পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/১৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙিকম রচনাবলী ত্যাগ করিয়া গাত্রে থান করিলেন। দীঘ নিশবাস ত্যাগ করিলেন কেন, তাহা বলিতে পারি না— তখন তাঁহার মনে কোন ভূতপািকব সখের উদয় হইতেছিল, তাহা কে বলিবে ? গাত্ৰোখান করিয়া সমন্দ্রের দিকে পশ্চাৎ ফিরিলেন। ফিরিবামাত্ৰ দেখিলেন, অপব্ব মাত্তি! সেই গম্ভীরনাদনী বারিধিতীরে, সৈকতভূমে অসপস্ট সন্ধ্যালোকে দাঁড়াইয়া অপব্ব রমণীমত্তি! কেশভার— অবেণীসম্বন্ধ, সংসপিত, রাশীকৃত, আগলাফলম্বিত কেশভার; তদগ্ৰে দেহরত্ন ; যেন চিত্রপটের উপর চিত্র দেখা যাইতেছে। অলকাবলীর প্রাচুয্যে মখমন্ডল সম্পপণ্য রিপে প্রকাশ হইতেছিল না—-তথাপি মোঘবিচ্ছেদনিঃসন্ত চন্দ্ররাশিমর ন্যায় প্রতীত হইতেছিল। বিশাল লোচনে কটাক্ষ অতি সিথর, অতি স্নিগাধ, অতি গম্ভীর, অথচ জ্যোতিময় ; সে কটাক্ষ এই সাগরহাদয়ে ক্ৰীড়াশীল চন্দ্ৰকিরণলেখার ন্যায় সিনগেধাজজবুল দীপিত পাইতে কেশরাশিতে সকনধিদেশ ও বাহযোিগল। আচ্ছন্ন করিয়াছিল। স্কন্ধাদেশ একেবারে আদশ্য বাহযোিগলের বিমলশ্ৰী কিছ কিছ দেখা যাইতেছিল। রমণীদেহ একেবারে নিরাভরণ। মাত্তি ধ্যে যে একটি ছিল, তাহা বণিতে পারা যায় না, অদধচন্দ্রনিঃসতে কৌমন্দিবাণী ; ঘনকৃষ্ণ চিকুরজাল; পরস্পরের সান্নিধ্যে কি বণ, কি চিকুর, উভয়েরই যে শ্ৰী বিকসিত হইতেছিল, তাহা সেই গম্ভীরনাদনী সাগরকলে, সন্ধ্যালোকে না দেখিলে তাহার মোহিনী শক্তি অনভূত হয় না। নবকুমার অকস্মাৎ এই রােপ দগমমধ্যে দৈবী মাত্তি দেখিয়া নিসপন্দ্যশরীর হইয়া দাঁড়াইলেন। তাঁহার বাকশক্তি রহিত হইল,—স্তবধ হইয়া চাহিয়া রহিলেন। রমণীও সপন্দনহীন, অনিমেযলোচনে বিশাল চক্ষর সিথরদস্টি নবকুমারের মাখে। ন্যাসত করিয়া রাখিলেন। উভয়মধ্যে প্রভেদ এই যে, নবকুমারের দটি চমকিত লোকের দটির ন্যায়, রমণীর দণ্টিতে সে লক্ষণ কিছমাত্র নাই, কিন্তু তাহাতে বিশেষ উদ্বেগ প্রকাশ হইতেছিল। অনন্তর সমদ্রের জনহীন তীরে, এইরনুপে বহক্ষণ দাই জনে চাহিয়া লেন। অনেকক্ষণ পরে তরণীর কন্ঠস্বর শনা গেল। তিনি অতি মদ কহিলেন, “পথিক, তুমি পথ এই কন্ঠস্বরের সঙ্গে নবকুমারের হৃদয়বীণা বাজিয়া উঠিল। বিচিত্ৰ হৃদয়যন্ত্রের তন্ত্রীচয় সময়ে সময়ে এরাপ লয়হীন হইয়া থাকে যে, যত যত্ন করা যায়, কিছতেই পরস্পর মিলিত হয়। না। কিন্তু একটি শব্দে, একটি রমণীকণঠাসম্ভূত সবরে সংশোধিত হইয়া যায়। সকলই লয়বিশিস্ট হয়। সংসারযাত্রা সেই অবধি সখময় সঙ্গীতপ্রবাহ বলিয়া বোধ হয়। নবকুমারের কণে সেইরােপ এ ধবনি বাজিল। “পথিক, তুমি পথ হারাইয়াছ ?" এ ধবনি নবকুমারের কণে প্রবেশ করিল। কি অৰ্থ, কি উত্তর করিতে হইবে, কিছই মনে হইল না। ধবনি যেন হৰ্ষ কম্পিপতি হইয়া বেড়াইতে লাগিল; যেন পবনে সেই ধবনি বহিল ; বক্ষপত্র মন্মরিত হইতে লাগিল; সাগরনাদে যেন মন্দীভূত হইতে লাগিল। সাগরবাসনা পথিবী সন্দিরী; রমণী সন্দেরী: ধবনিও সন্দর ; হৃদয়তন্ত্রীমধ্যে সৌন্দয্যের লয় মিলিতে লাগিল । রমণী কোন উত্তর না পাইয়া কহিলেন, “আইস।” এই বলিয়া তরণী চলিল; পদক্ষেপ লক্ষ্য হয় না। বসন্তকালের মন্দানিল-সঞ্চালিত শািন্দ্ৰ মেঘের ন্যায়। ধীরে ধীরে, অলক্ষ্য পাদবিক্ষেপে চলিল ; নবকুমার কলের পত্তলীর ন্যায়। সঙ্গে চলিলেন। এক স্থানে একটা ক্ষদ্র বন পরিবেস্টন করিতে হইবে, বনের অন্তরালে গেলে, আর সন্দরীকে দেখিতে পাইলেন না। বনবেস্টনের পর দেখেন যে সম্মখে কুটীর। ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ : কাপালিকসঙ্গে “কথং নিগড় সংযতাসি। দ্রতম নয়ামি ভবতীমিতঃ—” রত্নাবলী নবকুমার কুটনীরমধ্যে প্রবেশ করিয়া দবারসংযোজনপৰিবাক করতলে মস্তক দিয়া বসিলেন। শীঘ আর মস্তকোত্তোলন করিলেন না। N 88