পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/২৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বণ্ডিকম রচনাবলী হেমচন্দ্রের দন্তী গিয়া কহিল যে, হেমচন্দ্ৰ উপবনে তাঁহার প্রতীক্ষা করিতেছেন। মহত্তমধ্যে ঔষধ আসিত, কিন্তু মণিালিনী তাহার অপেক্ষা করেন নাই; আমনি সেই মরণাধিক যন্ত্রণা বিস্মত হইয়া উপবনে উপস্থিত হইলেন। আর ঔষধ প্রয়োগ হইল না। হেমচন্দ্রের তাহা সন্মরণ হইল। সেই মণিালিনী ব্রাহ্মণকুলকলঙক ব্যোমকেশের জন্য হেমচন্দ্রের কাছে অবিশবাসিনী হইবে ? না, তা কখনই হইতে পারে না। আর একদিন হেমচন্দ্ৰ মথরা হইতে গািরদর্শনে যাইতেছিলেন ; মথরা হইতে এক প্রহরের পথ আসিয়া হেমচন্দ্রের পীড়া হইল। তিনি এক পান্থনিবাসে পড়িয়া রহিলেন : কোন প্রকারে এ সংবাদ অন্তঃপরে মণিালিনীর কণে প্রবেশ করিল। মণিালিনী সেই রাত্ৰিতে এক ধাত্রীমাতা সঙেগ লইয়া রাত্রিকালে সেই এক যোজন পথ পদব্রজে অতিক্ৰম করিয়া হেমচন্দ্রকে দেখিতে আসিলেন। যখন মণিালিনী পান্থনিবাসে আসিয়া উপস্থিত হইলেন, তখন তিনি পথশ্রান্তিতে প্রায় নিজীবি ; চরণ ক্ষতবিক্ষত, --রাধির বাহিতেছিল। সেই রাত্ৰিতেই মণিালিনী পিতার ভয়ে প্রত্যাবৰ্ত্তন করিলেন। গহে আসিয়া তিনি স্বয়ং পীড়িত হইলেন। হেমচন্দ্রের তাহাও মনে পড়িল। সেই মণিালিনী নরাধম ব্যোমকেশের জন্য তাঁহাকে ত্যাগ করিবে ? সে কি অবিশবাসিনী হইতে পারে ? যে এমন কথায় বিশদ্বাস করে, সেই অবিশবাসী—সে নরাধম, সে গণডেমখে। হেমচন্দ্ৰ শতবার ভাবিতেছিলেন, “কেন আমি মণিালিনীর পত্র পড়িলাম না ? নবদ্বীপে কেন আসিয়াছে, তাহাই বা কেন জানিলাম না ? “ পত্ৰখন্ডগলি যে বনে নিক্ষিপত করিয়াছিলেন, তাহা যদি সেখানে পাওযা যায়, তবে তাহা যন্তে করিয়া যতদর পারেন, ততদর মৰ্ম্মাবগত হইবেন, এইরােপ প্রত্যাশা করিয়া একবার সেই বন পর্য্যন্ত গিয়াছিলেন ; কিন্তু সেখানে বনতলস্থ অন্ধকারে কিছই দেখিতে পায়েন নাই। বায় লিপিখন্ডসকল উডাইয়া লইয়া গিয়াছে। যদি তখন আপনি দক্ষিণ বাহ ছেদন করিয়া দিলে হেমচন্দ্র সেই লিপিখন্ডগলি পাইতেন, তবে হেমচন্দ্র তাহাও দিতেন। আবার ভাবিতেছিলেন, “আচায্য কেন মিথ্যা কথা বলবেন ? আচাৰ্য্য অত্যন্ত সত্যনিষ্পাঠ— কখনও মিথ্যা বলিবেন না। বিশেষ আমাকে পত্ৰাধিক স্নেহ করেন—জানেন, এ সংবাদে আমার মরণাধিক যন্ত্রণা হইবে, কেন আমাকে তিনি মিথ্যা কথা বলিয়া এত যন্ত্রণা দিবেন ? আর তিনিও স্বেচ্ছাক্ৰমে এ কথা বলেন নাই। আমি সদাপে তাঁহার নিকট কথা বাহির করিয়া লইলাম—- যখন আমি বলিলাম যে, আমি সকলই অবগত আছি—তখনই তিনি কথা বলিলেন। মিথ্যা। বলিবার উদ্দেশ্য থাকিলে, বলিতে অনিচ্ছক হইবেন কেন ? তবে হইতে পারে, হৃষীকেশ তাঁহার নিকট মিথ্যা বলিয়া থাকিবে। কিন্তু হৃষীকেশই বা অকারণে গােরর নিকট মিথ্যা বলিবে কেন ? আর মণিালিনীই বা তাহার গহ ত্যাগ করিয়া নবদ্বীপে আসিবে কেন ?” যখন এইরােপ ভাবেন, তখন হেমচন্দ্রের মাখ কালিমাময় হয়, ললাট ঘৰ্ম্মীসক্ত হয়; তিনি শয়ন ত্যাগ করিয়া উঠিয়া বসেন ; দন্তে অধর দংশন করেন, লোচনা আরক্ত এবং বিসফারিত হয় ; শািলধারণ জন্য হসন্ত মন্টিবদ্ধ হয়। আবার মণিালিনীর প্ৰেমময় মাখমন্ডল মনে পড়ে। আমনি ছিন্নমসুল বক্ষের ন্যায় শয্যায় পতিত হয়েনা; উপাধানে মািখ লক্কায়িত করিয়া শিশর ন্যায় রোদন করেন। হেমচন্দ্র ঐরােপ রোদন করিতেছিলেন, এমন সময় তাঁহার শয়নগাহের দাবার উদ্ঘাটিত হইল। গিরিজায়া প্রবেশ করিল। হেমচন্দ্র প্রথমে মনে করিলেন, মনোরমা। তখনই দেখিলেন, সে কুসমময়ী মাত্তি নহে। পরে চিনিলেন যে, গিরিজায়া। প্রথমে বিস্মিত, পরে আহমাদিত, শেষে কৌতহলাক্রান্ত হইলেন। বলিলেন, “তুমি আবার কেন ?” গিরিজায়া কহিল, “আমি মণিালিনীর দাসী। মণিালিনীকে আপনি ত্যাগ করিয়াছেন। কিন্তু আপনি মণিালিনীর ত্যাজ্য নহেন। সতরাং আমাকে আবার আসিতে হইয়াছে । আমাকে বেত্ৰাঘাত করিতে সাধ থাকে করান। ঠাকুরাণীর জন্য এবার তাহা সহিব, স্থির সঙকলাপ করিয়াছি।” এ তিরস্কারে হেমচন্দ্র অত্যন্ত অপ্রতিভ হইলেন। বলিলেন, “তোমার কোন শঙ্কা নাই। সত্ৰীলোককে আমি মারিব না। তুমি কেন আসিয়াছ ? মণালিনী কোথায় ? বৈকালে তুমি বলিয়াছিলে, তিনি নবদ্বীপে আসিয়াছেন ; নবদ্বীপে আসিয়াছেন কেন ? আমি তাঁহার পত্ৰ না পড়িয়া ভাল করি নাই।” গি। মণিালিনী নবদ্বীপে আপনাকে দেখিতে আসিয়াছেন। ミ○○