পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙিকমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (জন্ম : ২৬শেষ্ঠনি ১৮৩৮ ; মােত্যু : ৮ই এপ্রিল ১৮৯৪) শ্রেষ্ঠতম ঔপন্যাসিক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের নাম রাঢ়ে বঙ্গে কে না। শনিয়াছে ,ৈ বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের পরিপন্টিসাধনে এবং বাঙালীর জাতীয় চরিত্র নিয়ন্ত্রণে বঙ্কিমচন্দ্রের দান অফুরন্ত। বঙ্কিমচন্দ্র জীবদ্দশায় সাহিত্যস্রস্টা ঔপন্যাসিক রাপে সমধিক প্রসিদ্ধি লাভ করিয়াছিলেন, কিন্তু মাতুর দশ-বার বৎসরের মধ্যেই জাতীয়তার উদগীতা রাপেই তিনীি সমধিক পজিত হইতে থাকেন। তিনি ছিলেন সরকারী কৰ্মচারী—আরম্ভাবধি অবসরকাল পূৰ্য্যন্ত ডেপটি ও ডেপটি কলেক্টর। তিনি কৰ্ম্ম ব্যাপদেশে উচ্চ-নীচ, শিক্ষিত-অশিক্ষিত নানা শ্রেণীর লোকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে পরিচিত হইবার সংযোগ পাইয়াছেন, আবার উপরিতন ইংরেজ কৰ্ম্মচারীদের আচার-আচরণ এবং বিচারপদ্ধতিও সম্যক অবগত হইয়াছিলেন। বহিরাগত চাপ ও ভিতরকার ত্রটি দরে করিয়া জাতীয় চরিত্রকে সংহত করিবার উদ্দেশ্যে বঙ্কিমচন্দ্র লেখনী পরিচালনা করেন। জাতির জীবনে তাঁহার ভাবধারা অন্য প্রবিন্স্ট হইয়া ইহাকে জয়যন্ত করিয়া তুলিয়াছে। বংশ-পরিচয় ; বঙ্কিমচন্দ্রের পত্নবর্ণপরিষদের নিবাস হগলী জেলার অন্তর্গত দেশম খো গ্রামে। তাঁহার প্রপিতামহ রামহরি চট্টোপাধ্যায় মাতামহের সম্পত্তি পাইয়া চব্বিশ পরগণার কাঁটালপাড়া পল্লীতে আসেন। রামহরির পৌত্র যাদবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। বঙিকমচন্দ্ৰ যাদবচন্দ্রের তৃতীয় পত্র। তাঁহার মাতামহ বিখ্যাত পণ্ডিত ভবানীচরণ বিদ্যাভূষণ। বঙ্কিমচন্দ্রের অন্য তিন ভ্রাতা যথাক্ৰমে-জ্যেষ্ঠ শ্যামাচরণ, মধ্যম সঞ্জীবচন্দ্র ও কনিষ্ঠ পাণচন্দ্র। বঙ্কিমচন্দ্র ১৮৩৮ খ্রীস্টাব্দের ২৬শে জন (১৩ই আষাঢ়, ১২৪৫) কাঁটালপাড়ায় ভূমিত্ঠ হন। তখন তাঁহার পিতা সবেমাত্র নিমক মহালের কৰ্ম্ম হইতে উন্নীত হইয়া মেদিনীপরে ডেপটি কলেক্টর পদে নিযক্ত হইয়াছিলেন। পিতা যাদবচন্দ্রের জীবনও বেশ বৈচিত্রাপণ। তিনি ফাসী ও ইংরেজীতে শিক্ষালাভ করিযাছিলেন। কৈশোরেই কটকে নিমক মহালে জ্যোিঠ ভ্রাতার কম সিথানে কায্য গ্রহণ করেনস্বীয় সততাগণে তিনি এ বিভাগে বিশেষ সনাম অজ্ঞজন করিয়াছিলেন। এই সময়ে একবার তাঁহার জীবন বিপন্ন হইয়া এক সন্ন্যাসীর কৃপায় তিনি বিপন্মান্ত হন। তিনি তাঁহার নিকট দীক্ষা গ্রহণ করেন। সন্ন্যাসী সম্প্রদায়ের প্রতি বঙ্কিমচন্দ্রের আকর্ষণ পিতার বিপন্মান্তির কাহিনী হইতেই আসিয়াছিল। শািন্ধ আকর্ষণ বলিলেও ভুল হইবে। পিতার সন্ন্যাসী-প্রীতি ও জীবন-যাত্রা প্রণালীদবারা বঙিকমচন্দ্র এত প্রভাবান্বিত হইয়াছিলেন যে, সন্ন্যাসধৰ্ম্মমরি অলৌকিকত্বে তাঁহার গভীর প্রত্যয় জন্মে। তাঁহার উপন্যাসাবলীতে সন্ন্যাসীর আবিভােব ইহার প্রকৃভট প্রমাণ। বালোর শিক্ষা : জন্মাবধি প্রথম ছয় বৎসরকােল বঙিকমচন্দ্রকে কাঁটালপাড়ায় থাকির্তে হয়। এই বয়সেই তাঁহার অসামান্য মেধার পরিচয় পাওয়া গিয়াছিল। কনিষ্পাঠ সহোদর পণচন্দ্র লিখিয়াছেন, “শনিয়াছি বঙ্কিমচন্দ্র একদিনে বাঙ্গালা বর্ণমালা আয়ত্ত করিয়াছিলেন।’ তিনি আরও বলেন যে, তাঁহাদের পিতৃদেব বঙ্কিমচন্দ্রের অসামান্য প্রতিভা বুঝিতে পারিয়া তাঁহার শিক্ষা সম্বন্ধে বিশেষ যত্নবান ও সতক ছিলেন। কুল-পরোহিত বিশ্বম্ভর ভট্টাচায্যের নিকট পাঁচ বৎসর বয়সে বণ্ডিকমচন্দ্রের হাতেখড়ি হয়। কিন্তু গ্রামের পাঠশালায় তিনি কখনও যান নাই। গ্রামা পাঠশালার গাের মহাশয় রামপ্রাণ সরকার বাড়ীতে তাঁহার শিক্ষার ভার লয়েন। বঙ্কিমচন্দ্র মপ্রাণের শিক্ষায় তেমন উপকৃত হন নাই। পরবত্তী কালে তিনি লিখিয়াছিলেন, “সৌভাগ্যআিম আমরা আট-দশ মাসে এই মহাত্মার হস্ত হইতে মন্তিলাভ করিয়া মেদিনীপরে গেলাম।” মেদিনীপরেই বঙ্কিমচন্দ্রের প্রকৃত শিক্ষা আরম্ভ হইল। পিতা যাদবচন্দ্র সেখানে ডেপটি কলেক্টর। তাঁহার সঙেগ পদস্থ ইংরেজদের সম্ভবতঃই পরিচয় ঘটে। ১৮৪৪ খ্রীসন্টাব্দে বঙ্কিমচন্দ্র মেদিনীপরে নীত হইলে নাম আচরণ ও নিরীহ প্রকৃতির জন্য তিনি তাঁহাদের অতি প্রিয় হইয়া উঠেন। তখন মেদিনীপর ইংরেজী স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন এফ. টীড নামক একজন ইংরেজ। তাঁহার পরামশে যাদবচন্দ্র বঙ্কিমকে ইংরেজী শিক্ষার্থ তাঁহার বিদ্যালয়ে ভ্ৰষ্ঠ দাঁ কলি, “বন্দে মাতরম"-মন্ত্রের