পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/১৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

এই বলিয়া কাপালিক প্রস্থান করিল। নবকুমার সেই সামঈশ্য ফলমল আহার করিয়া এবং সমস্ত দিবাসজনিত ক্লেশহেতু শীঘ্রই নিদ্রাভিভূত হইলেন। পঞ্চম পরিচ্ছেদ ঃ সমদ্রতটে “-GZT52\ol<T b GSSQ\O Q\5 বিভীষি চাকারমনিকবিতানাং মণিালিনী হৈমমিবোপরাগম৷” রাঘবংশ প্রাতে উঠিয়া নবকুমার সহজেই বাটী গমনের উপায় করিতে ব্যস্ত হইলেন; বিশেষ, এ কাপালিকের সান্নিধ্য কোনক্লমেই শ্রেয়স্কর বলিয়া বোধ হইল না। কিন্তু আপাততঃ এ পথহীন বনমধ্য হইতে কি প্রকারে নিম্ফ্রান্ত হইবেন ? কি প্রকারেই বা পথ চিনিয়া বাটী যাইবেন ? কাপালিক অবশ্য পথ জানে, জিজ্ঞাসিলে কি বলিয়া দিবে না ? বিশেষ, যত দীর দেখা গিয়াছে, তত দীর কােপালিক তাঁহার প্রতি কোন শঙ্কাসচক আচরণ করে নাই—কেনই বা তবে তিনি ভীত হন ? এ দিকে কাপালিক তাঁহার পনিঃসাক্ষাৎ পয্যন্ত কুটনীর ত্যাগ করিতে নিষেধ করিয়াছে, তাহার অবাধ্য হইলে বরং তাহার রোষোৎপত্তির সম্ভাবনা। নবকুমার শ্রত ছিলেন যে, কাপালিকেরা মন্ত্রবলে অসাধ্যসাধনে সক্ষম—এ কারণে তাহার অবাধ্য হওয়া অনচিত। ইত্যাদি বিবেচনা করিয়া নবকুমার আপাততঃ কুটনীরমধ্যে অবস্থান করাই স্থির করিলেন। কিন্তু ক্ৰমে বেলা অপরাহু হইয়া আসিল, তথাপি কাপলিক প্রত্যাগমন করিল না। পািব্ব দিনের উপবাস, আদ্য এ পয্যন্ত অনশন, ইহাতে ক্ষধা প্রবল হইয়া উঠিল। কুটনীরমধ্যে যে অলপ পরিমাণ ফলমল ছিল, তাহা পৰ্ব্বারাত্রেই ভুক্ত হইয়াছিল—এক্ষণে কুটনীর ত্যাগ করিয়া ফলমলান্বেষণ না করিলে ক্ষধায় প্ৰাণ যায়। অলপ বেলা থাকিতে ক্ষধারী পীড়নে নবকুমার ফলান্বেষণে বাহির হইলেন। নবকুমার ফলান্বেষণে নিকটস্থ বালকোস্তপসকলের চারিদিকে পরিভ্রমণ করিতে লাগিলেন। যে দই একটা গাছ বালিকায় জন্মিয়া থাকে, তাহার ফলাসবাদন করিয়া দেখিলেন যে, এক বক্ষের ফল বাদামের ন্যায় অতি সহস্ৰবাদ। তদদ্বারা ক্ষধানিবত্তি করিলেন। কথিত বালকাসতপশ্রেণী প্রস্থে অতি অলপ, অতএব নবকুমার অলপকাল ভ্ৰমণ করিয়া তাহা পার হইলেন। তৎপরে বালকাবিহীন নিবিড় বনমধ্যে পড়িলেন। যাঁহারা ক্ষণকালজন্য অপব্বপরিচিত বনমধ্যে ভ্ৰমণ করিয়াছেন, তাঁহারা জানেন যে, পথহীন বনমধ্যে ক্ষণমধ্যেই পথভ্রান্তি জন্মে। নবকুমারের তাহাই ঘটিল। কিছ দীর আসিয়া আশ্রম কোন পথে রাখিয়া আসিয়াছেন, তাহা সিথর করিতে পারিলেন না। গম্ভীর জলকল্লোল তাঁহার কণমধ্যে প্রবেশ করিল ; তিনি বঝিলেন যে, এ সাগরগডজনি। ক্ষণকাল পরে অকস্মাৎ বনমধ্য হইতে বহির্গত হইয়া দেখিলেন যে, সম্মখেই সমদ্র। অনন্তবিস্তার নীলাম্ববামন্ডল সম্মখে দেখিয়া উৎকটানন্দে হৃদয় পরিপািলত হইল। সিকতাময় তটে গিয়া উপবেশন করিলেন। ফেনিল, নীল, অনন্ত সমদ্ৰ! উভয় পাশেবা যত দাির চক্ষঃ যায়, তত দীর পর্য্যন্ত তরঙ্গভঙ্গপ্রক্ষিপত ফেনার রেখা; সত্যুপীকৃত বিমল কুসমদামগ্রথিত মালার ন্যায় সে ধবল ফেনরেখা হেমকান্ত সৈকতে ন্যস্ত হইয়াছে; কাননকুন্তলা ধরণীর উপযক্ত অলকাভরণ। নীল জলমণ্ডলমধ্যে সহস্ৰ স্থানেও সফেন তরঙ্গভঙ্গ হইতেছিল। যদি কখন এমত প্রচন্ড বায়বহন সম্পভব হয় যে, তাহার বেগে নক্ষত্রমালা সহস্ৰে সহসে স্থানচ্যুত হইয়া নীলাম্বরে আন্দোলিত হইতে থাকে, তবেই সে সুগিরতরঙ্গক্ষেপের স্বরূপ দহট হইতে পারে। এ সময়ে অস্তগামী দিনমণির মদলে কিরণে নীলজলের একাংশ দ্রবীভূত সবণের ন্যায়৷ জলিতেছিল। অনতিদারে কোন ইউরোপুৰীয় বণিকজাতির সমদ্রপোত শেবতপক্ষ বিস্তার করিয়া বহৎ পক্ষীর ন্যায় জলধিহীদয়ে উড়িতেছিল। কতক্ষণ যে নবকুমার তীরে বসিয়া অনন্যমনে জলধিশোভা দণ্টি করুিতে লাগিলেন, তদ্ধিবষয়ে তৎকালে তিনি পরিমাণ-বোধ-রাহিত। পরে একেবারে প্রদোষ তিমির আসিয়া কাল জলের উপর বসিল । তখন নবকুমারের চেতনা হইল যে, আশ্রম সন্ধান করিয়া লইতে হইবেক । ਸ yr N8 (O