পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/২৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ब७कभ ज्ञानादब्नी তাই বাজাই বাঁশী ঘরে ঘরে। যখন রাধে বলে বাজে বাঁশী, তখন নয়নজলে আপনি ভাসি। তুমি যদি না চাও ফিরে, তবে যাব সেই যমনাতীরে, ভাঙ্গবো বাঁশী তেজবো প্ৰাণ, এই বেলা তোর ভাঙগক মান। ব্রজের সখে, রাই, দিয়ে জলে, বিকাইন পদতলে, এখন চরণানপর বেধে গলে, পশিব যমনা-জলে।” গীত সমাপত হইলে বৈষ্ণবী কুন্দনন্দিনীর মািখপ্রতি চাহিয়া বলিল, “গীত গাইয়া আমার মািখ শকাইতেছে। আমায় একট, জল দাও।” কুন্দ পাত্রে করিয়া জল আনিল। বৈষ্ণবী কহিল, “তোমাদিগের পাত্র আমি ছাইব না ! আসিয়া আমার হাতে ঢালিয়া দাও, আমি জাতি বৈষ্ণবী নাহি ।” ইহাতে বৰ্ব্বাইল, বৈষ্ণবী পাবে কোন অপবিত্ৰজাতীয়া ছিল, এক্ষণে বৈষ্ণবী হইয়াছে। এই কথা শনিয়া কুন্দ তােহর পশ্চাৎ পশ্চাৎ জল ফেলিবার যে সস্থান, সেইখানে গেল। যেখানে অন্য সত্ৰীলোকেরা বসিয়া রহিল, সেখান হইতে ঐ স্থান এরােপ ব্যবধােন যে, তথায় মদ, মদ, কথা কহিলে কেহ শানিতে পায় না। সেই সন্থানে গিয়া কুন্দ বৈষ্ণবীর হাতে জল ঢালিয়া দিতে লাগিল, বৈষ্ণবী হাত মািখ ধাইতে লাগিল। ধইতে ধাইতে অন্যের অশ্রাতস্বরে বৈষ্ণবী মন্দ মদ বলিতে লাগিল, “তুমি নাকি গা কুন্দ ?” কুন্দ বিস্মিতা হইয়া জিজ্ঞাসা করিল, “কোন গা ?” বৈ । তোমার শাশড়ীকে কখন দেখিয়াছ ? কু। না । কুন্দ শনিয়াছিল যে, তাহার শাশড়ী ভ্ৰমেটা হইয়া দেশত্যাগিনী হইয়াছিল। বৈ । তোমার শাশড়ী এখানে আসিয়াছেন। তিনি আমার বাড়ীতে আছেন, তোমাকে একবার দেখবার জন্য বড়ই কাঁদিতেছেন—আহা! হাজার হোক শাশড়ী। সে ত আর এখানে আসিয়া তোমাদের গিন্নীর কাছে সে পোড়ার মািখ দেখাতে পারবে না।--তা তুমি একবার কেন আমার সঙ্গে গিয়ে তা’কে দেখা দিয়ে এস না ? কুন্দ সরলা হইলেও, বঝিল যে, সে শাশড়ীর সঙ্গে সম্প্ৰবন্ধ স্বীকারই অকৰ্ত্তব্য। অতএব বৈষ্ণবীর কথায় কেবল ঘাড় নাড়িয়া অস্বীকার করিল। কিন্তু বৈষ্ণবী ছাড়ে না—পােনঃপনাঃ উত্তেজনা করিতে লাগিল। তখন কুন্দ কহিল, “আমি গিন্নীকে না বলিয়া যাইতে পারিব না।” হরিদাসী মানা করিল। বলিল, “গিন্নীকে বলিও না। যাইতে দিবে না। হয়ত তোমার শাশড়ীকে আনিতে পাঠাইবে। তাহা হইলে তোমার শাশড়ী দেশ ছাড়া হইয়া পালাইবে।” বৈষ্ণবী যতই দার্ট্য প্রকাশ করােক, কুন্দ কিছতেই সােয্যমখনীর অনুমতি ব্যতীত যাইতে সম্মত হইল না । তখন অগত্যা হরিদাসী বলিল, “আচ্ছা। তবে তুমি গিন্নীকে ভাল করিয়া বলিয়া রেখা। আমি আর একদিন আসিয়া লইয়া যাইব; কিন্তু দেখো, ভাল করিয়া বলো; আর একটা কাঁদাকাটা করিও ; নাহিলে হইবে না।” কুন্দ ইহাতে স্বীকৃত হইল না, কিন্তু বৈষ্ণবীকে হাঁ কি না, কিছ: বলিল না। তখন হরিদাসী হস্তমখপ্রক্ষালন সমাপত করিয়া অন্য সকলের কাছে ফিরিয়া আসিয়া পরিস্কার চাহিল। এমত সময়ে সেইখানে সাহায্যমখেী আসিয়া উপস্থিত হইলেন। তখন বাজে কথা একেবারে বন্ধ হইল, অলপবয়স্কারা সকলেই একটা কাজ লইয়া বসিল । সােয্যমখী হরিদাসীকে আপাদমস্তক নিরীক্ষণ করিয়া কহিলেন, “তুমি কে গা ?” তখন নগেন্দ্রের এক মামী কহিলেন, “ও একজন বৈষ্ণবী, গান করিতে এসেছে। গান যে সন্দর গায়! 18ܘ ܓ