পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/২৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ब७िका ब्रा5नाबब्ली যে, সেই মন্ডলমধ্যশোভিনী, আলোকময়ী, কিরীটি-কুণডলাদি-ভূষণালঙ্কৃত মাত্তি সত্ৰীলোকের আকৃতিবিশিষ্পটা। রমণীয় কারণ্যপরিপািণ মখমন্ডল; স্নেহপরিপািণ হাস্য অধরে সফারিত হইতেছে। তখন কুন্দ সািভয়ে সানন্দে চিনিল যে, সেই কারণাময়ী তাহার বাহকাল-মতা প্রসতির অবয়ব ধারণ করিয়াছে। আলোকময়ী সস্নেহাননে কুন্দকে ভূতল হইতে উত্থিতা করিয়া ক্লোড়ে লাইলেন। এবং মাতৃহীনা। কুন্দ বাহকাল পরে “মা” কথা মখে আনিয়া যেন চরিতার্থ হইল। পরে জ্যোতিৰ্ম্মমন্ডলমধ্যস্থা কুন্দের মািখচুম্বন করিয়া বলিলেন, “বাছা! তুই বিস্তর দঃখ পাইয়াছিস । আমি জানিতেছি যে, বিস্তর দঃখ পাইবি । তোর এই বালিকা বয়ঃ, এই কুসমকোমল শরীর, তোর শরীরে সে দঃখ সহিবে না। অতএব তুই আর এখানে থাকিস না। পথিবী ত্যাগ করিয়া আমার সঙ্গে আয়।” কুন্দ যেন ইহাতে উত্তর করিল যে, “কোথায় যাইব ?” তখন কুন্দের জননী উদ্ধের অঙ্গালিনিন্দেশ দ্বারা উক্তজবল প্রজবলিত নক্ষত্ৰলোক দেখাইয়া দিয়া বলিলেন যে, “ঐ দেশ।” কুন্দ তখন যেন বহন্দরেবত্তীর্ণ বেলাবিহীন অনন্তসাগরপারসথবৎ, অপরিজ্ঞাত নক্ষত্ৰলোক দলিট করিয়া কহিল, “আমি অত দরে যাইতে পারিব না ; আমার বল নাই।" তখন ইহা শনিয়া জননীর কারণ্য-প্রফতুল্ল অথচ গম্ভীর মখমণডলে ঈষৎ অনাহাদজনিতবৎ ভ্ৰকুটি বিকাশ হইল, এবং তিনি মদগম্ভীর সবরে কহিলেন, “বাছা, যাহা তোমার ইচ্ছা! তাহা কর। কিন্তু আমার সঙ্গে আসিলে ভাল করিতে। ইহার পর তুমি ঐ নক্ষত্ৰলোকপ্রতি চাহিয়া তথায় আসিবার জন্য কাতর হইবে । আমি আর একবার তোমাকে দেখা দিব । যখন তুমি মনঃপীড়ায় ধাতুল্যবলণিষ্ঠতা হইয়া, আমাকে মনে করিয়া, আমার কাছে আসিবার জন্য কাঁদিবে, তখন আমি আবার দেখা দিব, তখন আমার সঙ্গে আসিও । এখন তুমি আমার অঙ্গলিসঙেকতনীতনয়নে আকাশপ্রান্তে চাহিয়া দেখ। আমি তোমাকে দাইটি মনষ্যেমাত্তি দেখাইতেছি। এই দাই মনীষাই ইহলোকে তোমার শভোশাভের কারণ হইবে। যদি পাের, তবে ইহাদিগকে দেখিলে বিষধরবৎ প্রত্যাখ্যান করিও । তাহারা যে পথে যাইবে, সে পথে যাইও না।” তখন জ্যোতিৰ্ম্মময়ী, অঙ্গলিসঙেকতদ্বারা গগনোেপান্ত দেখাইলেন। কুন্দ তৎসঙেকতানসাবে দেখিল, নীল গগনপটে এক দেবনিন্দিত পরিষমত্তি অঙ্কিত হইয়াছে। তাঁহার উন্নত, প্রশস্ত প্রশান্ত ললাট; সরল, সকরণ কটাক্ষ; তাঁহার মর্যালবৎ দীঘ ঈষৎ বঙ্কিম গ্ৰীবা এবং অন্যান্য মহাপরিষলক্ষণ দেখিয়া, কাহারও বিশবাসী হইতে পারে না যে, ইহা হইতে আশওকা সম্ভবে। তখন ক্ৰমে ক্ৰমে সে প্রতিমাত্তি জলবােদবদেবৎ গগনপটে বিলীন হইলে, জননী কুন্দকে কহিলেন, “ইহার দেবকান্ত রােপ দেখিয়া ভুলিও না। ইনি মহােদশেষ হইলেও, তোমার অমঙ্গলের কারণ। অতএব বিষধরবোধে। ইহাকে ত্যাগ করিও ।“ পরে আলোকময়ী পানশাচ “ঐ দেখ” বলিয়া গগনপ্রান্তে নিন্দেশ করিলে, কুন্দ দ্বিতীয় মাত্তি আকাশের নীলপটে চিত্রিত দেখিল। কিন্তু এবার পরিষমৰ্ত্তি নহে। কুন্দ তথায় এক উক্তজবল শ্যামাঙ্গী, পদ্মপলাশনয়নী যাবতী দেখিল। তাহাকে দেখিয়াও কুন্দ ভীত হইল না। জননী কহিলেন, “এই শ্যামাণ্ডগৰী নারীবেশে রাক্ষসী । ইহাকে দেখিলে পলায়ন করিও । “ ইহা বলিতে বলিতে সহসা আকাশ অন্ধকারময় হইল, বহচন্দ্রমন্ডল আকাশে আন্তহিত হইল। এবং তৎসহিত তন্মধ্যসংবৰ্ত্তিনী তেজোময়ীও অন্তহিতা হইলেন। তখন কুন্দের নিদ্ৰাভঙ্গ হইল। চতুথ পরিচ্ছেদ ঃ এই সেই নগেন্দ্র গ্রামমধ্যে গমন করিলেন। শনিলেন, গ্রামের নাম ঝােমঝমপাের। তাঁহার অননুরোধে এবং আনকল্যে গ্রামস্থ কেহ কেহ আসিয়া মতের সৎকারের আয়োজন করিতে লাগিল। একজন প্রতিবেশিনী কুন্দনন্দিনীর নিকটে রহিল। কুন্দ যখন দেখিল যে, তাহার পিতাকে সৎকারের জন্য লইয়া গেল, তখন তাঁহার মােত্যসম্বন্ধে কৃতনিশ্চয় হইয়া অবিরত রোদন করিতে লাগিল। প্রভাতে প্রতিবেশিনী আপন গহকায্যে গেল। কুন্দনন্দিনীর সান্ত্বনাথ আপন কনা চাঁপাকে পাঠাইয়া দিল। চাঁপা কুন্দের সমবয়স্ক এবং সঙ্গিনী। চাঁপা আসিয়া কুন্দের সঙ্গে নানাবিধ কথা কহিয়া তাহাকে সান্ত্বিনা করিতে লাগিল। কিন্তু দেখিল যে, কুন্দ কোন কথাই শনিতেছে না, রোদন করিতেছে এবং মধ্যে মধ্যে প্রত্যাশাপন্নবৎ আকাশপানে চাহিয়া দেখিতেছে। চাঁপা কৌতহলপ্রযক্ত জিজ্ঞাসা করিল, “এক শ’ বার আকাশপানে চাহিয়া কি দেখিতেছ?” 之心8