পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৩০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ब७कभ ब्रा5नावब्ली সেদিন ছল করিয়া বাবদের বাড়ীতেই আসিয়া বসে। দাসীমহলে পাঁচ রকম কথা পাড়িয়া, অভিপ্রায় সিদ্ধ করিয়া চলিয়া যায়। এইরূপে কিছু দিন গেল। কিন্তু এক দিন একটি গোলযোগ উপস্থিত হইবার সম্পভাবনা छ्छेशा - দেবেন্দ্রের নিকট হীরার পরিচয়াবধি, হীরার বাড়ী মালতী গোয়ালিনীর কিছ ঘন ঘন যাতায়াত হইতে লাগিল। মালতী দেখিল, তাহাতে হীরা বড় সন্তুষ্পটা নহে। আরও দেখিল, একটি ঘর প্রায় বন্ধ থাকে। সে ঘরে, হীরার বদ্ধির প্রাখিয্য হেতু, বাহির হইতে শিকল এবং তাহাতে তালা চাবি অাঁটা থাকিত, কিন্তু এক দিন অকস্মাৎ মালতী আসিয়া দেখিল, তালা চাবি দেওয়া নাই। মালতী হঠাৎ শিকল খালিয়া দয়ার ঠেলিয়া দেখিল। দেখিল, ঘর ভিতর হইতে বন্ধ। তখন সে বঝিল, ইহার ভিতর মানষে থাকে। মালতী হীরাকে কিছ, বলিল না, কিন্তু মনে মনে ভাবিতে লাগিল—মানষটা কে ? প্রথমে ভাবিল, পরষ মানষ। কিন্তু কে কার কে, মালতী সকলই তা জানিত—এ কথা সে বড় মনে সথান দিল না। শেষে তাহার মনে মনে সন্দেহ হইল—কুন্দই বা এখানে আছে। কুন্দের নিরদেশ হওয়ার কথা মালতী সকলই শনিয়াছিল। এখন সন্দেহ ভঞ্জনাথ শীঘ্ৰ সদ্যপায়। করিল। হীরা বাবদিগের বাড়ী হইতে একটি হরিণশিশ, আনিয়াছিল । * সেটি বড় চঞ্চল বলিয়া বাঁধাই থাকিত। এক দিন মালতী তাহাকে আহার করাইতেছিল। আহার করাইতে করাইতে হীরার অলক্ষ্যে তাহার বন্ধন খলিয়া দিল। হরিণশিশ, মক্ত হইবামাত্ৰ বেগে বাহিরে পলায়ন করিল। দেখিল, হীরা ধরিবার জন্য তাহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ গেল । হীরা যখন ছটিয়া যায়, মালতী তখন ব্যগ্রস্বরে ডাকিতে লাগিল, “হীরে! ও হীরে । ও গঙ্গাজল!” হীরা দরে গেলে মালতী আছাড়িয়া কাঁদিয়া উঠিল, “ও মা! আমার গঙ্গাজল এমন হলো কেন ?” এই বলিয়া কাঁদিতে কাঁদিতে কুন্দের দবারে ঘা মারিয়া কাতর সবরে বলিতে লাগিল, “কুন্দ ঠাকরণ! কুন্দ! শীঘ বাহির হও! গঙ্গাজল কেমন হয়েছে।" সতরাং কুন্দ ব্যস্ত হইয়া দবার খছিল। মালতী তাহাকে দেখিয়া হি হি করিয়া হাসিয়া পলাইল। কুন্দ দাবার রন্ধ করিল। পাছে হীরা তিরস্কার করে বলিয়া হীরাকে কিছ: বলিল না। মালতী গিয়া দেবেন্দ্রকে সন্ধান বলিল। দেবেন্দ্র স্থির করিলেন, স্বয়ং হীরার বাড়ী গিয়া এসপার কি ওসপার, যা হয একটা করিয়া আসিবেন। কিন্তু সে দিন একটা “পার্টিা” ছিল— সতরাং জটিতে পারিলেন না। পর দিন যাইবেন। ত্রয়োবিংশ পরিচ্ছেদ ঃ পিঞ্জরের পাখী কুন্দ এখন পিঞ্জরের পাখী—“সতত চঞ্চল।” দাইটি ভিন্ন দিগভিমখগামিনী স্রোতস্বতী পরস্পর প্রতিহত হইলে স্রোতো বেগ বাড়িয়াই উঠে। কুন্দের হৃদয়ে তাহাই হইল। এদিকে মহালজা—অপমান—তিরস্কার—মািখ দেখাইবার উপায় নাই—সিযেমখনী ত বাড়ী হইতে দর করিয়া দিয়াছেন। কিন্তু সেই লডজাস্রোতের উপরে প্রণয়স্রোত আসিয়া পড়িল। পরস্পর প্রতিঘাতে প্ৰণয়প্রবাহই বাড়িয়া উঠিল। বড় নদীতে ছোট নদী ডুবিয়া গেল। সােয্যমখীকৃত অপমান ক্ৰমে বিলপতি হইতে লাগিল। সত্যািমখী আর মনে স্থান পাইলেন না—নগেন্দ্ৰই সৰ্ব্বত্র। ক্ৰমে কুন্দ ভাবিতে লাগিল, “আমি কেন সে গহ ত্যাগ করিয়া আসিলাম ? দটাে কথায় আমার কি ক্ষতি হইয়াছিল ? আমি ত নগেন্দ্রকে দেখিতাম। এখন যে একবারও দেখিতে পাই মা । তা আমি কি আবার ফিরে সে বাড়ীতে যাব ? তা যদি আমাকে তাড়াইয়া না দেয়, তবে আমি যাই। কিন্তু পাছে আবার তাড়াইয়া দেয় ?” কুন্দনন্দিনী দিবানিশি মনোমধ্যে এই চিন্তা করিত। দত্ত গহে প্রত্যাগমন কত্তব্য কি না, এ বিচার আর বড় করিত না-সেটা দই চারি দিনে স্থির সিদ্ধান্ত হইল যে, যাওয়াই কৰ্ত্তব্য—নহিলে প্ৰাণ যায়। তবে গেলে সােয্যমখী পানশাচ দারীকৃত করিবে কি না, ইহাই বিবেচ্য হইল। শেষে কুন্দের এমনই দন্দশা হইল যে, সে সিদ্ধান্ত করিল, সােয্যমখী দারীকৃতই করােক আর যাই করােক, যাওয়াই স্থির। কিন্তু কি বলিয়া কুন্দ আবার গিয়া সে গািহ-প্রাঙ্গণে দাঁড়াইবে ? একা ত যাইতে বড় লজিজা করে—তবে হীরা যদি সঙ্গে করিয়া লইয়া যায়, তা হলে যাওয়া হয়। কিন্তু হীরাকে মািখ ফটিয়া বলিতে বড় লজা করিতে লাগিল। মািখ ফটিয়া বলিতেও পারিল না। V) OO