পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/২১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

, भाभानिनी হস্তপদাদি কিছ দেখিতে পাইলেন না—কেবল একখানি মািখ দেখিলেন। মাখখানি অতি বিশালশমশ্র সংযন্ত, তাহার মস্তকে উষ্ণীষ । সেই উত্তজবল চন্দ্রালোকে, বাতায়নের নিকটে, সম্মখে শমশ্র সংযন্ত উষ্ণীষধারী মনষ্যেমণড দেখিয়া, হেমচন্দ্ৰ শয্যা হইতে লম্ফ দিয়া নিজ শাণিত আসি গ্রহণ করিলেন। আসি গ্রহণ করিয়া হেমচন্দ্ৰ চাহিয়া দেখিলেন যে, বাতায়নে আর মনষ্যেমােন্ড নাই। হেমচন্দ্র অসিহস্তে দবারোদঘাটন করিয়া গহ হইতে নিম্প্রকান্ত হইলেন। বাতায়নতিলে আসিলেন। তথায় কেহ নাই। গাহের চতুঃপাশেবা, গঙ্গাতীরে, বনমধ্যে হেমচন্দ্র ইতস্ততঃ অন্বেষণ করিলেন। কোথাও কাহাকে দেখিলেন না। হেমচন্দ্র গহে প্রত্যাবত্তন করিলেন। তখন রাজপত্র পিতৃদত্ত যোদ্ধ বেশে আপাদমস্তক আত্মশরীর মন্ডিত করিলেন। অকালজালদোদয়বিমষিাত গগনমণ্ডডলবৎ তাঁহার সন্দর মখকান্তি অন্ধকারময় হইল। তিনি একাকী সেই গম্ভীর নিশাতে শস্ত্রময় হইয়া যাত্রা করিলেন। বাতায়নপথে মনষ্যমােন্ড দেখিয়া তিনি জানিতে পারিয়াছিলেন যে, বঙ্গে তুরক আসিয়াছে। পঞ্চম পরিচ্ছেদ ঃ বাপীকালে অকালজলদোদয়স্বরপ ভীমমাত্তি রাজপত্র হেমচন্দ্ৰ তুরকের অন্বেষণে নিমন্ত্ৰকান্ত হইলেন। ব্যাঘ্র যেমন আহায্য দেখিবামাত্র বেগে ধাবিত হয়, হেমচন্দ্র তুরক দেখিবামাত্র সেইরােপ ধাবিত হইলেন। কিন্তু কোথায় তুরকের সাক্ষাৎ পাইবেন, তাহার স্থিরতা ছিল না। হেমচন্দ্র একটিমাত্র তুরক দেখিয়াছিলেন। কিন্তু তিনি এই সিদ্ধান্ত করিলেন যে, হয় তুরকসেনা নগরসন্নিধানে উপস্থিত হইয়া লক্কায়িত আছে, নতুবা এই ব্যক্তি তুরকসেনার পৰ্ব্বব্যােচর। যদি তুরকসেনাই আসিয়া থাকে, তবে তৎসঙ্গে একাকী সংগ্রাম সম্পভাবে না। কিন্তু যাহাই হউক, প্রকৃত অবস্থা কি, তাহার অন্যসন্ধান না করিয়া হেমচন্দ্ৰ কদাচ স্থির থাকিতে পারেন না। যে মহৎকায্য জন্য মণিালিনীকে ত্যাগ করিয়াছেন, আদ্য রাত্ৰিতে নিদ্রাভিভূত হইয়া সে কৰ্ম্মেম উপেক্ষা করিতে পারেন না। বিশেষ যবনবন্ধে হেমচন্দ্রের আন্তরিক আনন্দ । উষ্ণীষধারী মন্ড দেখিয়া অবধি তাঁহার জিঘাংসা ভয়ানক প্রবল হইয়াছে, সতরাং তাঁহার স্থির হইবার সম্ভাবনা কি ? অতএব দ্রািতপদবিক্ষেপে হেমচন্দ্র রাজপথাভিমখে চলিলেন। উপবনগাঁহা হইতে রাজপথ কিছ: দর। যে পথ বাহিত করিয়া উপবনগাঁহা হইতে রাজপথে যাইতে হয়, সে বিরল-লোক-প্রবাহী গ্রাম্য পথ মাত্র। হেমচন্দ্ৰ সেই পথে চলিলেন। সেই পথপাশে বা অতি বিস্তারিত, সরম্য সোপানাবলিশোভিত এক দীঘিকা ছিল। দীঘি কাপাশেব অনেক বকুল, শাল, অশোক, চম্পক, কদম্ব, অশবথ, বট, আম, তিন্তিড়ী প্রভৃতি ব্যক্ষ ছিল। বক্ষগলি যে সশঙ্খিলার পে শ্রেণীবিন্যস্ত ছিল, এমত নহে, বহতর ব্যক্ষ পরস্পর শাখায় শাখায় সম্পবদ্ধ হইয়া ব্যাপী তীরে ঘনান্ধকার করিয়া রহিত । দিবসেও তথায় অন্ধকার। কিম্বদন্তী ছিল যে, সেই সরোবরে ভূতযোনি বিহার করিত। এই সংস্কার প্রতিবাসীদিগের মনে এরপ দঢ় হইয়া উঠিয়াছিল যে, সচরাচর তথায় কেহ যাইত না। যদি যাইত, তবে একাকী কেহ যাইত না। নিশাকালে কদাপি কেহ যাইত না । পৌরাণিক ধমের একাধিপত্যকালে হেমচন্দ্রও ভূতযোনির অস্তিত্ব সম্বন্ধে প্রত্যয়শালী হইবেন, তাহার আর বিচিত্র কি ? কিন্তু প্রেতিসম্পবন্ধে প্রত্যয়শালী বলিয়া তিনি গন্তব্য পথে যাইতে সঙ্কোচ করেন, এরপ ভ'র স্বভাব নহেন। অতএব তিনি নিঃসঙেকাচ হইয়া ব্যাপীপাশবি দিয়া চলিলেন। নিঃসঙেকাচ বটে, কিন্তু কৌতহলশন্য নহেন। বাপীর পাশেব সৰ্ব্ববত্র এবং তত্তীরপ্রতি অনিমেষলোচন নিক্ষিপত করিতে করিতে চলিলেন। সোপানমাগের নিকটবতী হইলেন। সহসা চমকিত হইলেন। জনশ্রীতির প্রতি তাঁহার বিশবাস দঢ়ীকৃত হইল। দেখিলেন, চন্দ্রালোকে সব্বাধঃস্থ সোপানে, জলে চরণ রক্ষা করিয়া শেবতবসনপরিধানা কে বসিয়া আছে। সত্ৰীমত্তি বলিয়া তাঁহার বোধ হইল। শ্বেতবসনা অবেণীসম্পবদ্ধকুন্তলা ; কেশজাল স্কন্ধ, পািঠদেশ, বাহযোিগল, মখমন্ডল, হৃদয় সব্বত্র আচ্ছন্ন করিয়া রহিয়াছে। প্রেত বিবেচনা করিয়া হেমচন্দ্র নিঃশব্দে চলিয়া যাইতেছিলেন। কিন্তু মনে ভাবিলেন, যদি মনষ্য হয় ? এত রাত্রে কে এ সম্প্ৰথানে ? সে ত ܠ ܠ ܓ