পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/১৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

वर्ग७दकाश ब्रष्न्बव्ी খোজা কিয়ৎক্ষণ পরে প্রত্যার্গমন করিয়া কহিল, “নবাবপত্রী বলিয়া পাঠাইলেন যে, তিনি যােবরাজের সহিত সাক্ষাৎ করিবেন না; অপরাধ মাজজনা করিবেন।” রাজপত্র সম্বন্ধিত বিষাদে আত্মশিবিরাভিমখ হইলেন। দাগ দিবারে দেখিলেন, ওসমান তাঁহার প্রতীক্ষা করিতেছেন। রাজপত্র ওসমানকে দেখিয়া পনরাপি অভিবাদন করিয়া চলিয়া যান, ওসমান পশ্চাৎ পশ্চাৎ চলিলেন। রাজপত্ৰ কহিলেন, “সেনাপতি মহাশয়, আপনার যদি কোন আজ্ঞা থাকে প্রকাশ করন, আমি প্রতিপালন করিয়া কৃতাৰ্থ হই।” ওসমান কহিলেন, “আপনার সহিত কোন বিশেষ কথা আছে, এত সহচর সাক্ষাৎ তাহা বলিতে পারিব না, সহচরদিগকে অগ্রসর হইতে অনািমতি করন, একাকী আমার সঙ্গে আসন।” রাজপত্র বিনা সঙেকাচে সহচরীগণকে অগ্রসর হইতে বলিয়া দিয়া একা আশাবারোহণে পাঠানের সঙ্গে সঙ্গে চলিলেন ; ওসমানও অশব আনাইয়া আরোহণ করিলেন। কিয়দর গমন করিয়া ওসমান রাজপত্রসঙ্গে এক নিবিড় শালবন-মধ্যে প্রবেশ করিলেন। বনের মধ্যস্থলে এক ভগন অট্টালিকা ছিল, বোধ হয়, অতি পৰ্ব্ববর্তীকালে কোন রাজবিদ্রোহী এ স্থলে আসিয়া কাননাভ্যন্তরে লক্কায়িত ছিল। শালবক্ষে ঘোটক বন্ধন করিয়া ওসমান রাজপত্রকে সেই ভগন অট্টালিকার মধ্যে লইয়া গেলেন। অট্টালিকা মনষ্যাশন্য। মধ্যস্থলে প্রশস্ত প্রাঙ্গণ; তাহার এক পাশেব এক যাবনিক সমাধিখাত প্ৰস্তুত রহিয়াছে, অথচ শব নাই; অপর পাশে বা চিতাসজা রহিয়াছে, অথচ কোন মািতদেহ নাই। প্রাণ্ডগণমধ্যে আসিলে রাজকুমার জিজ্ঞাসা করিলেন, “এ সকল কি ?” ওসমান কহিলেন, “এ সকল আমার আজ্ঞাক্ৰমে হইয়াছে ; আজ যদি আমার মাতৃত্যু হয়, তবে মহাশয় আমাকে এই কবরমধ্যে সমাধিস্থ করিবেন, কেহ জানিবে না; যদি আপনি দেহত্যাগ করেন, তবে এই চিতায় ব্রাহ্মণ দ্বারা আপনার সৎকার করাইব, অপর কেহ জানিবে না।” রাজপত্র বিস্মিত হইয়া কহিলেন, “এ সকল কথার তাৎপৰ্য্য কি ?” ওসমান কহিলেন, “আমরা পাঠান—অন্তঃকরণ প্রজবলিত হইলে উচিত।ানচিত। বিবেচনা করি না; এই পথিবীমধ্যে আয়েষার প্রণয়াকাঙক্ষী দই ব্যক্তির স্থান হয় না, একজন এইখানে প্রাণত্যাগ করিব।” তখন রাজপত্র আদ্যোপােন্ত বঝিতে পারিয়া অত্যন্ত ক্ষািবধ হইলেন, কহিলেন, “আপনার কি অভিপ্রায় ?” ওসমান কহিলেন, “সশস্ত্ৰ আছ, আমার সহিত যাদ্ধ করা। সাধ্য হয়, আমাকে বধ করিয়া আপনার পথ মন্ত কর, নচেৎ আমার হস্তে প্রাণত্যাগ করিয়া আমার পথ ছাড়িয়া যাও।” এই বলিয়া ওসমান জগৎ সিংহকে প্রত্যুত্তরের অবকাশ দিলেন না, অসিহস্তে তৎপ্রতি আক্ৰমণ করিলেন। রাজপত্র অগত্যা আত্মরক্ষাথ শীঘ্রহস্তে কোষ হইতে আসি বাহির করিয়া ওসমানের আঘাতের প্রতিঘাত করিতে লাগিলেন। ওসমান রাজপত্রের প্রাণনাশে পািনঃ পািনঃ বিষমোদাম করিতে লাগিলেন ; রাজপত্র ভ্ৰমব্রুমেও ওসমানকে আঘাতের চেন্টা করিলেন না ; কেবল আত্মরক্ষায় নিযক্ত রহিলেন। উভয়েই শস্ত্রবিদ্যায় সশিক্ষিত, বহক্ষণ যন্ধ হইল, কেহ কাহাকেও পরাজিত করিতে পারিলেন না। ফলতঃ যবনের অস্ত্রাঘাতে রাজপত্রের শরীর ক্ষতবিক্ষত হইল : রধিরে অঙ্গ পলাবিত হইল ; ওসমানপ্রতি তিনি একবারও আঘাত করেন নাই, সতরাং ওসমান অক্ষত। রক্তস্রাবে শরীর অবসন্ন হইয়া পড়িল দেখিয়া আর এরােপ সংগ্রামে মাতৃত্যু নিশ্চয় জানিয়া জগৎ সিংহ কাতরস্বরে কহিলেন, “ওসমান, ক্ষান্ত হও, আমি পরাভব স্বীকার করিলাম।” ওসমান উচ্চ হাস্য করিয়া কহিলেন, “এ ত জানিতাম না যে, রাজপত সেনাপতি মরিতে ভয় পায়; যাদ্ধ করা, আমি তোমায় বধ করিব, ক্ষমা করিব না। তুমি জীবিতে আয়েষাকে পাইব না।” Α রাজপত্ৰ কহিলেন, “আমি আয়েষার অভিলাষী নহি ।” ওসমান আসি ঘণিত করিতে করিতে কহিতে লাগিলেন, “তুমি আয়েষার অভিলাষী নও, আয়েষা তোমার অভিলাষী। যাদ্ধ কর, ক্ষমা নাই।” রাজপত্র অসি দরে নিক্ষেপ করিয়া কহিলেন, “আমি যদ্ধ করিব না। তুমি অসময়ে আমার উপকার করিয়াছ ; আমি তোমার সহিত যাদ্ধ করিব না।” > ミbf