পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/২৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মণিালিনী হেমচন্দ্ৰ অধোমখে করতলোপরি ভ্ৰকুটিকুটিল ললাট সংস্থাপিত করিয়া নিঃশব্দে সমাদয় বত্তান্ত শ্রবণ করিলেন। মাধবাচায্যের কথা সমাপত হইলেও বাঙনিৎপত্তি করিলেন না। সেই অবস্থাতেই রহিলেন। মাধবাচায্য ডাকিলেন, “হেমচন্দ্ৰ !” কোন উত্তর পাইলেন না। পনেরপি ডাকিলেন, “হেমচন্দ্ৰ !” তথাপি নিরািত্তর। তখন মাধবাচায্য গাত্ৰোখান করিয়া হেমচন্দ্রের হসন্ত ধারণ করিলেন : অতি কোমল, স্নেহময় সবরে কহিলেন, “বৎস! তাত ! মখি তোেল, আমার সঙ্গে কথা কও ” হেমচন্দ্র মািখ তুলিলেন। মািখ দেখিয়া মাধবাচার্য ও ভীত হইলেন। মাধবাচায্য কহিলেন, “আমার সহিত আলাপ কর। ক্ৰোধ হইয়া থাকে, তাহা বান্ত কর।” হেমচন্দ্ৰ কহিলেন, “কাহার কথায় বিশ্ববাস করিব ? হৃষীকেশ একরােপ কহিয়াছে। ভিখারিণী আর এক প্রকার বলিল ।” মাধবাচায্য কহিলেন, “ভিখারিণী কে ? সে কি বলিয়াছে ? “ হেমচন্দ্র অতি সংক্ষেপে উত্তর দিলেন। মাধবাচায্য সঙ্কুচিত সবরে কহিলেন, “হৃষীকেশেরই কথা মিথ্যা বোধ হয।” হেমচন্দ্ৰ কহিলেন, “হৃষীকেশের প্রত্যক্ষ । ” তিনি উঠিয়া "দাঁড়াইলেন। পিতৃদত্ত শািল হস্তে লাইলেন। কম্পিত কলেবরে গহমধ্যে নিঃশবেদ পদচারণ করিতে লাগিলেন । আচায্য জিজ্ঞাসা করিলেন, “কি ভাবিতেছ?” হেমচন্দ্র করস্থ শীল দেখাইয়া কহিলেন, “মণিালিনীকে এই শহলে বিদ্ধ করিব।” মাধবাচায্য তাঁহার মািখকান্তি দেখিয়া ভীত হইয়া অপসত হইলেন। প্রাতে মণিালিনী বলিয়া গিয়াছিলেন, “হেমচন্দ্র আমারই। “ ষািঠ পরিচ্ছেদ ঃ “আমি ত উন্মাদিনী” অপরাহ্রে মাধবাচায্য প্রত্যাবত্তন করিলেন । তিনি সংবাদ আনিলেন যে, ধমৰ্বাধিকার প্রকাশ কবিয়াছেন, যবন সেনা আসিয়াছে বটে, কিন্তু পাকবাজিত রাজ্যে বিদ্রোহের সম্পভাবনা শনিয়া যবন সেনাপতি সন্ধিসংস্থাপনে ইচ্ছক হইয়াছেন। আগামী কল্য তাঁহারা দত প্রেরণ করিবেন। দাঁতের আগমন অপেক্ষা করিয়া কোন যন্ধোদাম হইতেছে না। এই সংবাদ দিয়া মাধবাচাৰ্য্য কহিলেন, “এই কুলাঙ্গার রাজা ধৰ্ম্মমর্বাধিকারের বদ্ধিতে নম্ৰাট হইবে।” কথা হেমচন্দ্রের কণে প্ৰবেশলাভ করিল কি না। সন্দেহ । তাঁহাকে বিমনা দেখিয়া মাধবাচায্য বিদায় হইলেন। সন্ধার প্রাক্কালে মনোরমা হেমচন্দ্রের গহে প্রবেশ করিল। হেমচন্দ্রকে দেখিয়া মনোরমা কহিল, ”ভাই! আজি তুমি আমনি কেন ?” হেম । কেমন আমি ? মনো। তোমার মনুখখানা শ্রাবণের আকাশের মত অন্ধকার ; ভাদ্র মাসের গঙগার মত রাগে ভরা ; অত ভ্ৰকুটি করিতেছ। কেন ? চক্ষের পলক নাই কেন—আর দেখি—তাই ত, চোখে জল ; তুমি কেন্দেছ? O হেমচন্দ্ৰ মনোরমার মািখপ্রতি চাহিয়া দেখিলেন : আবার চক্ষ অবনত করিলেন; পনেকবার উন্নত গবাক্ষপথে দস্টি করিলেন; আবার মনোরমার মািখপ্ৰতি চাহিয়া রহিলেন। মনোরমা বঝিল যে, দন্টির এইরােপ গতির কোন উদ্দেশ্য নাই। যখন কথা কন্ঠীগত, অথচ বলিবার নহে, তখনই দাভিট এইরহপ হয়। মনোরমা কহিল, “হেমচন্দ্র, তুমি কেন কাতর হইয়াছ ? কি হইয়াছে ?” হেমচন্দ্ৰ কহিলেন, “কিছ না।” মনোরমা প্রথমে কিছ বলিল না—পরে আপনা। আপনি মদ, মদ, কথা কহিতে লাগিল, “কিছ না—বলিবে না! ছিঃ! ছি:! বকের ভিতর বিছা পষিবে!“ বলিতে বলিতে মনোরমার চক্ষা দিয়া এক বিন্দ বারি বস্থিল:-পরে অকস্মাৎ হেমচন্দ্রের মািখপ্রতি চাহিয়া কহিল, “আমাকে বলিবে না কেন ? আমি যে তোমার ভগিনী।” RRN