পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/১৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কপালকুন্ডলা নব। সে কি ? আমি কিসে অস্বীকৃত ? কি উপায় বলান ? অধি। শনিন। ইনি ব্রাহ্মণকন্যা। ইহার বক্তান্ত আমি সবিশেষ অবগত আছি। ইনি বাল্যকালে দর্যন্ত খ্ৰীন্টিয়ান তস্কর কর্তৃক অপহৃত হইয়া যানভঙ্গপ্রযক্ত তাহাদিগের দ্বারা কালে এ সমদ্রতীরে ত্যক্ত হয়েন। সে সকল বক্তান্ত পশ্চাৎ ইহার নিকট আপনি সবিশেষ অবগত হইতে পরিবেন। কাপালিক ইহাকে প্রাপতি হইয়া আপন যোগসিদ্ধিমানসে প্রতিপালন করিয়াছিলেন। অচিরাং আত্মপ্রয়োজন সিদ্ধ করিতেন। ইনি এ পয্যন্ত অনড়া; ইহার চরিত্র পরম পবিত্র। আপনি ইহাকে বিবাহ করিয়া গহে লইয়া যান। কেহ কোন কথা বলিতে পরিবে না। আমি যথাশাস্ত্র বিবাহ দিব। নবকুমার শয্যা হইতে উঠিয়া দাঁড়াইলেন। অতি দ্রুতপাদবিক্ষেপে ইতস্ততঃ ভ্ৰমণ করিতে লাগিলেন। কোন উত্তর করিলেন না। অধিকারী কিয়ৎক্ষণ পরে কহিলেন, “আপনি এক্ষণে নিদ্রা যান। কল্য প্রত্যুষে আপনাকে আমি জাগরিত করিব। ইচ্ছা হয়, একাকী যাইবেন। আপনাকে মেদিনীপরের পথে রাখিয়া আসিব ।” এই বলিয়া অধিকারী বিদায় লইলেন। গমনকালে মনে মনে কহিলেন, “রাঢ়দেশের ঘটকালি কি ভুলিয়া গিয়ুছি না কি ?” নবম পরিচ্ছেদ ঃ দেবনিকেতনে “ক’ব । অলং রদিতেন; স্থিরা ভব, ইতঃ পন্থানমালোকয়।” শকুন্তলা প্রাতে অধিকারী নবকুমারের নিকট আসিলেন। দেখিলেন, এখনও নবকুমার শয়ন করেন। নাই। জিজ্ঞাসা করিলেন, “এখন কি কৰ্ত্তব্য ?” নবকুমার কহিলেন, “আজি হইতে কপালকুণডলা আমার ধৰ্ম্মম পত্নী। ইহার জন্য সংসার ত্যাগ করিতে হয়, তাহাও করিব। কে কন্যা সম্প্রদান করিবে ?” ঘটকচড়ামণির মখ হষোৎফল্প হইল। মনে মনে ভাবিলেন, “এত দিনে জগদীশবার কৃপায় আমার কপালিনীর বঝি গতি হইল।” প্রকাশ্যে বলিলেন, “আমি সম্প্রদান করিব।” অধিকারী নিজ শয়নকক্ষমধ্যে পানঃপ্রবেশ করিলেন। একটি খণ্ডগীর মধ্যে কয়েক খন্ড অতি জীণ তালপত্র ছিল। তাহাতে তাঁহার তিথি নক্ষত্ৰাদি নিদিন্দািট থাকিত। তৎসমদায় সবিশেষ সমালোচনা করিয়া আসিয়া কহিলেন, “আজি যদিও বৈবাহিক দিন নহে-তথাচ বিবাহে কোন বিঘা নাই। গোধলিলগেন কন্যা সম্প্রদান করিব। তুমি অদ্য উপবাস করিয়া থাকিবে মাত্র। কৌলিক আচরণ সকল বাটী। গিয়া করাই ও। এক দিনের জন্য তোমাদিগকে ল্যুকাইয়া রাখিতে পারি, এমন সথান আছে। আজি যদি তিনি আসেন, তবে তোমাদিগের সন্ধান পাইবেন না। পরে বিবাহন্তে কালি প্রাতে সপত্নীক বাটী যাইও ।” নবকুমার ইহাতে সম্মত হইলেন। এ অবস্থায় যত দীর সম্পভবে, তত দীর যথাশাস্ত্ৰ কাৰ্য্য হইল। গোধলিলগেন নবকুমারের সহিত কাপালিকাপালিতা সন্ন্যাসিনীর বিবাহ হইল। কােপালিকের কোন সংবাদ নাই। পরদিন প্রত্যুষে তিন জনে যাত্রর উদ্যোগ করিতে লাগিলেন। অধিকারী মেদিনীপরের পথ পয্যন্ত তাঁহাদিগকে রাখিয়া আসিবেন। যাত্রাকালে কপালকুণডলা কালীপ্রণামাথ গেলেন। ভক্তিভাবে প্ৰণাম করিয়া, পশুপপাত্ৰ হইতে একটি অভিন্ন বিলম্বাবপত্র প্রতিমার পাদোপরি সন্থাপিত করিয়৷ তৎপ্রতি নিরীক্ষণ করিয়া রহিলেন । পত্রটি পড়িয়া গেল। কপালকুন্ডলা নিতান্ত ভক্তিপরায়ণা। বিলবদল প্রতিমাচরণ চু্যত হইল দেখিয়া ভীত হইলেন; ——এবং অধিকারীকে সংবাদ দিলেন। অধিকারীও বিষগ্ন হইলেন। কহিলেন, “এখন নিরাপায়। এখন পতিমাত্র তোমার ধৰ্ম্ম। পতি শামশানে গেলে তোমাকে সঙ্গে সঙেগ যাইতে হইবে। অতএব নিঃশবেদ চল ।” সকলে নিঃশব্দে চলিলেন। অনেক বেলা হইলে মেদিনীপরের পথে আসিয়া উপস্থিত SS