পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/১৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙিকম রচনাবলী সন্ধ্যার পরে গাহকৰ্ম্মম কতক কতক সমাপন করিয়া কপালকুন্ডলা । যাত্রা করিলেন। কপালকুন্ডলা যাত্রাকালে শয়নাগারে প্রদীপটি উত্তজবল করিয়া গেলেন। তিনি যেমন কক্ষ হইতে বাহির হইলেন, অমনি গাহের প্রদীপ নিবিয়া গেল। যাত্রাকালে কপালকুন্ডলা এক কথা বিস্মত হইলেন। ব্রাহ্মণবেশী কোন সথানে সাক্ষাৎ করিতে লিখিয়াছিলেন ? এই জন্য পনেকবার লিপিপাঠের আবশ্যক হইল। গহে প্রত্যাবৰ্ত্তন করিয়া যে সস্থানে প্রাতে লিপি রাখিয়াছিলেন, সে সােথান অন্বেষণ করিলেন, সে সন্থানে লিপি পাইলেন না। সমরণ হইল যে, কেশবন্ধন সময়ে ঐ লিপি সঙেগ রাখিবার জন্য কবরীমধ্যে বিন্যস্ত করিয়াছিলেন। অতএব কবরীমধ্যে অঙ্গলি দিয়া সন্ধান করিলেন। আওগলিতে লিপি সপশ না হওয়াতে কবরী আলীলায়িত করিলেন, তথাপি সে লিপি পাইলেন না। তখন গাহের অন্যান্য স্থানে তত্ত্ব করিলেন। কোথাও না পাইয়া পরিশেষে পৰ্ব্ববসিাক্ষাৎসস্থানেই সাক্ষাৎ সম্ভব সিন্ধান্ত করিয়া পান যাত্ৰা করিলেন। অনবকাশপ্রযক্ত সে বিশাল কেশরাশি পািনবিন্যস্ত করিতে পারেন। নাই, অতএব আজি কপালকুন্ডলা অনড়াকালের মত কেশমন্ডলমধ্যবত্তিানী হইয়া চলিলেন। পঞ্চম পরিচ্ছেদ ঃ গহন্দীবারে 'Stand you awhile apart, Confine yourself but in a patient list.” Othello যখন সন্ধ্যার প্রাক্কালে কপালকুন্ডলা গহকায্যে ব্যাপােতা ছিলেন, তখন লিপি কবরীবন্ধনচু্যত হইয়া ভূমিতলে পড়িয়া গিয়াছিল। কপালকুন্ডলা তাহা জানিতে পারেন নাই। নবকুমার তােহা দেখিয়াছিলেন। কবরী হইতে পত্র খসিয়া পড়িল দেখিয়া নবকুমার বিস্মিত হইলেন। কপালকুন্ডলা কাৰ্য্যান্তরে গেলে লিপি তুলিয়া বাহিরে গিয়া পাঠ করিলেন। সে লিপি পাঠ করিয়া একই সিদ্ধান্ত সম্পভবে। “যে কথা কাল শনিতে চাহিয়াছিলে, সে কথা শনিবে।" সে কি ? প্রণয়-কথা ? ব্রাহ্মণবেশী মণিময়ীর উপপতি ? যে ব্যক্তি পৰ্ব্বারাত্রের বত্তান্ত অনবগত, তাহার পক্ষে দিবতীয় সিদ্ধান্ত সম্পভাবে না। পতিব্ৰতা, সবামীর সহগমনকালে, অথবা অন্য কারণে, যখন কেহ জীবিতে চিন্তারোহণ করিয়া চিতায় অগিন সংলগন করে, তখন প্রথমে ধামরাশি আসিয়া চতুদিকে বেস্টন করে ; দন্টিলোপ করে ; অন্ধকার করে ; পরে ক্ৰমে কাশুঠরাশি জীবলিতে আরম্ভ হইলে, প্রথমে নিমন হইতে সপ'জিহবার ন্যায়। দই একটি শিখা আসিয়া অঙ্গের স্থানে সথানে দংশন করে, পরে সশব্দে অগিনজবালা চতুদিক হইতে আসিয়া বেস্টন করিয়া অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ব্যাপিতে থাকে; শেষে প্রচন্ড রবে। অগিনরাশি গগনমণ্ডল জব্বালাময় করিয়া মস্তক অতিক্রমপাকবািক ভস্মরাশি করিয়া ফেলে। নবকুমারের লিপি পাঠ করিয়া সেইরাপ হইল। প্রথমে বঝিতে পারিলেন না ; পরে সংশয়, পরে নিশ্চয়তা, শেষে জবালা। মনষ্যেহাদয় ক্লেশাধিক্য বা সাখাধিক্য একবারে গ্রহণ করিতে পারে না, ক্ৰমে ক্ৰমে গ্রহণ করে। নবকুমারকে প্রথমে ধামরাশি বেস্টন করিল; পরে বহ্নিশিখা হৃদয় তাপিত করিতে লাগিল; শেষে বহিরাশিতে হৃদয় ভস্মীভূত হইতে লাগিল। ইতিপকেবই নবকুমার দেখিয়াছিলেন যে, কপালকুণ্ডলা কোন কোন বিষয়ে তাঁহার অবাধ্য হইয়া, হন। বিশেষ কপালকুন্ডলা তাঁহাঁর নিষেধ সত্ত্বেও যখন যেখানে ইচ্ছা, সেখানে একাকিনী যাইতেন; যাহার তাহার সহিত যথেচ্ছ আচরণ করিতেন; অধিকন্তু তাঁহার বাক্য হেলন করিয়া নিশীথে একাকিনী বনভ্ৰমণ করিতেন। আর কেহ ইহাতে সন্দিহান হইত, কিন্তু নবকুমারের হৃদয়ে কপালকুণডলার প্রতি সন্দেহ উত্থাপিত হইলে চিরানিবায্য বশিচকদংশনবৎ হইবে জানিয়া, তিনি একদিনের তরে সন্দেহকে স্থান দান করেন নাই। আদ্যও সন্দেহকে স্থান দিতেন না, কিন্তু অদ্য সন্দেহ নহে, প্রতীতি আসিয়া উপস্থিত হইয়াছে। যন্ত্রণার প্রথম বেগের শমতা হইলে নবকুমার নীরবে বসিয়া অনেকক্ষণ রোদন করিলেন। রোদন করিয়া কিছ, সস্থির হইলেন। তখন তিনি কিণ্ডকৰ্ত্তব্য সম্পবন্ধে স্থিরপ্রতিজ্ঞ হইলেন। আজি তিনি কপালকুণডলাকে কিছর বালিবেন না। কপালকুন্ডলা যখন সন্ধ্যার সময় বনাভিমখে N O