পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/২৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙিকম রচনাবলী মনোরমার মাখের ভাবে, শান্তদন্টিতে এত যত্ন, এত মািদতা, এত সহৃদয়তা প্রকাশ পাইল যে, হেমচন্দ্রের অন্তঃকরণ দ্রবীভূত হইল। তিনি কহিলেন, “আমার যে যন্ত্রণা, তাহা ভগিনীর নিকট কথনীয় নহে ।” মনোরমা কহিল, “তবে আমি ভগিনী নাহি ।” হেমচন্দ্র কিছতেই উত্তর করিলেন না। তথাপি প্রত্যাশাপন্ন হইয়া মনোরমা তাঁহার মািখপ্ৰতি চাহিয়া রহিল। কহিল, “আমি তোমার কেহ নহি ।” হেম। আমার দঃখ ভগিনীর অশ্রাব্য—অপরেরও অশ্রাব্য। হেমচন্দ্রের কন্ঠস্বর করণাময়-নিতান্ত অভিব্যক্তিপরিপণ্য ; তাহা মনোরমার প্রাণের ভিতর গিয়া বাজিল। তখনই সে সম্বর পরিবত্তান হইল, নয়নে অগিনস্ফলিঙ্গ নিগতি হইল—অধর দংশন করিয়া হেমচন্দ্ৰ কহিলেন, “আমার দঃখ কি ? দঃখ কিছই না। আমি মণি ভ্ৰমে কালসাপ কন্ঠে ধরিয়াছিলাম, এখন তাহা ফেলিয়া দিয়াছি।” মনোবামা আবার পকবাবৎ হেমচন্দ্রের প্রতি অনিমেষলোচনে চাহিয়া রহিল। ক্ৰমে তাহার মাখমণডলে অতি মধর, অতি সকরণ হাস্য প্রকটিত হইল। বালিকা প্ৰগলভ্যতাপ্রাপতি হইল। সােয্যরশিমর অপেক্ষা যে রশিম সমাজবুল, তাহার কিরীটি পরিয়া প্রতিভাদেবী দেখা দিলেন। মনোরমা কহিল, “বঝিয়াছি। তুমি না বঝিয়া ভালবাস, তাহার পরিণাম “ঘাঁটিয়াছে।” হেম । ভালবাসিতাম। হেমচন্দ্ৰ বত্তমানের পরিবত্তে অতীতকাল ব্যবহার করিলেন। আমনি নীরবে নিঃস্রাত অশ্রািজলে তাঁহার মখমন্ডল ভাসিয়া গেল । মনোরমা বিরক্ত হইল। বলিল, “ছি! ছি:! প্রতারণা ! যে পর্যকে প্রতারণা করে, সে বণ্ডক মাত্র। যে আত্মপ্রতারণা করে, তাহার সব্বনাশ ঘটে।” মনোরমা বিরক্তিবশতঃ আপনি আলীকদম চক্ষপকাণ্ডগলিতে জড়িত করিয়া টানিতে লাগিল। হেমচন্দ্র বিসিন্মত হইলেন, কহিলেন, “কি প্রতারণা করিলাম ?” মনোরমা কহিল, “ভালবাসিতাম। কি ? তুমি ভালবাস। নাহিলে কাঁদিলে কেন ? কি ? আজি তোমার স্নেহের পাত্র অপরাধী হইয়াছে বলিয়া তোমার ভালবাসা গিয়াছে ? কে তোমায় এমন প্ৰবোধ দিয়াছে ?” বলিতে বলিতে মনোরমার প্রৌঢ়ভাবাপন্ন মািখকান্তি সহসা প্ৰফল্লি পদ্মবং অধিকতর ভাবব্যঞ্জক হইতে লাগিল; চক্ষ অধিক জ্যোতিঃসফরৎ হইতে লাগিল, কন্ঠস্বর অধিকতর পরিাসফট, আগ্রহ কম্পিত হইতে লাগিল; বলিতে লাগিল, “এ কেবল বীরদাম্ভকারী পরিষদের দপ মাত্র। অহঙ্কার করিয়া আগন নিবান যায় ? তুমি বালির বাঁধ দিয়া এই কালপরিপলাবনী গঙ্গার বেগ রোধ করিতে পারিবে, তথাপি তুমি প্ৰণয়িনীকে পাপিঠা মনে করিয়া কখনও প্রণয়ের বেগ রোধ করিতে পারিবে না। হা কৃষ্ণ ! মানষে সকলেই প্রতারক!” হেমচন্দ্ৰ বাসিন্মত হইয়া ভাবিলেন, “আমি ইহাকে এক দিন বালিকা মনে করিয়াছিলাম!” মনোরমা কহিতে লাগিল, “তুমি পরাণ শনিয়াছ ? আমি পন্ডিতের নিকট তাহার গঢ়োর্থ সহিত শনিয়াছি। লেখা আছে, ভগীরথ গঙ্গা আনিয়াছিলেন : এক দাম্ভিক মত্ত হস্তী তাহার বেগ সংবরণ করিতে গিয়া ভাসিয়া গিয়াছিল। ইহার অর্থ কি ? গঙ্গা প্রেমপ্রবাহ স্বরপ; ইহা জগদীশবর-পাদ-পদ্ম-নিঃসন্ত, ইহা জগতে পবিত্র,-যে ইহাতে অবগাহন করে, সেই পণ্যময় হয়। ইনি মাতৃত্যুঞ্জয়-জটা-বিহারিণী ; যে মাতৃত্যুকে জয্য করিতে পারে, সেও প্রণয়কে মস্তকে ধারণ করে। আমি যেমন শনিয়াছি, ঠিক সেইরােপ বলিতেছি। দাম্পিভক হস্তী দম্ভের অবতারস্বরপ । সে প্রণয়বেগে ভাসিয়া যায়। প্রণয় প্রথমে একমাত্র পথ অবলম্বন করিয়া উপযক্ত সময়ে শতমখী হয়; প্রণয় সর্বভাব সিদ্ধ হইলে, শত পাত্রে ন্যস্ত হয়-পপি শেষে সাগরসঙ্গমে লয়প্রাপিত হয়—সংসার সােথ সব জীবে বিলীন হয়।” হে। তোমার উপদেশটা কি বলিয়াছেন, প্ৰণয়ের পাত্ৰাপাত্ৰ নাই ? পাপাসন্তকে কি ভালবাসিতে হইবে ? ম। পাপাসক্তকে ভালবাসিতে হইবে। প্রণয়ের পাত্ৰাপাত্ৰ নাই। সকলকেই ভালবাসিবে, প্ৰণয় জন্মিলেই তাহাকে যত্নে স্থান দিবে; কেন না, প্রণয় অমল্য। ভাই, যে ভাল, তাকে কে না ভালবাসে ? যে মন্দ, তাকে যে আপনা ভুলিয়া ভালবাসে, আমি তাকে বড় ভালবাসি। কিন্তু আমি ত উন্মাদিনী। SRD O