পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/১১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দগেশনন্দিনী রাজপত্ৰ কহিলেন, “মহাশয়, আমি মাসলমান নহি, আমি হিন্দ।” দিগগজ মনে করিলেন, “বেটা যবন, আমাকে ফাঁকি দিতেছে; কি একটা মতলব আছে; নহিলে আমাকে ডাকিবে কেন ?” ভয়ে বিষন্নবদনে কহিলেন, “খাঁ বাবাজী, আমি আপনাকে চিনি ; আপনার অন্নে প্রতিপালন, আমায় কিছ বলিবেন না, আপনার শ্ৰীচরণের দাস আমি।” জগৎ সিংহ দেখিলেন, ইহাও এক বিঘা। কহিলেন, “মহাশয়, আপনি ব্রাহ্মণ ; আমি রাজপতি, আপনি এরপ কহিবেন না। আপনার নাম গজপতি বিদ্যাদিগগজ ?” দিগগজ ভাবিলেন, “ঐ গো! নাম জানে! কি বিপদে ফেলিবে ?” করযোড়ে কহিলেন, “দোহাই সেখজীর। আমি গরিব ! আপনার পায়ে পড়ি।” জগৎ সিংহ দেখিলেন, ব্রাহ্মণ যেরপ ভীত হইয়াছে, তাহাতে সপষ্টতঃ উহার নিকট কোন কুৰ্ম্মসুল হইবে না। অতএব বিষয়ান্তরে কথা কহিবার জন্য কহিলেন, “আপনার হাতে ও পাত!” । “আজ্ঞা এ মাণিকপীরের পতি!” “ব্ৰাহ্মণের হাতে মাণিকপীরের পতি!” “আজ্ঞা,-আজ্ঞা, আমি ব্রাহ্মণ ছিলাম, এখন ত আর ব্রাহ্মণ নই।” রাজকুমার “বিস্ময়াপন্ন হইলেন, বিরক্তও হইলেন। কহিলেন, “সে কি ? আপনি গড় নদারণে থাকিতেন না ?” দিগগজ ভাবিলেন, “এই সৰ্ব্বনাশ করিল! আমি বীরেন্দ্ৰসিংহের দাগে থাকি,তাম, টের পেয়েছে! বীরেন্দ্ৰসিংহের যে দশা করিয়াছে, আমারও তাই করিবে।" ব্রাহ্মণ ত্রাসে কাঁদিয়া ফেলিল। রাজকুমার কহিলেন, “ও কি ও !” দিগগজ হােত কচলাইতে কচলাইতে কহিলেন, “দোহাই খাঁ বাবা! আমায় মের না বাবা!” আমি তোমার গোলাম বাবা! তোমার গোলাম বাবা!” “তুমি কি বাতুল হইয়াছ ?” “না, বাবা! আমি তোমারই দাস, বাবা! আমি তোম। বাবা!” জগৎসিংহ অগত্যা ব্ৰাহ্মণকে সস্থিত করিবার জন্য বা নন, “তোমার কোন চিন্তা নাই, তুমি একটা মাণিকপীরের পতি পড়, আমি শনি।” ব্ৰাহ্মণ মাণিকপীরের পতি লইয়া সরে করিয়া পড়িতে লাগিল। যেরপে যাত্রার বালক অধিকারীর কানমলা খাইয়া গীত গায়, দিগগজ পন্ডিতের সেই দশা হইল। ক্ষণেক পরে রাজকুমার পনেকবার জিজ্ঞাসা করিলেন, “আপনি ব্রাহ্মণ হইয়া মাণিকপীরের পতি পড়িতেছিলেন কেন ?" ব্রাহ্মণ সরে থামাইয়া কহিল, “আমি মোছলমান হইয়াছি।” রাজপত্ৰ কহিলেন, “সে কি ?” গজপতি কহিলেন, “যখন মোছলমান বাবরা গড়ে এলেন, তখন আমাকে কহিলেন যে, আয় বামন তোর জাতি মারিব। এই বলিয়া তাঁহারা আমাকে ধরিয়া লইয়া মরগির পালো রাঁধিয়া খাওয়াইলেন।” “পালো কি ?” দিগগজ কহিলেন, “আতপ চাউল ঘাতের পাক।” রাজপত্র বঝিলেন পদার্থটা কি। কহিলেন, “‘বলিয়া যাও!” “তারপর আমাকে বলিলেন, “তুই মোছলমান হইয়াছিস ; সেই অবধুি আমি মোছলমান।” রাজপত্র এই অবসরে জিজ্ঞাসা করিলেন, “আর সকলের কি হইয়াছে ?” “আর আর ব্রাহ্মণ অনেকেই ঐরােপ মোছলমান হইয়াছে।” রাজপত্র ওসমানের মািখপানে দস্টি করিলেন। ওসমান রাজপত্রিকৃত নিৰ্ব্বব্যােক তিরস্কার ধৰ্ম্মই সত্য ধৰ্ম্ম ; বলে হউক, ছলে হউক, সত্যধৰ্ম্মপ্রচারে আমাদের মতে অধৰ্ম্ম নাই, ধৰ্ম্ম उा(छ।” রাজপত্র উত্তর না করিয়া বিদ্যাদিগগজকে প্রশন করিতে লাগিলেন, “বিদ্যাদিগগজ মহাশয়!” “আজ্ঞা এখন সেখ। দিগগজ।” “আচ্ছা তাই; সেখজী, গড়ের আর কাহারও সংবাদ জানেন না ?” S OS