পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/১৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙিকম রচনাবলী কাপালিক পািনরাহবান করাতে বিনা বাক্যব্যয়ে নবকুমার তাঁহার পশ্চাদবত্তীর্ণ হইলেন। কিয়দর গমন করিয়া সম্মখে এক মৎপ্রাচীরবিশিস্ট কুটনীর দেখিতে পাইলেন। তাহাকে কুটীরও বলা যাইতে পারে, ক্ষদ্র গহও বলা যাইতে পারে। কিন্তু ইহাতে আমাদিগের কোন প্রয়োজন নাই। ইহার পশ্চাতেই সিকতাময় সমদ্রতীর । গহপাশবি দিয়া কাপালিক নবকুমারকে সেই সৈকতে লইয়া চলিলেন; এমত সময় তীরে তুল্য বেগে পািব্বদােন্সটা রমণী তাঁহার পাশব দিয়া চলিয়া গেল ; গমনকালে তাঁহার কণে বলিয়া গেল, “এখনও পলাও । নরমাংস নাহিলে তান্ত্রিকের পজা হয় না, তুমি কি জান না ?” নবকুমারের কপালে স্বেদনিগম হইতে লাগিল। দভাগ্যবশতঃ যাবতীর এই কথা কাপালিকের কণে গেল। সে কহিল, “কপালকুন্ডলে!” সােবর নবকুমারের কণে মেঘগজজািনবৎ ধবনিত হইল। কিন্তু কপালকুন্ডলা কোন উত্তর | N । কাপালিক নবকুমারের হস্ত ধারণ করিয়া লইয়া যাইতে লাগিল। মানষঘাতী করস্পশে নবকুমারের শোণিত ধমনীমধ্যে শতগণ বেগে প্রধাবিত হইল—লাপত সাহস পােনকবার আসিল । কহিলেন, “হসত ত্যাগ করবেন।” কাপালিক উত্তর করিল না। নবকুমার পনেরপি জিজ্ঞাসা করিলেন, “আমায় কোথায় লইয়া যাইতেছেন ?” কাপালিক কহিল, “পজার সন্থানে।” কাপালিক কহিল, “বধার্থ।” আতি তীব্রবেগে নবকুমার নিজ হসন্ত টানিলেন। যে বলে তিনি হস্ত আকষিত করিয়াছিলেন, তাহাতে সামান্য লোকে তাঁহার হাত ধরিয়া থাকিলে হসন্তরক্ষা করা দরে থাকুক।--বেগে ভূপতিত হইত। কিন্তু কাপালিকের অঙ্গমাত্ৰও হেলিল না;—নবকুমারের প্রকোৎঠ তাহার হস্তমধ্যেই রহিল। নবকুমারের অস্থিগ্রিন্থিসকল যেন ভগন হইয়া গেল। নবকুমার দেখিলেন, বলে হইবে না। কৌশলের প্রয়োজন। “ভাল দেখা যাউক,”—এইরপ স্থির করিয়া নবকুমার কােপালিকের সঙ্গে চলিলেন। সৈকতের মধ্যস্থানে নীত হইয়া নবকুমার দেখিলেন, পািব্ব দিনের ন্যায় তথায় বহৎ কাঠে অগিন জীবলিতেছে। চতুঃপাশে বা তান্ত্রিক পাজার আয়োজন রহিয়াছে, তন্মধ্যে নরকপালপণ আসিব রহিয়াছে—কিন্তু শব নাই। অনমান করিলেন, তাঁহাকেই শব হইতে হইবে। কতকগলি শািন্ডক, কঠিন লতাগােলম তথায় পািব্ব হইতেই আহরিত ছিল। কাপালিক তন্দ্বারা নবকুমারকে দঢ় বন্ধন করিতে আরম্ভ করিল। নবকুমার সাধ্যমত বল প্রকাশ করিলেন; কিন্তু বল প্রকাশ কিছমাত্র ফলদায়ক হইল না। তাঁহার প্রতীতি হইল যে, এ বয়সেও কাপালিক মত্ত হস্তীর বল ধারণ করে। নবকুমারের বল প্রকাশ দেখিয়া কাপালিক কহিল, “মািখ । কি জন্য বল প্রকাশ করা ? তোমার জন্ম আজি সাৰ্থক হইল। ভৈরবীর পজায় তোমার এই মাংসপিন্ড অপিত হইবেক, ইহার অধিক তোমার তুল্য লোকের আর কি সৌভাগ্য হইতে পারে ? কাপালিক নবকুমারকে দঢ় বন্ধন করিয়া সৈকতোপরি ফেলিয়া রাখিলেন। এবং বধের প্রাক্কালিক পজেদি ক্লিয়ায় ব্যাপতি হইলেন। ততক্ষণ নবকুমার বাঁধন ছিড়িবার চেন্টা করিতে লাগিলেন; কিন্তু শঙ্ক লতা অতি কঠিন-বন্ধন অতি দঢ়। মাতৃত্যু আসন্ন ! নবকুমার ইস্টদেবচরণে চিত্ত নিবিল্ট করিলেন। একবার জন্মভূমি মনে পড়িল, নিজ সখের আলয় মনে পড়িল, একবার বহদিন অন্তহিত জনক এবং জননীর মখ মনে পড়িল, দই এক বিন্দ আশ্রমজল সৈকত-বালিকায় শষিয়া গেল। কাপালিক বলির প্রাক্কালিক ক্লিয়া সমাপন্যান্তে বাধাথ খড়গ লাইবার জন্য আসন ত্যাগ করিয়া উঠিল। কিন্তু যথায় খড়া রাখিয়াছিল, তথায় খড়গ পাইল না। আশ্চৰ্য্য! কাপালিক কিছ বিস্মত হইল। তাহার নিশ্চিত মনে হইতেছিল যে, অপরাহে খড়গ আনিয়া উপযক্ত স্থানে রাখিয়াছিল এবং স্থানান্তরও করে নাই, তবে খড়গ কোথায় গেল ? কাপালিক ইতস্ততঃ অন্যসন্ধান করিল। কোথাও পাইল না। তখন পািব্বকথিত কুটীরাভিমািখ হইয়া কপালকুন্ডলাকে ডাকিল, কিন্তু পািনঃ পািনঃ ডাকাতেও কপালকুন্ডলা কোন উত্তর দিল না। তখন কাপালিকের চক্ষ লোহিত, ভ্ৰযোেগ আকুঞ্চিত হইল। দ্বিতপদবিক্ষেপে গাহাভিমখে চলিল; S8V