পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। ঃসংযোগ করিলেন। ‘আনন্দমঠ”, “দেবী চৌধরাণী’, ‘সীতারাম'-এ সর্বদেশপ্রেম ও দেশ-ভক্তির প্রকৃত্সট ব্যাখ্যা করিলেও, সমাজকে দঢ় ভিত্তির উপর সংগঠন কলেপ হিন্দধমের বিস্তৃত আলোচনায় তিনি অত্যধিক অভিনিবিভ্ৰাট হইলেন। তাঁহার সমসংস্কৃত মন পন্ডিত শশধর তক চড়ামণির হিন্দধৰ্ম্মম ব্যাখ্যায় আদৌ সায় দিতে পারিল না। ১৮৮৪ সনে (১২৯১, শ্রাবণ) ‘নবজুীবন’ ও ‘প্রচার” প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে স্বকীয় পদ্ধতিতে হিন্দধমের বিস্তৃত আলোচনায় বঙ্কিমচন্দ্র প্রবত্ত হইলেন। ‘প্রচারে’ ‘কৃষ্ণচরিত্র” ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হইয়া ১৮৮৬ সনে প্রথম ভাগ এবং ১৮৯২ সনে সম্পপণ্য গ্রন্থ মাদ্রাঙ্কিত হয়। এখানে বলা আবশ্যক, ‘প্রচার’ তাঁহারই প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে জামাতা রাখালচন্দ্ৰ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পাদনায় প্রকাশিত হইয়াছিল। ‘কৃষ্ণচরিত্র” প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ লিখিয়াছেন : “বঙ্গদেশ যদি অসাড় প্রাণহীন না হইত। তবে কৃষ্ণচরিত্রে বিত্তমান পতিত হিন্দসমাজ ও বিকৃত হিন্দধমের উপর যে অস্ত্রাঘাত আছে সে আঘাতে বেদনাবোধ এবং কথঞ্চিৎ চেতনা লাভ করিত। বণ্ডিকমের ন্যায় তেজস্বী প্রতিভাসম্পন্ন ব্যক্তি আর কেহই লোকাচার দেশাচারের বিরদ্ধে এরপ নিভীক পুষ্ট উচ্চারণে আপন মত প্রকাশ করিতে সাহস করিত না। এমন কি, বঙ্কিম প্রাচীন হিন্দীশাস্ত্রের তুতি ঐতিহাসিক বিচার প্রয়ােগ করুিয়া তাহার সারু এবং অসার ভাগ পথকুীকরণ, তাহার প্রামাণ্য এবং 'অপ্রামাণ্য অংশের বিশেলষণ এমন নিঃসঙ্কোচে করিয়াছেন যে এখনকার দিনে তাহার তুলনা পাওয়া F ।” (বঙ্কিম-প্ৰসঙ্গ-(বঙ্কিমচন্দ্র', পঃ ১০-১) 'প ‘নবজীবনেও প্রথম সংখ্যা হইতে বঙ্কিমচন্দ্র ‘ধৰ্ম্ম জিজ্ঞাসা’ ও ‘অনশীলন' ধৰ্ম্মমলক কবিধ প্রবন্ধ লিখিতে আরম্ভ করিলেন। এইগলি পরিবত্তিত আকারে এবং নাতন রচনা গ। ১৮৮৮ সনে ‘ধৰ্ম্মমতত্ত্ব, প্রথম ভাগ, অনশীলন” নামে বাহির হইল। ‘প্রচারে’ বঙ্কিমচন্দ্র দেবতত্ত্ববিষয়ক একটি ধারাবাহিক প্রবন্ধ লিখিতে আরম্ভ করেন। শ্ৰীমদভগবদগীতা’র ব্যাখ্যাও উক্ত পত্রে তিনি সরে করিয়া দিলেন। গীতার দ্বিতীয় অধ্যায়ের ষোড়শ শেলাক পৰ্যন্ত ]্যাখ্যা বাহির হয়। এই দাইটিই অসম্পপণ থাকিয়া যায়। পরে উভয়ই