং আমার প্রভুর আদেশবিরদ্ধে। বিমলা কহিলেন, “এ লিপির মধ্যে আপনাদিগের অনিষটকারক কোন কথাই নাই, সতরাং অবৈধ কাৰ্য্য হইবে না। আর প্রভুর আদেশ ? আপনি আপন প্ৰভু।” ওসমান কহিলেন, “অন্যান্য বিষয়ে আমি পিতৃব্যের আদেশবিরদ্ধে আচরণ কখন করিতে পারি; কিন্তু এ সকল বিষয়ে নহে। আপনি যখন কহিতেছেন যে, এই লিপিমধ্যে বিরাদ্ধ কথা নাই, তখন সেইরােপই আমার প্রতীতি হইতেছে, কিন্তু এ বিষয়ে নিয়ম ভঙ্গ করিতে পারি না। আমা হইতে এ কায্য৫হইবে না।” বিমলা ক্ষম হইয়া কহিলেন, “তবে আপনি পাঠ করিয়াই দিবেন।” ওসমান লিপি গ্রহণ করিয়া পাঠ করিতে আরম্ভ করিলেন। ষািঠ পরিচ্ছেদ ৪ বিমলার পত্ৰ “যবরাজ ! আমি প্রতিশ্রত ছিলাম যে, এক দিন। আপনার পরিচয় দিব। এখন তাহার সময় উপস্থিত হইয়াছে।

  • ইতিহাসে লেখে পত্র

SOO