পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/২০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভাঙিগল হৃদয়পদ্ম তার বেগভরে। ডুবিল অতলে জলে, মণিালিনী মরে ৷ কেমন গিরিজায়া, গীত শিখিতে পরিবে ?” গিরি। তা পারিব। চক্ষের জলট,কু শািন্ধ কি শিখিব ? ম। না। এ ব্যবসায়ে আমার লাভের মধ্যে ঐটকু ৷ মণিালিনী গিরিজায়াকে এই কবিতাগলি অভ্যাস করাইতেছিলেন, এমন সময়ে মণিমালিনীর পদধবনি শনিতে পাইলেন। মণিমালিনী তাঁহার স্নেহশালিনী সখী—সকলই জানিয়াছিলেন। তথাপি মণিমালিনী পিতৃপ্রতিজ্ঞা ভঙ্গের সহায়তা করিবে, এরপ তাঁহার বিশদ্বাস জন্মিল না। অতএব তিনি এ সকল কথা সখীর নিকট গোপনে যত্নবতী হইয়া গিরিজায়াকে কহিলেন, “আজি আর কাজ নাই; বেণের সঙ্গে সাক্ষাৎ করিও । তোমার বোঝা কাল আবার অ্যানিও। যদি কিনিবার কোন সামগ্রী থাকে, তবে তােহা আমি কিনিব।” গিরিজায়া বিদায় হইল। মণিালিনী যে তাহাকে পারিতোষিক দিবার অভিপ্ৰায় করিয়াছিলেন, তাহা ভুলিয়া গিয়াছিলেন। গিরিজায়া কতিপয় পদ গমন করিলে মণিমালিনী কিছ: চাউল, একছড়া কলা, একখানি পরাতন বস্ত্র, আঁর কিছ, কড়ি আনিয়া গিরিজায়াকে দিলেন। আর মণালিনীও একখানি পরাতন বস্ত্র দিতে গেলেন। দিবার সমযে, উহার কাণে কাণে কহিলেন, “আমার ধৈয্য রহিতেছে না, কালি পৰ্য্যন্ত অপেক্ষা করিতে পারিব না; তুমি আজ বাত্রে প্রহরেকের সময় আসিয়া এই গাহের উত্তর দিকে প্রাচীরমহলে অবস্থিতি করিও; তথায় আমার সাক্ষাৎ পাইবে । তোমার বণিক যদি আসেন, সঙ্গে আনিও ।” গিরিজায়া কহিল, “ববিয়াছি, আমি নিশ্চিত আসিব ।” মণিালিনী মণিমালিনীর নিকট প্রত্যাগতা হইলে মণিমালিনী কহিলেন, “সই, ভিখারিণীকে কাণে কাণে কি বলিতেছিলে ?” মণিালিনী কহিলেন, “কি বলিব সই— সই মনের কথা সই, সই মনের কথা সই-- কাণে কাণে কি কথাটি ব’লে দিলি ওই ৷ সই ফিরে কােনা সই, সই ফিরে ক'না, সই। সই কথা কোস কথা কব, নইলে কারো নই।” মণিমালিনী হাসিয়া কাঁহলেন, “হ’লি কি লো সই ?” মণিালিনী কহিলেন, “তোমারই সই।" চতুৰ্থ পরিচ্ছেদ ঃ দন্তী লক্ষণাবতী নগবীর প্রদেশান্তরে সববন্ধন বণিকের বাটীতে হেমচন্দ্র অবস্থিতি করিতেছিলেন। বণিকের গহন্দীবারে এক অশোকবক্ষে বিরাজ করিতেছিল। অপরাহ্নে তাহার তলে উপবেশন করিয়া, একটি কুসীমিত অশোকশাখা নিপ্রেয়োজনে হেমচন্দ্ৰ ছরিক দবারা খন্ড খন্ড করিতেছিলেন, এবং মহামহিঃ পথপ্রতি দণ্টি কবিতেছিলেন, যেন কাহারও প্রতীক্ষা করিতেছেন। যাহার প্রতীক্ষা করিতেছিলেন, সে আসিল না। ভূত্য দিগিবজয় আসিল, হেমচন্দ্র দিগিবজয়কে কহিলেন, “দিগিবজয়, ভিখারিণী আজি এখনও আসিল না। আমি বড় ব্যস্ত হইয়াছি। তুমি একবার তাহার সন্ধানে যাও।” “যে আজ্ঞে” বলিয়া দিগিবজয় গিরিজায়ার সন্ধানে চলিল। নগরীর রাজপথে গিরিজায়ার সহিত তাহার সাক্ষাৎ হইল । গিরিজায়া বলিল, “কে ও দিবিবজয় ?” দিগিবজয় রাগ করিয়া কহিল, “আমার নাম দিগিবজয় ।” গি। ভাল দিগিবজয় – আজি কোন দিক জয় করিতে চলিয়াছ ? ՏՀ Գ