পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/১০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দগেশনন্দিনী -- ভরসা করিয়াছিলাম, আমার তিলোত্তমা অম্বরের সিংহাসনারাঢ়া হইলে পরিচয় দিব। সে সকল আশা-ভরসা নিৰ্ম্মমল হইয়াছে। বোধ করি যে, কিছ দিন মধ্যে শনিতে পাইবেন, এ পথিবীতে তিলোত্তমা কেহ নাই, বিমলা কেহ নাই। আমাদিগের পরমায় শেষ হইয়াছে। এই জন্যই এখন আপনাকে এ পত্র লিখিতেছি। আমি মহাপাপীয়সী, বহবিধ অবৈধ কাৰ্য্য করিয়াছি, আমি মরিলে লোকে নিন্দা করিবে, কত মত কদৰ্য্য কথা বলিবে, কে তখন আমার ঘণিত নাম হইতে কলঙ্কের কালি মছাইয়া তুলিবে ? এমন সহৃদ কে আছে ? এক সহৃদ আছেন, তিনি অচিরাং লোকালয় ত্যাগ করিয়া তপস্যায় প্রস্থান করিবেন। অভিরাম স্বামী হইতে দাসীর কায্যোদ্ধার হইবে না। রাজকুমার! এক দিনের তরেও আমি ভরসা করিয়াছিলাম, আমি আপনার আত্মীয়জনমধ্যে গণ্য হইব। এক দিনের তরে আপনি আমার আত্মীয়জনের কম করন। কাহাকেই বা এ কথা বলিতেছি ? অভাগিনীর মন্দ ভাগ্য অগিনশিখাবৎ, যে বন্ধ নিকটে ছিলেন, তাঁহাকেও সপশ করিয়াছে। যাহাই হউক, দাসীর এই ভিক্ষা সমরণ রাখিবেন। যখন লোকে বলিবে বিমলা কুলটা ছিল, দাসী বেশে গণিকা ছিল, তখন কহিবেন, বিমলা নীচ-জাতি-সম্পভবা, বিমলা মন্দভাগিনী, বিমলা দঃশাসিত রসনা-দোষে শত অপরাধে অপরাধিনী; কিন্তু বিমলা গণিকা নহে। যিনি এখন সবগে গমন করিয়াছেন, তিনি বিমলার অদকীট-প্ৰসাদে যথাশাস্ত্র তাহার পাণিগ্রহণ করিয়াছিলেন। বিমলা এক দিনের তরে নিজ প্রভুর নিকটে বিশ্ববাসঘাতিনী নহে। এত দিন একথা প্রকাশ ছিল না, আজ কে বিশ্ববাস করবে ? কেনই বা পত্নী হইয়া দাসীবৎ ছিলাম, তাহা শ্রবণ করােন— গড় মান্দারণের নিকটবত্তী কোন গ্রামে শশিশেখর ভট্টাচায্যের বাস। শশিশেখর কোন সম্পন্ন ব্রাহ্মণের পত্র; যৌবনকালে যথারীতি বিদ্যাধ্যয়ন করিয়াছিলেন। কিন্তু অধ্যয়নে সর্বভাবদোষ দরি হয় না। জগদীশবর শশিশেখরকে। সব্বপ্রকার গণ দান করিয়াও এক দোষ প্রবল করিয়া দিয়াছিলেন, সে যৌবনকালের প্রবল দোষ । গড় মান্দারণে জয়ধরসিংহের কোন অনাচারের বংশে একটি পতিবিরাহিণী রমণী ছিল। তাহার সৌন্দয্য অলৌকিক । তাহার স্বামী রাজসেনামধ্যে সিপাহী ছিল, এজন্য বহদিন দেশত্যাগী। সেই সন্দরী শশিশেখরের নয়নপথের পথিক হইল। অলপকাল মধ্যেই তাঁহার ঔরসে পতিবিরহিতার গভর্বািসনঃার হইল। 蟾 অগিন আর পাপ অধিক দিন গোপনে থাকে না। শশিশেখরের দস্কৃিতি তাঁহার পিতৃকণে উঠিল। পত্র-কৃত পরকুল-কলঙ্ক আপনীত করিবার জন্য শশিশেখরের পিতা সংবাদ লিখিয়া গভর্ণবতীর স্বামীকে ত্বরিত গহে আনাইলেন। অপরাধী পত্রিকে বহবিধ ভৎসনা করিলেন । কলঙিকত হইয়া শশিশেখর দেশত্যাগী হইলেন। শশিশেখর পিতৃ-গহ পরিত্যাগ করিয়া কাশীধামে যাত্ৰা করিলেন, তথায় কোন সব্ববিৎ দন্ডীর বিদ্যার খ্যাতি শ্রত হইয়া, তাঁহার নিকট অধ্যয়নারম্ভ করিলেন। বন্ধি অতি তীক্ষ; দশনাদিতে অত্যন্ত সাপট হইলেন, জ্যোতিষে অদ্বিতীয় মহামহোপাধ্যায় হইয়া উঠিলেন। অধ্যাপক অত্যন্ত সন্তুস্ট হইয়া অধ্যাপনা করিতে লাগিলেন। শশিশেখর একজন শদ্রেীর গাহের নিকটে বাস করিতেন। শািন্দ্রীর এক নবযবতী কন্যা ছিল। ব্রাহ্মণে ভক্তিপ্রাযন্ত যাবতী আহারীয় আয়োজন প্রভৃতি শশিশেখরের গািহ-কাৰ্য্য সম্পাদন করিয়া দিত। মাতৃপিতৃদত্সকৃতিভারে আবরণ নিক্ষেপ করাই কৰ্ত্তব্য। অধিক কি কহিব, শব্দ্রীকন্যার গভে শশিশেখরের ঔরসে এ অভাগিনীর জন্ম হইল। শ্রবণমাত্র অধ্যাপক ছাত্রকে কহিলেন, “শিষ্য! আমার নিকট দম্পকম্পমান্বিতের অধ্যয়ন হইতে পারে না। তুমি আর কাশীধামে মািখ দেখাইও না।” শশিশেখর লজিজত হইয়া কাশীধাম হইতে প্ৰস্থান করিলেন। মাতাকে মাতামহ, দশচারিণী বলিয়া গহ-বহিস্কৃত করিয়া দিলেন। দঃখিনী মাতা আমাকে লইয়া এক কুটীরে রহিলেন । কায়িক পরিশ্রম দ্বারা জীবনধারণ করিতেন; কেহ দঃখিনীর প্রতি ফিরিয়া চাহিত না। পিতারও কোন সংবাদ পাওয়া গেল না। কয়েক বৎসর পরে, শীতকালে একজন আঢ্য পাঠান বঙ্গদেশ হইতে দিল্লী নগরে গমনকালে কাশীধাম দিয়া যান। অধিক রাত্ৰিতে নগরে উপস্থিত হইয়া রাত্ৰিতে থাকিবার সােথান পান না; তাঁহার SOS