পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্কিমৃত্যুন্দ্র চট্টোপাধ্যায় করিতে সক্ষম হইয়াছে, তাহার অনশীলনে তৎপর হইতে তিনি আমাদের নিন্দেশ দেন। বণ্ডিকমচন্দ্র বলেন : “বিজ্ঞানের সেবা করিলে বিজ্ঞান তোমার দাস, যে বিজ্ঞানকে ভজে, বিজ্ঞান তাহাকে ভজিবে। কিন্তু যে বিজ্ঞানের অবমাননা করে, বিজ্ঞান তাহার কঠোর শত্র।. “বিজ্ঞান মহায়সশকট বাহনে, তড়িৎ-তার সঞ্চালনে, কামান সন্ধানে, আয়োগোলক বর্ষণে এই বীরপ্রস ভারতভূমি হস্তািমলকবৎ আয়ত্ত করিয়া শাসন করিতেছে। শােধ তাঁহাই নহে। বিদেশীয় বিজ্ঞানে আমাদিগকে ক্ৰমশঃই নিজীবি করিতেছে। যে বিজ্ঞান সর্বদেশী হইলে আমাদের দাস হইত, বিদেশী হইয়া আমাদের প্রভু হইয়াছে। আমরা দিন দিন নিরাপায় হইতেছি। অতিথিশালায় আজীবনবাসী অতিথির ন্যায় আমরা প্রভুর আশ্রমে বাস করিতেছি। এই ভারতভুমি একটি বিস্তীৰ্ণ – অতিথিশালা মাত্র।” (বঙ্গদর্শন, ভাদ্র ১২৭৯, পঃ ২৩৫) বিজ্ঞান সবিদেশী হইয়া, আমাদের কতখানি কাজে লাগিতে পারে। পরবত্তী কালে তাহা বিশেষ উপলব্ধ হইয়াছে। ইংরেজ মনিব, ভারতবাসী প্রজা; ইংরেজ শাসক, ভারতবাসী শাসিত; একারণ উভয়ের মধ্যে মিলনের বদলে জাতিবিদ্বেষ ক্ৰমশঃ বাড়িয়া উঠে। বাংলা সংবাদপত্রে ইহাকে ‘জাতিবৈর’ আখ্যা দেওয়া হয়। ভারতীয় মহাজাতির কল্যাণের আকর-স্বরপ এই ‘জাতিবৈরীকে অভিনন্দন জানাইয়া। ১৮৭৩ সনেই বঙ্কিমচন্দ্র লিখিলেন : “যতদিন দেশী-বিদেশীতে বিজিত-জেতু সম্প্ৰবন্ধ থাকিবে, ততদিন আমরা নিকৃষ্ট হইয়াও পািব্বগৌরব মনে রাখিব, ততদিন জাতিবৈর-সমতার সম্পভাবনা নাই। এবং আমরা কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করি যে, যতদিন ইংরেজের সমতুল্য না হই, ততদিন যেন আমাদিগের মধ্যে এই জাতিবৈরিতার প্রভাব এমনই প্ৰবল থাকে। যতদিন জাতিবৈর আছে, ততদিন প্রতিযোগিতা আছে। বৈরভাবের নিমিত্তই আমরা ইংরেজাদিগের কতক কতক সমতুল্য হইতে যত্ন করিতেছি। ইংরেজের নিকট অপমানগ্ৰস্ত, উপহাসিত হইলে, যত দর। আমরা তাহদের সমকক্ষ হইবার যত্ন করিব, তাঁহাদিগেব কাছে বাপ-বাছা ইত্যাদি আদর পাইলে তত দীর করিব না—কেন না সে গায়ের জবালা থাকিবে না। বিপক্ষের সঙ্গে প্রতিযোগিতা ঘটে, স্বপক্ষের