পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/১৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বণ্ডিকম রচনাবলী আত্মকম্পমাদোষে সেই প্রত্যাশা সফলীকৃত না হয়, তবেই দঃখ বলিয়া উচ্চ কলরব আরম্ভ করি। তবেই দঃখ নিয়ম নহে, সিদ্ধান্ত হইল ; নিয়মের ব্যতিক্রম মাত্ৰ। তোমার আমার সব্বত্ৰ সখি। সেই সখে আমরা সংসারমধ্যে বদ্ধমােল; ছাড়িতে চাহি না। কিন্তু এ সংসার-বন্ধনে প্রণয় প্রধান রজজ। কপালকুণডলার সে বন্ধন ছিল না—কোন বন্ধনই ছিল না। তবে কপালকুণ্ডলাকে কে রাখে ? যাহার বন্ধন নাই, তাহারই অপ্রতিহত বেগ। গিরিশিখর হইতে নিঝরিণী নামিলে, কে তাহার গতি রোধ করে ? একবার বায় তাড়িত হইলে কে তাহার সঞ্চার নিবারণ করে ? কপালকুণডলার চিত্ত চঞ্চল হইলে কে তাহার স্থিতিস্থাপন করিবে ? নবীন করিকারভ মাতিলে কে তাহকে শান্ত করিবে ? কপালকুন্ডলা আপন চিত্তকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “কেনই বা এ শরীর জগদীশবরীর চরণে সমপণ না করিব ? পঞ্চভুত লইয়া কি হইবে ?” প্রশন করিতেছিলেন, অথচ কোন নিশ্চিত উত্তর দিতে পারিতেছিলেন না। সংসারের অন্য কোন বন্ধন না থাকিলেও পঞ্চভূতের এক বন্ধন আছে। কপালকৃশন্ডলা অধোবদনে চলিতে লাগিলেন। যখন মনষ্যেহাদয় কোন উৎকট ভাবে আচ্ছন্ন হয়, চিন্তার একাগ্রতায় বাহ্য সন্টির প্রতি লক্ষ্য থাকে না, তখন অনৈসর্গিক পদাৰ্থও প্রত্যক্ষীভূত বলিয়া বোধ হয়। কপালকুন্ডলার। সেই অবস্থা হইয়াছিল। যেন উদ্ধৰ্ব হইতে তাঁহার কর্ণকুহরে। এই শব্দ প্রবেশ করিল, “বৎস্যে! আমি পথ দেখাইতেছি।” কপালকুণডলা চকিতের ন্যায় উদ্ধৰ্ব্বদন্ডিট করিলেন। দেখিলেন, যেন আকাশমন্ডলে নবনীরদ নিন্দিত মৰ্ত্তিা! গলবিলম্বিত নরকপালমালা হইতে শোণিতস্রতি হইতেছে ; কটিমন্ডল বেড়িয়া নরকররাজি দলিতেছে—বাম করে নরকপাল--অঙ্গে রধিরধারা, ললাটে বিষমোজািজবুলজীবালাবিভাসিতলোচনপ্রান্তে বালশশী সংশোভিত ! যেন ভৈরবী দক্ষিণ হসন্ত উত্তোলন করিয়া কপালকণীডলাকে ডাকিতেছেন। কপালকুন্ডলা উদ্ধািমখী হইয়া চলিলেন। সেই নবকাদম্বিনীসন্নিভ রােপ আকাশমাগে তাঁহার আগে আগে চলিল। কখনও কপালমালিনীর অবয়ব মেঘে লক্কোয়িত হয়, কখনও নয়নপথে সােপস্ট বিকশিত হয়। কপালকুন্ডলা তাঁহার প্রতি চাহিয়া চলিলেন। নবকুমার বা কাপালিক এ সব কিছই দেখেন নাই। নবকুমার সােয়ােগরলপ্রজবলিত হৃদয়— কপালকুন্ডলার ধীর পদক্ষেপে অসহিষ্ণ হইয়া সঙ্গীকে কহিলেন, “কােপালিক!” কাপালিক কহিল, “কি ?” “পানীয়ং দেহি মে | ” কাপালিক পনেরপি তাঁহাকে সারা পান করাইল । নবকুমার কহিলেন, “আর বিলম্ব কি ?” কাপালিক উত্তর করিল, ”আর বিলম্ব কি ?” নবকুমার ভীমনাদে ডাকিলেন, “কপালকুণডলে ।” কপালকুণডলা শনিয়া চমকিতা হইলেন। ইদানীন্তন কেহ তাঁহাকে কপালকুন্ডলা বলিয়া ডাকিত না। তিনি মািখ ফিরাইয়া দাঁড়াইলেন। নবকুমার ও কাপালিক তাঁহার সম্মখে আসিলেন। কপালকুণডালা প্রথমে তাঁহাদিগকে চিনিতে পাবিলেন না—কহিলেন, “তোমরা কে ? যমদত ?” পরীক্ষণেই চিনিতে পারিয়াই কহিলেন, “না না পিতা, তুমি কি আমায় বলি দিতে আসিয়াছ ?” নবকুমার দঢ়মটিতে কপালকুণডলার হস্তধারণ করিলেন। কােপালিক করণী:দ্র মধ্যময় “বংসে! আমাদিগের সঙ্গে আইসি।” এই বলিযা কাপালিক শমশােনাভিমখে পথ দেখাইয়া চলিলেন। কপালকুন্ডলা আকাশে দন্টি নিক্ষেপ করিলেন ; যথায় গগনবিহারিণী ভয়ঙ্করী দেখিয়াছিলেন, সেই দিকে চাহিলেন; দেখিলেন, রণরঙ্গিণী খল খল হাসিতেছে; এক দীঘ ত্রিশলে করে ধরিয়া কাপালিকগত পথপ্রতি সঙ্কেত করিতেছে। কপালকুন্ডলা আদালেটবিমােঢ়ার ন্যান্য বিনা বাক্যব্যয়ে কাপালিকের অনসরণ করিলেন। নবকুমার পকবাবৎ দািঢ়ম, ভিটতে তাঁহার হস্তধারণ করিয়া চলিলেন। > ザ じ T 5