সর্বতন্ত্র পস্তকে নিবন্ধ ইয়াছে। বঙ্কিমের সাহিত্য-সেবা জীবনের শেষ দিন পৰ্য্যন্ত অক্ষশ্ন ছিল। সোসাইটি ফর তgায়ার ট্রেনিং অফ ইয়ং মেন’-এর (পরে, ইউনিভাসিটি ইনস্টিটিউট) সাহিত্য-বিভাগের রচভাপতি রাপে বঙ্কিমচন্দ্র বৈদিক সাহিত্য বিষয়ে ইংরেজীতে দাইটি বস্তৃতা দেন (ফেব্রয়ারী ও এচ্চি ১৮৯৪)। ইহার পরই তাঁহার মাতুত্যু হয়। এ সম্পবন্ধে তাঁহার আরও বস্তৃতা দেওয়ার ইচ্ছা! ...ব’ল । বঙ্কিমচন্দ্ৰ উক্ত দাইটি বক্তৃতার প্রারম্ভে বাংলার যােব-ছাত্রের উদ্দেশ করিয়া প্রত্যেককে হয় না। লম্বী হয় অনাবাদের মারফত বৈদিক সাহিত্য অধ্যয়নে তৎপর হইতে উপদেশ দিয়াছিলেন। বৈদিক যাগের ছবি দিয়া একখানি উপন্যাস লেখার সাধও ছিল বঙ্কিমচন্দ্রের, এবং তিনি বলিয়াছিলেন, “আরম্ভ করিতে পারিলে শেষ হইয়া যায়।” কিন্তু তাঁহার সে সাধ পণ্য হয়। নাই। রমেশচন্দ্র দত্ত তাঁহার মাতৃত্যুর তিন বৎসর পরে এই মৰ্ম্মে লিখিয়াছিলেন যে, বিপােল হিন্দশাস্ত্রের সার সংগ্ৰহ করিয়া নিজে একখানি ‘হিন্দীশাস্ত্র’ গ্রন্থ প্রকাশের প্রস্তাব করিলে বঙ্কিমচন্দ্ৰ মহাভারত ও ভগবদগীতা অংশের সঙ্কলনের ভার গ্রহণ করিলেন। কিন্তু কাৰ্য্যতঃ অগ্রসর হইবার পকেবই মাতু্য তাঁহাকে ছিনাইয়া লয়। যােবক উদীয়মান সাহিত্যিকগণকেও বঙ্কিমচন্দ্ৰ শেষ বয়সে নানা উপদেশ দিয়া সাহিত্যানশীলনে উৎসাহিত করিয়াছেন। রবীন্দ্রনাথ, হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, শ্ৰীশচন্দ্র মজমিদার, সরেশচন্দ্র , হীরেন্দ্রনাথ দত্ত এবং আরও অনেকে নিজ নিজ রচনায় তাহার সাক্ষ্য রাখিয়া য়াছেন। সরলা দেবী ছাত্রী অবস্থায় তাঁহার দবারা কতখানি অন্যপ্রাণিত হইয়াছিলেন তাহাও আমরা কিছদিন পব্বে তাঁহার “জীবনের ঝরাপাতা” মারফত জানিতে পারিয়াছি। বষীয়ান বঙ্কিমচন্দ্ৰ সাহিত্য-জীবনের সার কথাগালি ‘বাঙ্গালার নব্য লেখকদিগের প্রতি নিবেদন’-এ। লিখিয়া গিয়াছেন। ইহার দ’একটি এই ; “যদি মনে এমন বঝিতে পারেন যে, লিখিয়া দেশের বা মনষ্যজাতির কিছ মঙ্গলসাধন করিতে পারেন, অথবা সৌন্দৰ্য সন্টি করিতে পারেন, তবে অবশ্য লিখিবেন।. “যাহা অসত্য, ধৰ্ম্মম বিরাদ্ধ, পরনিন্দা বা পরপীড়ন বা সবার্থসাধন যাহার উদ্দেশ্য, সে সকল প্ৰবন্ধ কখনও হিতকর হইতে পারে না, সতরাং ত্যাহা একেবারে পরিহায্য। সত্য ও ধৰ্ম্মমই সাহিত্যের উদ্দেশ্য। /অন্য উদ্দেশ্যে লেখনী-ধারণ মহা পাপ।” (বিবিধ প্ৰবন্ধ, ২য় ভাগ, পঃ ২০৬, পরিষৎ-সংস্করণ) RO