পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/২৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিষবক্ষ নিকট অপরাধী। কিন্তু ইহাও বঝিতে পারি যে, আমি তাঁহার মনে স্থান পাই না। যত্ন এক, ভালবাসা আর, ইহার মধ্যে প্রভেদ কি-আমরা সত্ৰীলোক সহজেই বঝিতে পারি। আর একটা হাসির কথা। ঈশবর বিদ্যাসাগর নামে কলিকাতায় কে না কি বড় পন্ডিত আছেন, তিনি আবার একখানি বিধবাবিবাহের বহি বাহির করিয়াছেন। যে বিধবার বিবাহের ব্যবস্থা দেয়, সে যদি পন্ডিত, তবে মািখ কে ? এখন বৈঠকখানায় ভট্টাচাৰ্য্যা ব্ৰাহ্মণ আসিলে সেই গ্রন্থ লইয়া বড় তক-বিতকা হয়। সে দিন ন্যায়-কাচকচি ঠাকুর, মা সরস্বতীর সাক্ষাৎ বরপত্র, বিধবাবিবাহের পক্ষে তক করিয়া বাবার নিকট হইতে টোল মেরামতের জন্য দশটি টাকা লইয়া যায়। তাহার পরদিন সব্বভৌম ঠাকুর বিধবাবিবাহের প্রতিবাদ করেন। তাঁহার কন্যার কৃষ্ণুর না। আমি পাঁচ ভরির সােণার বালা গড়াইয়া দিয়াছি। আর কেহ বড় বিধবাবিবাহের নয় । আপনার দঃখের কথা লইয়া তোমাকে অনেকক্ষণ জবালাতন করিয়াছি। তুমি না জানি কত বিরক্ত হইবে ? কিন্তু কি করি ভাই—তোমাকে মনের দঃখ না বলিয়া কাহাকে বলিব ? আমার কথা এখনও ফরায় নাই—কিন্তু তোমার মািখ চেয়ে আজ ক্ষান্ত হইলাম। এ সকল কথা কাহাকেও বলিও না। আমার মাথার দিব্য, জামাই বাবকেও এ পত্র দেখাইও না। তুমি কি আমাদিগকে দেখিতে আসিবে না ? এই সময় একবার আসিও, তোমাকে পাইলে অনেক ক্লেশ নিবারণ হইবে। তোমার ছেলের সংবাদ ও জামাই বাবার সংবাদ শীঘ্ৰ লিখিবো। ইতি। সহেযািমখী। পােনশচ। আর এক কথা—পাপ বিদায় করিতে পারিলেই বাঁচ। কোথায় বিদায় করি ? তুমি নিতে পাের ? না ভয় করে ?” কমল প্রত্যুত্তরে লিখিলেন,-- “তুমি পাগল হইয়ােছ। নচেৎ তুমি স্বামীর হৃদয়প্রতি আবিশবাসিনী হইবে কেন ? স্বামীর প্রতি বিশদ্বাস হারাইও না। আর যদি নিতান্তই সে বিশ্ববাস না রাখতে পার—তবে দীঘির জলে ডুবিয়া মর। আমি কমলমণি তক সিদ্ধান্ত ব্যবস্থা দিতেছি, তুমি দাঁড় কলসী লইয়া জলে ডুবিয়া মরিতে পার। স্বামীর প্রতি যাহার বিশ্ববাস রহিল না—তাহার মরাই মঙ্গল।” দ্বাদশ পরিচ্ছেদ ঃ অঙ্কুর দিন কয় মধ্যে, ক্ৰমে ক্ৰমে নগেন্দ্রের সকল চরিত্র পরিবত্তিত হইতে লাগিল। নিম্পমাল আকাশে মেঘ দেখা দিল—নিদাঘকালের প্রদোষাকাশের মত, অকস্মাৎ সে চরিত্র মেঘাবত হইতে লাগিল। দেখিয়া সহেযািমখী গোপনে আপনার অঞ্চলে চক্ষ মাছিলেন। সােয্যমখী ভাবিলেন, “আমি কমলের কথা শনিব। স্বামীর চিত্তপ্রতি কেন অবিশবাসিনী হইব ? তাঁহার চিত্ত আচলপিববর্ত— আমিই ভ্ৰান্ত বোধ হয়। তাঁহার কোন ব্যামোহ হইয়া থাকিবে।” সােয্যমখী বালির বাঁধ বধিল । বাড়ীতে একটি ছোট রকম ডাক্তার ছিল। সত্যািমখী গহিণী। অন্তরালে থাকিয়া সকলের সঙেগই কথা কহিতেন। বারেণডার পাশে এক চিক থাকিত; চিকের পশ্চাতে সহেযািমদুখী থাকিতেন। বারেন্ডায় সম্বোধিত ব্যক্তি থাকিত ; মধ্যে এক দাসী থাকিত : তাহার মাখে। সােয্যমখনী কথা কহিতেন। এইরপে সৰ্য্যেমখী ডাক্তারের সঙ্গে কথা কহিঁতেন। সত্যািমখী তাহাকে ডাকাইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “বাবর অসংখ হইয়াছে, ঔষধ দাও না কেন ?" ডাক্তার। কি অসখ্য, তাহা ত আমি জানি না। আমি ত অসখের কোন কথা শনি নাই। স। বােব কিছ বলেন নাই ? ডা। না—কি অসখি ? স। কি অসখ, তাহা তুমি ডাক্তার, তুমি জান না—আমি জানি ? ডাক্তার সতরাং অপ্রতিভ হইল। “আমি গিয়া জিজ্ঞাসা করিতেছি,” এই বলিয়া ডাক্তার প্রস্থানের উদ্যোগ করিতেছিল, সােয্যমখী তাহাকে ফিরাইলেন, বলিলেন, “‘বাবকে কিছ. জিজ্ঞাসা করিও না।--ঔষধ দাও।” SCAN)