পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/১২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙিকম রচনাবলী আমায় স্নেহ করা, আমি তোমায় স্নেহ করি ; এ আমার অন্যচিত। কিন্তু তুমি আজি আয়েষাকে অবিশবাসিনী ভাবিয়াছ। আয়েষা অন্য যে অপরাধ করােক, অবিশবাসিনী নহে। আয়েষা যে কৰ্ম্মম করে, তাহা মন্তকন্ঠে বলিতে পারে। এখন তোমার সাক্ষাৎ বলিলাম, প্রয়োজন হয়, কাল পিতার সমক্ষে বলিব ।” পরে জগৎ সিংহের দিকে ফিরিয়া কহিলেন, “রাজপত্র, তুমিও অপরাধ ক্ষমা কর। যদি ওসমান আজ আমাকে মনঃপীড়িত না করিতেন, তবে এ দগধ হৃদয়ের তাপ। কখনও তোমার নিকট প্রকাশ পাইত না, কখনও মনষ্যেকর্ণগোচর হইত না।" রাজপত্র নিঃশব্দে দাঁড়াইয়া রহিয়াছেন; অন্তঃকরণ সন্তাপে দগধ হইতেছিল। ওসমানও কথা কহিলেন না। আয়েষা আবার বলিতে লাগিলেন, “ওসমান, আবার বলি, যদি দোষ করিয়া থাকি, দোষ মােত্তজনা করিও। আমি তোমার পবব্যাবৎ স্নেহপরায়ণা ভগিনী ; ভগিনী বলিয়া তুমিও পব্বস্নেহের লাঘব করিও না। কপালের দোষে সন্তাপ-সাগরে ঝাঁপ দিয়াছি, ভ্রাতৃস্নেহে নিরাশ করিয়া আমায় অতল জলে ডুবাইও না।” এই বলিয়া সন্দেরী দাসীর প্রত্যাগমন প্রতীক্ষা না করিয়া একাকিনী বহিগ্যতা হইলেন। ওসমান কিয়ৎক্ষণ বিহােরলের ন্যায় বিনা বাক্যে থাকিয়া, নিজ মন্দিরে প্রস্থান করিলেন। ষোড়শ পরিচ্ছেদ ঃ দাসী চরণে সেই রজনীতে কতল খাঁর বিলাস-গহমধ্যে নত্য হইতেছিল। তথায় অপর নৰ্ত্তকী কেহ।। ছিল না—বা অপর শ্রোতা কেহ ছিল না। জন্মদিনোপলক্ষে মোগল সম্রাটেরা যেরপ পরিষদমন্ডলী মধ্যে আমোদ-পরায়ণ থাকিতেন, কতল খাঁ সেরাপ ছিল না। কতল খাঁর চিত্ত একান্ত আত্মসখরত, ইন্দ্ৰিয়াতৃপিতির অভিলাষী। আদ্য রাত্রে তিনি একাকী নিজ বিলাসগহানিবাসিনীগণে পরিবেপ্টিত হইয়া তাহাদিগের নতৃত্যগীত কৌতুকে মত্ত ছিলেন। খোজাগণ ব্যতীত অন্য পরষ তথায় আসিবার অনমতি ছিল না। রমণীগণ কেহ নাচিতেছে, কেহ গাহিতেছে, কেহ বাদ্য করিতেছে; অপর সকলে কতল খাঁকে বেস্টন করিয়া শনিতেছে। ইন্দ্ৰিয়মাগধকর সামগ্ৰী সকলই তথায় প্রচুর পরিমাণে বৰ্ত্তমান। কক্ষমধ্যে প্রবেশ কর; প্রবেশ করিবামাত্র অবিরত সিঞ্চিত গান্ধবারির সিনীগন্ধ ঘাণে আপাতমস্তক শীতল হয়। অগণিত রজত দিবর দরদ সাফটিক শামাদানের তীব্রোজজবুল জব্বালায় নয়ন ঝলসিতেছিল; অপরিমিত পশুপরাশি কোথাও মালাকারে, কোথাও সাতপাকারে, কোথাও সাতবকাকারে, কোথাও রমণীকেশপাশে, কোথাও রমণীকন্ঠে, স্নিগধতির প্রভা প্রকাশিত করিতেছে। কাহার পশুপব্যজন, কাহারও পক্ষেপ আভরণ : কেহ বা অন্যের প্রতি পশুপক্ষেপণী প্রেরণ করিতেছে; পন্ডেপর সৌরভ, সারভি বারির সৌরভ; সগন্ধ দীপের সৌরভ; গন্ধদ্রব্যমাজিজািত বিলাসিনীগণের অঙ্গের সৌরভ; পরীমধ্যে সর্ববত্র সৌরভে ব্যাপােত। প্রদীপের দীপিত, পক্ষেপর দীপিত, রমণীগণের রত্নালঙ্কারের দীপিত, সব্বোপরি ঘন ঘন কটাক্ষ-বষিণী কামিনী-মন্ডলীর উত্তজবল নয়নদীপিত। সপত সরাসম্মিলিত মধর বীণাদি বাদ্যের ধবনি আকাশ ব্যাপিয়া উঠিতেছে, তদধিক পরিস্কার মধ্যরানিনাদিন রমণীকণঠ-গীতি তাহার সহিত মিশিয়া উঠিতেছে ; সঙেগ সঙেগ তাললয় মিলিত পাদবিক্ষেপে নত্তকীর অলঙ্কারশিঞ্জিত শব্দ মনোমগধ করিতেছে। ঐ দেখা পাঠক ! •যেন পদ্মবনে হংসী সমীরণোখিত তরঙগাঁহিল্লোলে নাচিতেছে ; প্ৰফল্লি পদ্মমাখী সবে ঘেরিয়া রহিয়াছে। দেখ, দেখ, ঐ যে সন্দরী নীলাম্বরপরিধানা, ঐ যার নীল বাস সবণতারাবলীতে খচিত, দেখ! ঐ যে দেখিতেছ, সন্দেরী সীমান্তপাশে বর্ণ হীরকতারা ধারণ করিয়াছে, দেখিয়াছ উহার কি সন্দের ললাট! প্রশান্ত, প্রশস্ত, পরিভাকার ; এ ললাটে কি বিধাতা বিলাসগহ লিখিয়াছিলেন ? ঐ যে শ্যামা পশুপাভরণা, দেখিয়াছ উহার, কেমন পশুপাভরণ সাজিয়াছে ? নারীদেহ শোভার জন্যই পাপ-সজন হইয়াছিল। ঐ যে দেখিতেছ। সম্প্রপািণ, মােদরক্ত ওঠাধর যার ; যে ওল্ঠাধর ঈষৎ কুণ্ডিত করিয়া রহিয়াছে, দেখ, উহার সচিরূণ নীল বাস ফটিয়া কেমন বর্ণপ্ৰভা বাহির হইতেছে ; যেন নিৰ্ম্মমল নীলাম্বব মধ্যে পৰ্ণচন্দ্রালোক দেখা যাইতেছে। এই যে সন্দরী মরালনিন্দিত গ্রীবাভঙগী করিয়া হাসিয়া হাসিয়া কথা কহিতেছে, দেখিয়াছ উহার কেমন কর্ণের কুন্ডল দলিতেছে ? কে তুমি সকেশি সন্দরী ? কেন উরঃপয্যন্ত S SR 8