পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সীতারাম সমাজ ও সাধক সম্মিলিত হইলে কেমন করিয়া একটা State বা সর্বতন্ত্র শাসন সন্ট হইতে পারে, তাহার। পয্যায় দেখাইয়াছেন।” (পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচনাবলী, পঃ ১৩৪-৫ বঙ্গীয়সাহিত্য-পরিষৎ-সংস্করণ) সেই সময় একদল লোক কংগ্রেসকে খবই ব্যঙ্গ-বিদ্রপ করিত। কেহ কেহ রটাইত যে, বঙ্কিমচন্দ্র কংগ্রেস-বিরোধী। রাজকায্য হইতে অবসর লাইবার পর কংগ্রেসে যোগদান করিয়া তিনি ইহাকে শক্তিশালী করিবেন—অনেকে এই রােপ আশা করিয়াছিল। বিজয়লাল দত্ত কর্তৃক কংগ্রেসে যোগদান সম্পকে জিজ্ঞাসিত হইয়া বণ্ডিকমচন্দ্র বলেন : “কংগ্রেসের প্রতি আমার সহানভূতি নাই, একথা আমি কখনই বলিতে পারি না—উহার উদ্দেশ্য অতি মহৎ, তদিবষয়ে কাহারও কোন সন্দেহ নাই; কিন্তু যে প্রণালীতে উহার কায্য পরিচালিত হইতেছে, আজ পৰ্য্যন্ত উহা সাধারণের যোগদানের উপযন্ত হয় নাই। উহার সমস্ত আন্দোলন যেন ক্ষণস্থায়ী ও অন্তঃসারশন্য বলিয়া প্রতীয়মান হয়। উহা এখনও সমস্ত দেশের লোকের সাধারণ সম্পত্তি হয় নাই। দেশের সাধারণ লোকদিগকে দরে ও অন্ধকারে রাখিয়া কতিপয় শিক্ষিত লোকের অভিপ্রায় অন্যরাপ কায্য সাধিত হইলে কখনই উহার গৌরব বন্দিধত হইবে না এবং দেশের লক্ষ লক্ষ লোক কখনই উহার আবশ্যকতা ও মহত্ত্ব অনভব করিতে সমর্থ হইবে না।...” (“ভারতী’, আষাঢ়, ১৩০১), পঃ ১৭৩) সখের বিষয়, বঙ্কিমচন্দ্র, যেমনটি চাহিয়াছিলেন। পরবত্তীকালে কংগ্রেস সেইরূপই জনসাধারণের প্রতিস্ঠান হইয়া দাঁড়ায় এবং বিবিধ গণ-আন্দোলন দবারা ভারতের মন্তি আনয়ন করিতে সমর্থ হয়। শেষ জীবন : শেষ জীবনে কলিকাতায় সন্থায়ীভাবে বসবাসের মানসে বণ্ডিকমচন্দ্র। ১৮৮৭ সনের জানায়ারী মাসে কলিকাতা মেডিকেল কলেজের সম্মখে প্ৰতাপ চ্যাটয্যের গলিতে একটি বাটী ক্ৰয় করেন। ইহার পরও, অবসর গ্রহণের পািকব পৰ্যন্ত কৰ্ম্মোপলক্ষে তাঁহাকে নানা স্থানে যাইতে হইয়াছে, তবে বেশীর ভাগ সময় এখানেই তিনি থাকিতে পারিয়াছিলেন। উক্ত সনের মাচ্চ মাসে জ্যোিঠ শ্যামাচরণ ও সঞ্জীবচন্দ্রের সঙেগ তিনি উত্তর ভারত ভ্ৰমণে বাহির হন। মিজাপাের, বিন্ধ্যাচল, কাশী ও আগ্রা হইয়া তাঁহারা মাথারা বান্দাবন অবধি গিয়াছিলেন। শেষোক্ত স্থান হইতে শ্যামাচরণ একা জয়পরে চলিয়া যান। বঙ্কিম ও সঞ্জীবচন্দ্র একযোগে ং এলাহাবাদে ফিরিয়া আসেন। এপ্রিলের প্রথমেই বণ্ডিকম কলিকাতায় প্রত্যাবত্তন করিলেন। বঙিকমচন্দ্র। ১৮৯১, ১৪ই সেপ্টেম্বর পয্যন্ত সরকারী কমে লিপিত থাকিয়া অবসর গ্রহণ করেন। ইহার পর তিনি কলিকাতায়ই বসবাস করিতে থাকেন। বহরমপর, কাঁটালপাড়া, হগলী—তিনি এতকাল যেখানেই ছিলেন, সেখানেই তাঁহার গহে সাহিত্যিকগণ। জড় হইতেন এবং সাহিত্যালোচনায় রত থাকিতেন। এখন, কলিকাতার বাসভবন সাহিত্যিকদের আগমনে সরগরম হইয়া উঠিল। বঙ্কিম-গােহ তরণ সাহিত্যিকগণের তীর্থক্ষেত্রে পরিণত হইল। রবীন্দ্রনাথ হইতে সরেশ সমাজপতি পয্যন্ত বহন তরণ ও উদীয়মান সাহিত্যসেবী আসিয়া বঙ্কিমের সঙ্গে সাহিত্যালোচনায় প্রবত্ত হইতেন। বষনীয়ান প্রাজ্ঞবর বঙ্কিমচন্দ্রের উপদেশ তাঁহাদের প্রাণে নব নব আশা-আকাঙক্ষা ও অন্য প্রেরণার সঞ্চার করিত। বঙ্কিমচন্দ্ৰ কলিকাতা বিশববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট কর্তৃক অনািরদ্ধে হইয়া প্রবেশিকা পরীক্ষাথীদের জন্য ১৮৯২ সনে Bengali Selection্য প্রকাশ করেন। এই সময়ে তিনি কলিকাতা বিশববিদ্যালয়ে বাংলাকে পরীক্ষণীয় বিষয়সমহের অন্তভুক্ত করিবার জন্য বিশেষ চেস্টা করিয়াছিলেন। ১৮৯২ সনে রবীন্দ্রনাথের “শিক্ষার হেরফের” (“সাধনা', পৌষ ১২৯৯-এ প্রকাশিত) সম্পপণ সমর্থনা করিয়া বঙ্কিমচন্দ্র তাঁহাকে একখানি পত্র লিখিয়াছিলেন। রবীন্দ্রনাথের মন্তব্য সমেত উন্তু পত্রের কিয়দংশ পরবত্তীৰ্ণ চৈত্র সংখ্যা ‘সাধনায়।” প্রকাশিত হয়। বণ্ডিকমচন্দ্র লেখেন : “পৌষ মাসের সাধনায় প্রকাশিত শিক্ষা সম্প্ৰবন্ধীয় প্রবন্ধটি আমি দই বার পাঠ করিয়াছি। প্রতি ছত্রে আপনার সঙ্গে আমার মতের ঐক্য আছে। এ বিষয় আমি অনেকবার অনেক সম্ভ্রান্ত ব্যক্তির নিকট উত্থাপিত করিয়াছিলাম, এবং একদিন সেনেট হলে দাঁড়াইয়া কিছ বলিতে চেন্টা করিয়াছিলাম।” এখানে উল্লেখযোগ্য যে, বঙ্কিমচন্দ্র ১৮৮৫ সনে কলিকাতা বিশ্বববিদ্যালয়ের সেনেটের সভ্য হইয়াছিলেন। অবসর গ্রহণ করিয়াও বঙ্কিমচন্দ্ৰ সাহিত্যসেবা হইতে কখনও বিরত হন। চুই৷ SR 8