পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৩১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ब७िकभ ब्रश्नावली দীঘিকার প্রদোেষবায় সন্তাড়িত স্বচ্ছ জলের উপর নাচিতেছে। উদ্যানপল্পের সৌরভে আকাশ উন্মাদকর হইয়াছিল। এমত সময় হীরা অকস্মাৎ লতামন্ডপমধ্যে পরষমতি দেখিতে পাইল । চাহিয়া দেখিল যে, সে দেবেন্দ্র। আদ্য দেবেন্দ্র ছদ্মবেশী নহেন, নিজবেশেই আসিয়াছেন। হীরা বিস্মিত হইয়া কহিল, “আপনার এ অতি দঃসাহস। কেহ দেখিতে পাইলে আপনি মারা পড়িবেন।” দেবেন্দ্র বলিলেন, “যেখানে হীরা আছে, সেখানে আমার ভয় কি ? "" এই বলিয়া দেবেন্দ্ৰ হীরার পাশে বা বসিলেন। হীরা চরিতাৰ্থ হইল। কিয়ৎক্ষণ পরে কহিল, “কেন। এখানে এসেছেন । যার আশায় এসেছেন, তার দেখা পাইবেন না।” “তা ত পাইয়াছি। আমি তোমারই আশায় এসেছি। ” হীরা লব্ধ চাটকারের কপটালাপে প্রতারিত না হইয়া হাসিল এবং কহিল, “আমার কপাল যে এত প্ৰসন্ন হইয়াছে, তা ত জানি না। যাহা হউক, যদি আমার ভাগ্যই ফিরিয়াছে, তবে যেখানে নিঅকণাটকে বসিয়া আপনাকে দেখিয়া মনের তৃপিত হইবে, এমন সথানে যাই চলন। এখানে অনেক বিঘা।” দেবেন্দ্ৰ বলিলেন, “কোথায় যাইব ? “ হীরা বলিল, যেখানে কোন ভয় নাই। আপনার সেই নিকুঞ্জ বনে চলনি।“ দে। তুমি আমার জন্য কোন ভয় করিও না। হী। যদি আপনার জন্য ভয় না থাকে, আমার জন্য ভয় করিতে হয়। আমাকে আপনার কাছে কেহ দেখিলে, আমার দশা কি হইবে ? দেবেন্দ্র সঙ্কুচিত হইয়া কহিলেন, “তবে চল। তোমাদের নাতন গহিণীর সঙ্গে আলাপটা একবার ঝালিয়ে গেলে হয় না ?” হীরা এই কথা শনিয়া দেবেন্দ্রের প্রতি ঈর্ষানলজবলিত কটাক্ষা করিল, দেবেন্দ্র অসপভটালোকে ভাল দেখিতে পাইলেন না। হীরা কহিল, “তাঁহার সাক্ষাৎ পাইবেন কি প্রকারে ?” দেবেন্দ্র বিনীতভাবে কহিলেন, “তুমি কৃপা করিলে সকলই হয়।” হীরা কহিল, “তবে এইখানে আপনি সতক হইয়া বসিয়া থাকুন, আমি তাঁহাকে ডাকিয়া আনিতেছি।” এই বলিয়া হীরা লতামন্ডপ হইতে বাহির হইল। কিয়ন্দর আসিয়া এক বাক্ষান্তরালে বসিল এবং তখন তাহার কন্ঠসংরন্ধ নয়নবারি দর বিগলিত হইয়া বহিতে লাগিল। পরে গাত্ৰোখান করিয়া বাটীর মধ্যে প্রবেশ করিল, কিন্তু কুন্দনন্দিনীর কাছে গেল না। বাহিরে গিয়া দবাররক্ষকদিগকে কহিল, “তোমরা শীঘ্র আইস, ফািলবাগানে চোর আসিয়াছে।” তখন দেবে, চোবে, পাঁড়ে এবং তেওয়ারি পাকা বাঁশের লাঠি হাতে করিয়া অন্তঃপারমধ্য দিয়া ফািলবাগানের দিকে ছটিল। দেবেন্দ্র দরে হইতে তাহদের নাগরা জনতার শব্দ শনিয়া, দর হইতে কালো কালো গালপােটা দেখিতে পাইয়া, লতামন্ডপ হইতে লাফ দিয়া বেগে পলায়ন করিল। তেওয়ারি গোষ্ঠী কিছ দ্যুর পশ্চাদ্ধাবিত হইল। তাহারা দেবেন্দ্রকে ধরিতে পারিয়াও ধরিল না। কিন্তু দেবেন্দ্র কিঞ্চিৎ পরিস্কৃত না হইয়া গেলেন না। পাকা বাঁশের লাঠির আসবাদ তিনি প্রাপ্তত হইয়াছিলেন কি না, আমরা নিশ্চিত জানি না, কিন্তু দবারবান কর্তৃক “শািবশরো” “শালা” প্রভৃতি প্রিয়সম্পবন্ধসচক নানা মিন্ট সম্বোধনের দ্বারা অভিহিত হইয়াছিলেন, এমত আমরা শনিয়াছি। এবং তাঁহার ভূত্য একদিন তাঁহার প্রসাদী ব্রান্ডি খাইয়া পরদিবস আপন উপপত্নীর নিকট গলপ করিয়াছিল যে, “আজি বাবকে তেল মাখাইবার সময়ে দেখি যে, তাঁহার পিঠে একটা কালশিরা দাগ।” দেবেন্দ্র গহে গিয়া দই বিষয়ে সিথরসঙকলপ হইলেন। প্রথম, হীরা থাকিতে তিনি আর দত্তবাড়ী যাইবেন না। দ্বিতীয়, হীরাকে ইহার প্রতিফল দিবেন। পরিণামে তিনি হীরাকে গারতের প্রতিফল প্রদান করিলেন। হীরার লঘােপাপে গারাদন্ড হইল। হীরা এমত গরতের শাসিত প্ৰাপত হইল যে, তাহা দেখিয়া শেষে দেবেন্দ্রেরও পাষাণহৃদয় বিদীণ হইয়াছিল। তাহা বিস্তারে বর্ণনীয় নহে, পরে সংক্ষেপে বলিব। ○ > Wり