পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/১৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ब७दकाश ब्रष्नावली আত্মীয় জনসমাজে এককালীন পরিত্যক্ত হইলেন। এ সময় নবকুমারের পিতা বত্তমান ছিলেন, তাঁহাকে সতরাং জাতিভ্রািট বৈবাহিকের সহিত জাতিভ্রস্টা পত্রিবধকে ত্যাগ করিতে হইল। আর নবকুমারের সহিত তাঁহার স্ত্রীর সাক্ষাৎ হইল না। স্বজনত্যক্ত ও সমাজচ্যুত হইয়া রামগোবিন্দ ঘোষাল অধিক দিন সবদেশে বাস করিতে পারিলেন না। এই কারণেও বটে, এবং রাজপ্ৰসাদে উচ্চপদস্থ হইবার আকাঙক্ষাও বটে, তিনি সপরিবারে রাজধানী রাজমহলে গিয়া বসতি করিতে লাগিলেন । ধৰ্ম্মমােন্তর গ্রহণ করিয়া তিনি সপরিবারে মহম্মদীয় নাম ধারণা করিয়াছিলেন। রাজমহলে যাওয়ার পরে শবেশরের বা বনিতার কি অবস্থা হইল, তাহা নবকুমারের জানিতে পারিবার কোন উপায় রহিল না এবং এ পৰ্য্যন্ত কখন কিছ জানিতেও পারিলেন না। নবকুমার বিরাগ্যবশতঃ আর দারপরিগ্রহ করিলেন না। এই জন্য বলিতেছি, নবকুমারের “এক সংসারও” নহে। অধিকারী এ সকল বক্তান্ত অবগত ছিলেন না। তিনি বিবেচনা করিলেন, “কুলীনের সন্তানের দই সংসারে আপত্তি কি ?” প্রকাশ্যে কহিলেন, “আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞাসা করিতে আসিয়াছিলাম। এই যে কন্যা আপনার প্রাণরক্ষা করিয়াছে—-এ পরিহিতাৰ্থ আত্মপ্রাণ নস্ট করিয়াছে। যে মহাপরিষের আশ্রয়ে ইহার বাস, তিনি অতি ভয়ঙ্করস্বভাব। তাঁহার নিকট প্রত্যাগমন করিলে, আপনার যে দশা ঘাঁটিতেছিল, ইহার সেই দশা ঘটিবে। ইহার কোন উপায় বিবেচনা করিতে পারেন। কি না ?” নবকুমার উঠিয়া বসিলেন। কহিলেন “আমিও সেই আশঙ্কা করিতেছিলাম। আপনি সকল অবগত আছেন—ইহার উপায় করন। আমার প্রাণদান করিলে যদি কোন প্রত্যুপকার হয়। —তবে তাহাতেও প্রস্তুত আছি। আমি এমন সঙ্কলপ করিতেছি যে, আমি সেই নরঘাতকের নিকট প্রত্যাগমন করিয়া আত্মসমপণ করি। তাহা হইলে ইহার রক্ষা হইবে।” অধিকারী হাস্য করিয়া কহিলেন, “তুমি বাতুল। ইহাতে কি ফল দাঁশিবে ? তোমারও প্রাণসংহার হইবে—অথচ ইহার প্রতি মহাপরিষের ক্ৰোধোপশম হইবে না। ইহার একমাত্র উপায় আছে।” নব। সে কি উপায় ? অধি। আপনার সহিত ইহার পলায়ন। কিন্তু সে অতি দাঘাট। আমার এখানে থাকিলে দই এক দিনের মধ্যে ধত হইবে। এ দেবালয়ে মহাপরিষের সব্বদা যাতায়াত। সতরাং কপালকুন্ডলার আদলেট অশভ দেখিতেছি। নবকুমার আগ্রহ সহকারে জিজ্ঞাসা করিলেন, “আমার সহিত পলায়ন দর্ঘািট কেন ?” অধি। এ কাহার কন্যা,-কোন কুলে জন্ম, তাহা আপনি কিছই জানেন না। কাহার পত্নী,-কি চরিত্রা, তাহা কিছই জানেন না! আপনি ইহাকে কি সঙিগনী করিবেন ? সঙ্গিনী করিয়া লইয়া গেলেও কি আপনি ইহাকে নিজগহে স্থান দিবেন ? আর যদি স্থান না দেন, তবে এ অনাথা কোথায় যাইবে ? নবকুমার ক্ষণেক চিন্তা করিয়া কহিলেন, “আমার প্রাণরক্ষয়িত্রীর জন্য কোন কাৰ্য্য আমার অসাধ্য নহে। ইনি আমার আত্মপরিবারস্থা হইয়া থাকিবেন।” অধি। ভাল। কিন্তু যখন আপনার আত্মীয়-স্বজন জিজ্ঞাসা করিবে যে, এ কাহার সত্ৰী, কি উত্তর দিবেন ? নবকুমার পনবার চিন্তা করিয়া কহিলেন, “আপনিই ইহার পরিচয় আমাকে দিন। আমি সেই পরিচয় সকলকে দিব।” অধি। ভাল। কিন্তু এই পক্ষান্তরের পথ যবেক যাবতী অনন্যসহায় হইয়া কি প্রকারে যাইবে ? লোকে দেখিয়া শনিয়া কি বলিবে ? আত্মীয়-স্বজনের নিকট কি বঝাইবে ? আর আমিও এই কন্যাকে মা বলিয়াছি, আমিই বা কি প্রকারে ইহাকে অজ্ঞাতচরিত্র যাবার সহিত একাকী দরদেশে পাঠাইয়া দিই? ঘটকরাজ ঘটকালিতে মন্দ নহেন। নবকুমার কহিলেন, “আপনি সঙ্গে আসন।" অধি। আমি সঙ্গে যাইব ? ভবানীর পজা কে করিবে ? নবকুমার ক্ষব্ধ হইয়া কহিলেন, “তবে কি কোন উপায় করিতে পারেন না ?” অধি। একমাত্র উপায় হইতে পারে,-সে। আপনার ঔদায্য গণের অপেক্ষা করে। SCO