পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/১৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যাত্রা করিবেন, তখন গোপনে তাঁহার অনসরণ করিবেন, কপালকুন্ডলার মহাপাপ প্রত্যক্ষীভূত করিবেন, তাহার পর এ জীবন বিসঙ্জন করিবেন। কপালকুন্ডলাকে কিছ বলিবেন না, আপনার প্রাণসংহার করিবেন। না করিয়া কি করিবেন ?—এ জীবনের দািব্বহ ভার বহিতে তাঁহার শক্তি হইবে না। এই স্থির করিয়া কপালকুন্ডলার বহি গমন প্রতীক্ষায় তিনি খড়াক্কীদবারের প্রতি দটি করিয়া রহিলেন। কপালকুন্ডলা বহিগ তা হইয়া কিছ দীর গেলে নবকুমারও বহি গৰ্ভত হইতেছিলেন ; এমন সময়ে কপালকুণডালা লিপির জন্য প্রত্যাবৰ্ত্তন করিলেন, দেখিয়া নবকুমারও সরিয়া গেলেন। শেষে কপালকুন্ডলা পনেকবার বাহির হইয়া কিছ দরে গমন করিলে নবকুমার আবার তদনগমনে বাহির হইতেছিলেন, এমত সময়ে দেখিলেন, দবারদেশ আবিত করিয়া এক দীঘাকার পরিষ দন্ডাযমান রহিয়াছে। কে সে ব্যক্তি, কেন দাঁড়াইয়া, জানিতে নবকুমারের কিছমাত্র ইচ্ছা হইল না। তাহার প্রতি চাহিয়াও দেখিলেন না। কেবল কপালকুণডলার প্রতি দণ্ডিট রাখিবার জন্য ব্যস্ত। অতএব পথমক্তির জন্য আগন্তুকের বক্ষে হসন্ত দিয়া তাড়িত করিলেন; কিন্তু তাহাকে সরাইতে পারিলেন না। এ নবকুমার কহিলেন, “কে তুমি ? দীর হও—আমার পথ ছাড়া।” আগন্তুক কহিল, “কে আমি, তুমি কি চেন না ?” শব্দ সমদ্রনাদবৎ কণে লাগিল। নবকুমার চাহিয়া দেখিলেন ; দেখিলেন, সে পৰ্ব্ব পরিচিত জটাজটধারী কাপালিক। নবকুমাব চমকিয়া উঠিলেন ; কিন্তু ভীত হইলেন না। সহসা তাঁহার মাখ প্রফল্পে হইল— কহিলেন, “কপালকৃশন্ডলা কি তোমার সহিত সাক্ষাতে যাইতেছে ?” কাপালিক কহিল, “না।” জবালিতমাত্র আশার প্রদীপ তখনই নিৰ্ব্ববাণ হওয়াতে নবকুমারের মাখ পৰ্ব্বব্যাবৎ মেঘময় অন্ধকারাবিস্ট হইল। কহিলেন, “তবে তুমি পথ মন্ত কর।” কাপালিক কহিল, ‘পথ মক্ত করিতেছি, কিন্তু তোমার সহিত আমার কিছ কথা আছে— তাগ্রে শ্রবণ করে ৷ ” নবকুমার কহিলেন, “তোমার সহিত আমার কি কথা ? তুমি আবার আমার প্রাণনাশের জন্য আসিয়াছ ত প্ৰাণ গ্রহণ করা, আমি এবার কোন ব্যাঘাত করিব না। তুমি এক্ষণে অপেক্ষা কর, আমি আসিতেছি। কেন আমি দেবতুভিটর জন্য শরীর না দিলাম ? এক্ষণে তাহার ফলভোগ করিলাম। যে আমাকে রক্ষা করিয়াছিল, সেই আমাকে নস্ট করিল। কাপালিক! আমাকে এবার অবিশ্ববাস কবিও না। আমি এখনই আসিয়া তোমাকে আত্মসমপণ করিব।” কােপালিক কহিল, “ আমি তোমার প্রাণবধাথ আসি নাই। ভবানীর তাহা ইচ্ছা নহে। আমি যাহা করিতে আসিয়াছি, তাহা তোমার অননুমোদিত হইবে। বাটীর ভিতরে চল, আমি যাহা বলি, তাহা শ্রবণ কর।” নবকুমার কহিলেন, “এক্ষণে নহে। সময়ান্তরে তাহা শ্রবণ করিব, তুমি এখন অপেক্ষা কর; আমার বিশেষ প্রয়োজন আছে—সাধন করিয়া আসিতেছি।” কাপালিক কহিল, “বৎস! আমি সকলই অবগত আছি; তুমি সেই গাপিঠার অনসরণ করিবে; সে যথায় যাইবে, আমি তাহা অবগত আছি। আমি তোমাকে সে সন্থানে সমভিব্যাহারে করিয়া লইয়া যাইব । যাহা দেখিতে চাহ, দেখাইব—এক্ষণে আমার কথা শ্রবণ করা। কোন ভয় করিও না।” নবকুমার কহিলেন, “আর তোমাকে আমার কোন ভয় নাই। আইস।” এই বলিয়া নবকুমার কােপালিককে গহ্যাভ্যন্তরে লইয়া গিয়া আসন দিলেন এবং স্বয়ংও উপবেশন করিষা বলিলেন, “বল ।” > ザン