পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/১৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কপালকুণডলা নবম পরিচ্ছেদ ঃ প্রেতিভূমে “বপষো করণোজঝিতেন সা নিপতন্তী পতিমপ্যপাতিয়াৎ। নন, তৈলনিষেকবিন্দনা সহ দীপতাচ্চিার পৈতি —রঘ,বংশ চন্দ্রমা অস্তমিত হইল। বিশবমন্ডল অন্ধকারে পরিপািণ হইল। কাপালিক যথায় আপন পজাসস্থান সংস্থাপন করিয়াছিলেন, তথায় কপালকুন্ডলাকে লইয়া গেলেন। সে গঙ্গাতীরে এক বহিৎ সৈকতভূমি। তাহারই সম্মখে আরও বহত্তর দ্বিতীয় এক খন্ড সিকতাময় স্থান। সেই সৈকতে শামশানভূমি। উভয় সৈকতমধ্যে জলোচ্ছবাসকালে অলপ জল থাকে, ভাঁটার সময়ে জল থাকে না। এক্ষণে জল ছিল না। শামশানভূমির যে মািখ গঙগাসম্পমখীন, সেই মািখ অত্যুচ্চ ; জলে অবতরণ করিতে গেলে একেবারে উচ্চ হইতে অগাধ জলে পড়িতে হয়। তাহাতে আবার অবিরতবায়তাড়িত তরঙ্গাভিঘাতে উপকালতল ক্ষয়িত হইয়াছিল; কখনও কখনও মাত্তিকাখন্ড স্থানচ্যুত হইয়া অগাধ জলে পড়িয়া যাইত। পাজাসস্থানে দীপ নাই—কাঠেখন্ড মাত্রে অগিন জীবলিতেছিল, তুন্দালোকে অতি অন্সপল্‌টদাতািট শমশানভূমি আরও ভীষণ দেখাইতেছিল। নিকটে পজা, হোম, বলি প্রভৃতির সমগ্র আয়োজন ছিল। বিশাল তরঙ্গিণী হৃদয় অন্ধকারে বিস্মত হইয়া রহিয়াছে।। চৈত্র মাসের বায় অপ্রতিহত বেগে গঙ্গাহৃদয়ে প্রধাবিত হইতেছিল; তাহার কারণে তরঙ্গাভিঘাতজনিত কলকল রব গগন ব্যাপাত করিতেছিল। শমশানভূমিতে শব্বভুক। পশ্যগণ। কক্কাশকণ্ঠে কাচিৎ ধবনি করিতেছিল। কাপালিক নবকুমার ও কপালকুণডলাকে উপযক্ত স্থানে কুশাসনে উপবেশন করাইয়া তন্ত্রাদির বিধানানসারে পাজারম্ভ করিলেন। উপযক্ত সময়ে নবকুমারের প্রতি আদেশ করিলেন যে, কপালকুণডলাকে স্নান করাইয়া আন । নবকুমার কপালকুণডলার। হসন্ত ধারণ করিয়া শমশানভূমির উপর দিয়া স্নান করাইতে লইয়া চলিলেন। তাঁহাদিগের চরণে অসিথ ফাটিতে লাগিল। নবকুমারের পদের আঘাতে একটা জলপািণ শমশান-কলস ভগন হইয়া গেল। তাহার নিকটেই শব পড়িয়া ছিল—হতভাগার কেহ সৎকার করে নাই। দইজনেরই তাহাতে পদসপশ হইল। কপালকুণডলা তাহাকে বেড়িয়া গেলেন, নবকুমার তাহাকে চরণে দলিত করিয়া গেলেন। চতুদিক বেড়িয়া শবমাংসভুক পাশ সকল ফিরিতেছিল; মনষ্যে দাই জনের আগমনে উচ্চকণ্ঠে রব করিতে লাগিল, কেহ আক্ৰমণ করিতে আসিল, কেহ বা পদশব্দ করিয়া চলিয়া গেল। কপালকুণডর্লা দেখিলেন, নবকুমারের হস্ত কাঁপিতেছে; কপালকুণডলা স্বয়ং নিভীক, নিঅকম্প । কপালকুন্ডলা জিজ্ঞাসা করিলেন, “ভয় পাইতেছ?” নবকুমারের মদিরার মোহ ক্ৰমে মন্দীভূত হইয়া আসিতেছিল। অতি গম্ভীর সবরে নবকুমার “ভয়ে, মণিমায় ? তাত 1 নহে।” কপালকুন্ডলা জিজ্ঞাসা করিলেন, “তবে কাঁপিতেছ। কেন ?” এই প্রশন কপালকুন্ডলা যে সবরে করিলেন, তাহা কেবল রমণীকণ্ঠেই সম্পভবে। যখন রমণী পরদঃখে গালিয়া যায়, কেবল তখনই রমণীকন্ঠে সে সবার সম্পভবে। কে জানিত যে, আসন্ন কালে শমশানে আসিয়া কপালকুণডলার কন্ঠ হইতে এ সম্বর নিগতি হইবে ? নবকুমার কহিলেন, “ভয়ে নহে। কাঁদিতে পারিতেছি না, এই ক্ৰোধে কাঁপিতেছি।” কপালকুন্ডলা জিজ্ঞাসিলেন, “কাঁদিবে কেন ?" আবার সেই কণঠ ! নবকুমার কহিলেন, “কাঁদিব কেন ? তুমি কি জানিবে মাময়ি! তুমি ত কখন রােপ দেখিয়া উন্মত্ত হও নাই—” বলিতে বলতে নবকুমারের কন্ঠস্বর যাতনায় রুদ্ধ হইয়া আসিতে লাগিল । “তুমি ত কখনও আপনার হৃৎপিন্ড আপনি ছেদন করিয়া শমশানে ফেলিতে আইস নাই।" এই বলিয়া সহসা নবকুমার চীৎকার করিয়া রোদন করিতে করিতে কপালকুন্ডলার পদতলে আছাড়িয়া পড়িলেন। “মন্ময়ি!--কপালকুড়ালে! আমায় রক্ষা কর। এই তোমার পায়ে লটাইতেছি——একবার বল যে, তুমি অবিশ্ববাসিনী নও—একবার বল, আমি তোমায় হৃদয়ে তুলিয়া গহে লইয়া যাই।” S Q