পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/২৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মণিালিনী তখন মণালিনী কহিলেন, “তুমি এ কথা বলিয়া ভাল কর নাই। এর বিহিত করা উচিত; তুমি আহারাদি করিতে যাও। আমি ততক্ষণে একখানি পত্র লিখিয়া রাখিব। তুমি খাইবার পর, সেইখানি লইয়া তাঁহার নিকট যাইবে।” গিরিজায়া স্বীকৃত হইয়া সত্বরে আহারাদির জন্য গমন করিল। মণিালিনী সংক্ষেপে পত্র লিখিলেন । লিখিলেন, “গিরিজায়া মিথ্যাবাদিনী । যে কারণে সে তোমার নিকট মৎসমােবন্ধে মিথ্যা বলিয়াছে, তাহা জিজ্ঞাসা করিলে, সে সর্বয়ং বিস্তারিত কবিয়া কহিবে । আমি মথ রায় যাই নাই। যে রাত্রিতে তোমার অঙ্গরীয় দেখিয়া যমনাতটে আসিয়াছিলাম, সেই রাত্রি অবধি আমার পক্ষে মাথারার পথ ~রদ্ধ হইয়াছে। আমি মথ রায় না গিয়া তোমাকে দেখিতে নবদ্বীপে আসিয়াছি। নবদ্বীপে আসিয়াও যে এ পয্যন্ত তোমার সহিত সাক্ষাৎ করি নাই, তাহার কারণ এই, আমার সহিত সাক্ষাৎ করিলে তোমার প্রতিজ্ঞাভওগ হইবে। আমার অভিলাষ, তোমাকে দেখিব, তৎসিন্ধিপক্ষে তোমাকে দেখা দেওয়ার আবশ্যক কি ? “ গিরিজায়া এই লিপি লইয়া পনেরপি হেমচন্দ্রের গাহাভিমতখে যাত্ৰা করিল। সন্ধ্যাকালে, মনোরমার সহিত কথোপকথন সমাপিতর পরে, হেমচন্দ্ৰ গঙগাদশানে যাইতেছিলেন, পথে গিরিজায়ার সহিত সাক্ষাৎ হইল। গিরিজায়া তাঁহার হসোত লিপি দিল । হেমচন্দ্ৰ কহিলেন, “তুমি আবার কেন ?” গি।। পত্ৰ লইয়া আসিয়াছি। হে। পত্র কাহার ? গি। মণিালিনীর পত্র। হেমচন্দ্ৰ বিসিন্মত হইলেন, “এ পত্র কি প্রকারে তোমার নিকট আসিল ?” গি। মণিালিনী নবদ্বীপে আছেন। আমি মথরাব কথা আপনার নিকট মিথ্যা বলিয়াছি। হে। এই পত্র তাঁহার ? গি । হাঁ, তাঁহার সবাহসঙ্গীতলিখিত । হেমচন্দ্র লিপিখানি না পড়িয়া তাহা খণ্ড খণ্ডড করিয়া ছিন্ন ছিন্ন করিলেন। ছিন্ন খণড সকল বনমধ্যে নিক্ষিপত করিয়া কহিলেন, “তুমি যে মিথ্যাবাদিনী, তাহা আমি ইতিপকেবই শনিতে পাইয়াছি। তুমি যে দলেটার পত্র লইয়া আসিয়াছ, সে যে বিবাহ করিতে যায় নাই, হৃষীকেশ তাহাকে তাড়াইয়া দিয়াছে, তাহা আমি ইতিপকেবই শনিয়াছি। আমি কুলটার পত্ৰ পড়িব না। তুই আমার সম্পমখ হইতে দরি হ।" গিরিজায়া চমৎকৃত হইয়া নিরািত্তরে হেমচন্দ্রের মািখপানে চাহিয়া রহিল। হেমচন্দ্র পথিপাশাব্যস্থ এক ক্ষদ্র-ব্যক্ষের শাখা ভগন করিয়া হস্তে লইয়া কহিলেন, “দাের হ, নচেৎ বেক্ৰোঘাত করিব।” গিরিজায়ার আর সহ্য হইল না। ধীরে ধীরে বলিল, “বীর পরিষ বটে! এই রকম বীরত্ব প্রকাশ করিতে বঝি নদীয়ায় এসেছ ? কিছ, প্রয়োজন ছিল না—এ বীরত্ব মগধে বসিয়াও দেখাইতে পারিতে। মসলমানের জন্তা বহিতে, আর গরিবদ্যুঃখীর মেয়ে দেখিলে বেত মারিতে।” হেমচন্দ্র অপ্ৰতিভ হইয়া বেত ফেলিয়া দিলেন। কিন্তু গিরিজায়ার রাগ, গেল না। বলিল, “তুমি মণিালিনীকে বিবাহ করিবে ? মণালিনী দরে থােক, তুমি আমারও যোগ্য নও।” • এই বলিয়া গিরিজায়া, সদাপে গজেন্দ্রগমনে চলিয়া গেল। হেমচন্দ্র ভিখারিণীর গবর্ব দেখিয়া অবাক হইয়া রহিলেন। গিরিজায়া প্রত্যাগতা হইয়া হেমচন্দ্রের আচরণ মািণালিনীর নিকট সবিশেষ বিবত করিল। এবার কিছ ল্যুকাইল না। মণিালিনী শনিয়া কোন উত্তর করিলেন না। রোদিনও করিলেন না। য্যেরপ অবস্থায় শ্রবণ করিতেছিলেন, সেইরােপ অবস্থাতেই রহিলেন। দেখিয়া গিরিজায়া শওকান্বিতা হইল—তখন মণিালিনীর কথোপকথনের সময় নহে বঝিয়া তথা হইতে সরিয়া গেল। পাটনীর গাহের অনতিদারে যে এক সোপানবিশিষ্ট পাঙ্করিণী ছিল, তথায় গিয়া গিরিজায়া সোপানোপরি উপবেশন করিল। শারদীয়া পণিমার প্রদীপত কৌমদীতে পােস্করিণীর সবচ্ছ Ꮪ← Ꮼ Ꮼ