পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/১৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কপালকুণডালা “এ কি দেবী—মানষী—না কাপালিকের মায়ামাত্র !" নবকুমার নিস্পন্দ হইয়া হৃদয়মধ্যে এই কথার আন্দোলন করিতে লাগিলেন। কিছই বঝিতে পারিলেন না। অন্যমনস্ক ছিলেন বলিয়া, নবকুমার আর একটি ব্যাপার দেখিতে পান নাই। সেই কুটনীরমধ্যে তাঁহার আগমনপকেবাবধি একখানি কাম্পঠ জাবলিতেছিল। পরে যখন অনেক রাত্রে সমরণ হইল। যে, সায়াহকৃত্য অসমাপত রহিয়াছে—তখন জলান্বেষণ অননুরোধে চিন্তা হইতে ক্ষান্ত হইয়া এ বিষয়ের অসম্পভাবিতা হৃদয়ঙ্গম করিতে পারিলেন। শািন্ধ আলো নহে, তন্ডুলাদি পাকোপযোগী কিছ কিছ সামগ্ৰীও আছে। নবকুমার বিস্মিত হইলেন না।—মনে করিলেন যে, এও কাপালিকের কম-এ সন্থানে বিসময়ের বিষয় কি আছে। নবকুমার সায়ংকৃত্য সমাপন্যান্তে তন্ডুলগলি কুটনীরমধ্যে প্ৰাপত এক মৎপাত্রে সিদ্ধ করিয়া আত্মসাৎ করলেন । পরদিন প্ৰভাতে চৰ্ম্মশয্যা হইতে গাত্ৰোখান করিয়াই সমদ্রতীরাভিমখে চলিলেন। পািকবদিনের যাতায়াতের গণে আদ্য অলপ কম্পেট পথ অনভূত করিতে পারিলেন। তথায় প্রাতঃকৃত্যু সমাপন করিয়া প্রতীক্ষা করিতে লাগিলেন। কাহার প্রতীক্ষা করিতে লাগিলেন ? পািকবদন্ডটা মায়াবিনী পনেকবার সে সন্থলে যে আসিবেন—এমত আশা নবকুমারের হৃদয়ে কত দীর প্রবল হইয়াছিল বলিতে পারি না—কিন্তু সে সস্থান তিনি ত্যাগ করিতে পারিলেন না। অনেক বেলাতেও তথায় কেহ আসিল না। তখন নবকুমার সে স্থানের চারিদিকে ভ্ৰমিয়া বেড়াইতে লাগিলেন। ব্যথা অন্বেষণ মাত্র। মনষ্যেসমাগমের চিহ্নমাত্ৰ দেখিতে পাইলেন না। পনেকবার ফিরিয়া আসিয়া সেই সস্থানে উপবেশন করিলেন। সায্য অস্তগত হইল ; অন্ধকার হইয়া আসিতে লাগিল; নবকুমার হতাশ হইয়া কুটীরে ফিরিয়া আসিলেন। সায়াহ্নকালে সমািদ্রতীর হইতে প্রত্যাগমন করিয়া নবকুমার দেখিলেন যে, কাপালিক কুটনীরমধ্যে ধরাতলে উপবেশন করিয়া নিঃশব্দে আছে। নবকুমার প্রথমে স্বাগত জিজ্ঞাসা করিলেন ; তাহাতে কাপালিক কোন উত্তর করিল না। ’ নবকুমার কহিলেন, “এ পৰ্যন্ত প্রভুর দশনে কি জন্য বঞ্চিত ছিলাম ?” কাপালিক কহিল, “নিজ ব্রতে নিযক্ত ছিলাম।” নবকুমার গহ গমনাভিলাষ ব্যঞ্জ করিলেন। কহিলেন, ‘পথ অবগত নাহি-পাথেয় নাই ; যদিবাহিতবিধান প্রভুর সাক্ষাৎ পাইলেই হইতে পরিবে, এই ভরসায় আছি।” কাপালিক কেবলমাত্ৰ কহিল, “ আমার সঙ্গে আগমন কর।” এই বলিয়া উদাসীন গাত্ৰোখান :::%;" বাটী যাইবার কোন সদ্যপায হইতে পরিবে প্রত্যাশায় নবকুমারও তাহার পশ্চাদবত্তীর্ণ లై তখন সন্ধ্যালোক অন্তহিত হয় নাই—কাপালিক অগ্ৰে অগ্রে, নবকুমার পশ্চাৎ পশ্চাৎ যাইতেছিলেন। অকস্মাৎ নবকুমারের পািঠদেশে কাহার কোমল করসংপশ্য হইল। পশ্চাৎ ফিরিয়া যাহা দেখিলেন, তাহাতে সপন্দহীন হইলেন। সেই আগলাফলম্পিাবত-নিবিড়কেশরাশি-ধারিণী ত্তি! পাকবািবং নিঃশব্দ নিসপন্দ। কোথা হইতে এ মাত্তি অকস্মাৎ তাঁহার পশ্চাতে আসিল! নবকুমার দেখিলেন, রমণী মাখে অঙ্গলি প্ৰদান করিয়া আছে। নবকুমার বঝিলেন যে, রমণী বাক্যস্ফীত্তি নিষেধ করিতেছে—নিষেধের বড় প্রয়োজন ছিল না। নবকুমার কি কথা কহিবেন ? তিনি তথায় চমৎকৃত হইয়া দাঁড়াইলেন। কাপালিক এ সকল কিছই দেখিতে পাইল না, অগ্রসর হইয়া চলিয়া গেল। তাহারা উদাসীনের শ্রবণতিক্রান্ত হইলে রমণী মদ স্বরে কি কথা কহিল। নবকুমারের কণে এই শব্দ প্রবেশ করিল। “কোথা যাইতেছ? যাইও না। ফিরিয়া যাও—পলায়ন কর।” এই কথা সমাপত করিয়াই উক্তিকারিণী সরিয়া গেলেন, প্রত্যুত্তর শনিবার জন্য তিস্ঠিলেন না। নবকুমার কিয়ৎকাল অভিভূতের ন্যায় দাঁড়াইলেন ; পশ্চাদবত্তীর্ণ হইতে ব্যগ্র হইলেন, কিন্তু রমণী কোন দিকে গেল, তাহার কিছই স্থিরতা পাইলেন না। মনে করিতে লাগিলেন—“এ কাহার মায়া ? না আমারই ভ্ৰম হইতেছে। যে কথা শানিলাম—সে ত আশঙ্কাসচক, কিন্তু কিসের আশঙকা ? তান্ত্রিকেরা সকলই করিতে পারে। তবে কি পলাইব ? পলাইব বা কেন ? সে দিন যদি বাঁচিয়াছি, আজিও বাঁচিব। কাপালিক মনষ্যি, আমিও মনষ্যে।” নবকুমার এইরােপ চিন্তা করিতেছিলেন, এমত সময়ে দেখিলেন, কাপালিক তাঁহাকে সঙ্গে না দেখিয়া প্রত্যাগমন করিতেছে। কাপালিক কহিল, “বিলম্ব করিতেছ। কেন ?” S8(t SO