সঙ্গে নহে। উন্নত শত্র উন্নতির উদ্দীপক, উন্নত বন্ধ আলস্যের আশ্রয়। আমাদিগের সৌভাগ্যক্রমেই ইংরেজের সঙ্গে আমাদিগের জাতিবৈর ঘটিয়াছে।” (সাধারণী, ১১ কাত্তিক ১২৮o : “জাতিবৈর”) ইহার অব্যবহিত পরে, ১৮৭৪ সনের জানিয়ারীর প্রথমে বঙ্কিমচন্দ্র বহরমপরে কৰ্ণেল ডফিন নামক একজন সেনানীর হস্তে বিশেষভাবে লাঞ্ছিত হন। আত্মসম্পমানবোধসম্পন্ন হাকিম বঙ্কিম ডফিনের নামে আদালতে ফৌজদারী মামলা রজ করিলেন। ডফিন প্রকাশ্য আদালতে তাঁহার নিকট ক্ষমা চাহিয়া নিম্প্রকৃতিলাভ করিল। বাঙালী মাত্রেই তখন বঙ্কিমচন্দ্রের অপমান জাতীয় অপমান বলিয়া জ্ঞান করিয়াছিলেন। ডফিনের ক্ষমা প্রার্থনায় শািন্ধ বণ্ডিকমের নহে, বাঙালীর জাতীয় ময্যাদা বন্ধিপ্ৰাপত হইল। ১৮৭৩ সনে পাবনা-সিরাজগঞ্জে প্রজা-বিদ্রোহ হয়। ইহার পক্বে বঙ্কিম “বঙ্গদেশের কৃষক’ নামে একটি ধারাবাহিক প্রবন্ধে কৃষকের দঃখ-দন্দ শার কথা বিস্তৃতভাবে আলোচনা করিয়া প্ৰতিকারের উপায় নিন্দেশ করেন। ইহার পরে উক্ত বিষয় লইয়া “সাম্য” শীৰ্ষক আরও কয়েকটি প্ৰবন্ধ প্রকাশিত হয়। বঙ্গদেশের সত্যিকার উন্নতি বলিতে কৃষক শ্রেণীর উন্নতি—তাহা এই সকল প্রবন্ধের প্রতিপাদ্য বিষয়। রমেশচন্দ্র দত্তও পাবনা-সিরাজগঞ্জের প্রজা-বিদ্রোহ উপলক্ষ্য করিয়া 'Arcyde” (R.C.D.) ছদ্মনামে লালবিহারী দের “বেগুগল ম্যাগাজিনে” বাংলার ভূমি ব্যবস্থার আমলে সংস্কারের বিষয় উল্লেখ করেন। এই সকল যান্তিপণে আলোচনার ফলেই পরবত্তীর্ণ দশকে ভূমিসংস্কারমােলক প্রজাস্বত্ব আইন সরকার কর্তৃক বিধিবদ্ধ হয়। ইহার পরে বণ্ডিকমচন্দ্র “বঙগদশ্যনে” কমলাকান্ত মারফত বাঙগালীকে সর্বদেশপ্ৰেম মন্ত্রে দীক্ষা দিতে অগ্রণী হইলেন। “আমার দাগোৎসব" নিবন্ধে কমলাকান্তের মখ দিয়া মাতৃভূমির উদ্দেশ্যে তিনি বলাইলেন : “চিনিলাম, এই আমার জননী জন্মভূমি—এই মন্ময়ী-মাত্তিকার পিণী—অনন্তরত্নভূষিতা—এক্ষণে কালগভে নিহিতা। রত্নমন্ডিত দশ ভুজ-দশ দিক —দশ দিকে প্রসারিত, তাহাতে নানা আয়ধরপে নানা শক্তি শোভিত; পদতলে শত্র বিমন্দিত, বীরজন কেশরী শত্রনিৎপীড়নে নিযক্ত ! এ মাত্তি এখন দেখিব না-আজি দেখিব না, কাল দেখিব না-কালস্রোত পার না হইলে দেখিব না-কিন্তু এক দিন SR JR