পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/২৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙিকম রচনাবলী কবি। সবগের সিড়ি আছে। লক্ষযোজন সিড়ি ভাঙিগয়া সবগে উঠতে হয়। আমার এই মেঘদতকাব্য-সবগেরও সিড়ি আছে—এই নীরস কবিতাগলিন সেই সিড়ি। তুমি এই সামান্য সিড়ি ভাঙিগতে পারিলে না—তবে লক্ষযোজন সিড়ি ভাঙিগবে কি প্রকারে ? মালিনী তখন ব্ৰহ্মশাপে স্বৰ্গ হারাইবার ভয়ে ভীত হইয়া, আদ্যোপােন্ত মেঘদত শ্রবণ করিল। শ্রবণান্তে প্ৰীতা হইয়া, পরদিন মদনমোহিনী নামে বিচিত্রা মালা গাঁথিয়া আনিয়া কবি শিরে পরাইয়া গেল । আমার এই সামান্য কাব্য সবগ ও নয়-—ইহার লক্ষযোজন সিড়িও নাই। রসও অলপ, সিড়িও ছোট। এই নীরস পরিচ্ছেদ কয়টি সেই সিড়ি। যদি পাঠকশ্রেণীমধ্যে কেহ মালিনীচরিত্র থাকেন, তবে তাঁহাকে সতকা করিয়া দিই যে, তিনি এ সিড়ি না ভাঙিগলে সে রসমধ্যে প্রবেশলাভ করিতে পরিবেন না। সােয্যমখীর পিত্ৰালয় কোন্নগর। তাঁহার পিতা এক জন ভদ্ৰ কায়স্থ : কলিকাতায় কোন হোসে কেশিয়ারি করিতেন। সােয্যমখনী তাঁহার একমাত্র সন্তান । শিশীকালে শ্ৰীমতী নামে এক বিধবা কায়স্থকন্যা দাসীভাবে তাঁহার গহে থাকিয়া সােয্যমখনীকে লালনপালন করিত। শ্ৰীমতীব একটি শিশাসন্তান ছিল, তাহারই নাম তারাচরণ। সে সয্যেমখীর সমবয়স্ক। সােয্যমখী তাহার সহিত বাল্যকালে খেলা করিতেন এবং বাল্যসখিত্ব প্রযক্ত তাহার প্রতি তাঁহার ভ্রাতৃবৎ স্নেহ জন্মিয়াছিল। শ্ৰীমতী বিশেষ রপবতী ছিল, সতরাং অচিরাৎ বিপদে পতিত হইল। গ্রামস্থ একজন দশচরিত্র ধনী ব্যক্তির চক্ষে পড়িয়া সে সৰ্য্যেমখনীর পিতার গহ ত্যাগ করিয়া গেল। কোথায় গেল, তাহা কেহ বিশেষ জানিতে পারিল না। কিন্তু শ্ৰীমতী আর ফিরিয়া আসিল না। শ্ৰীমতী তারাচরণকে ফেলিয়া গিয়াছিল। তারাচরণ সমৰ্য্যমখীর পিতৃগ হে রহিল । সৰ্য্যেমখনীর পিতা অতি দয়ালচিত্ত ছিলেন। তিনি ঐ অনাথ বালককে আত্মসন্তানবৎ প্রতিপালন করিলেন, এবং তাহাকে দাসত্বাদি কোন হীনবত্তিতে প্রবত্তিত না করিয়া, লেখাপড়া শিক্ষায় নিযক্ত করিলেন। তারাচরণ এক অবৈতনিক মিশনারি স্কুলে ইংরেজী শিখিতে লাগিল। পরে সােয্যমখনীর বিবাহ হইল। তাহার কয়েক বৎসর পরে তাঁহার পিতার পরলোক হইল । তখন তারাচরণ এক প্রকার মোটামটি ইংরেজী শিখিয়াছিলেন, কিন্তু কোন কৰ্ম্মকায্যে সংবিধা করিয়া উঠিতে পারেন নাই। সত্যািমদুখীর পিতৃপরলোকের পর নিরাশ্রয় হইয়া, তিনি সহেযািমদুখীর কাছে গেলেন। সাষ্যমখেী, নগেন্দ্রকে প্রবত্তি দিয়া গ্রামে একটি স্কুল সংস্থাপিত করাইলেন। তারাচরণ তাহাতে মাস্টার নিযক্ত হইলেন। এক্ষণে গ্রাণট ইন এডের প্রভাবে গ্রামে গ্রামে তেড়িকাটা, টপাবাজ নিরীহ ভােলমানষে মাশুটার বাবরা বিরাজ করিতেছেন, কিন্তু তৎকালে সচরাচর “মাস্টার বাব!” দেখা যাইত না। সতরাং তারাচরণ একজন গ্রাম্য দেবতার মধ্যে হইয়া উঠিলেন। f{CerS2 fin Citizen of the World are Spectator fis: rig (Giri, are for <3 জিওমেট্রি তাঁহার পঠিত থাকার কথাও বাজারে রাষ্ট্র ছিল। এই সকল গণে তিনি দেবীপরনিবাসী জমিদার দেবেন্দ্র বাবার ব্রাহ্মসমাজভুক্ত হইলেন, এবং বাবর পারিষদমধ্যে গণ্য হইলেন। সমাজে তারাচরণ বিধবাবিবাহ, সত্ৰীশিক্ষা এবং পৌত্তলিকবিদ্বেষাদি সম্পবন্ধে অনেক প্রবন্ধ লিখিয়া, প্রতি সপতাহে পাঠ করিতেন, এবং “হে পরমকারণিক পরমেশবর !" এই বলিয়া আরম্ভ করিয়া দীঘ দীঘ বস্তৃতা করিতেন। তাহার কোনটা বা তত্ত্ববোধিনী হইতে নকল করিয়া লইতেন, কোনটা বা স্কুলের পন্ডিতের দবারা লেখাইয়া লইতেন। মসুখে সৰ্ব্বদা বলিতেন, “তোমরা ইটপাটখেলের পজা।” ছাড়, খড়ী জ্যেঠাইমার বিবাহ দাও, মেয়েদের লেখাপড়া শিখাও তাহদের পিজরায় পরিয়া রাখা কেন ? মেয়েদের বাহির কর।” সন্ত্রীলোক সম্বন্ধে এতটা লিবরালিটির একটা বিশেষ কারণ ছিল, তাঁহার নিজের গহি সত্ৰীলোকশন্য। এ পয্যন্ত তাঁহার বিবাহ হয় নাই ; সােয্যমখেী তাঁহার বিবাহের জন্য অনেক যত্ন করিয়াছিলেন, কিন্তু তাঁহার মাতার কুলত্যাগের কথা গোবিন্দপরে প্রচার হওয়ায় কোন ভদ্ৰ কায়সােথ তাঁহাকে কন্যা দিতে সম্মত হয় নাই। অনেক ইত্যর কায়স্থের কালো কুৎসিত কন্যা পাওয়া গেল। কিন্তু সােয্যমখনী তারাচরণকে ভ্ৰাতৃবং ভাবিতেন, কি প্রকারে ইতর লোকের কন্যাকে ভাইজ বলিবেন, এই ভাবিয়া তাহাতে সক্ষমত হন নাই। কোন ভদ্ৰ কায়সেথর সরোপা কন্যার সন্ধানে ছিলেন, এমত কালে নগেন্দ্রের পত্রে কুন্দনন্দিনীর রােপগণের কথা জানিয়া তাহারই সঙেগ তারাচরণের বিবাহ দিবেন, সিথর করিলেন। ミV げ