পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৩২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

, বিষবক্ষ সােয্য। আমি আত্মহত্যা করিবার চেস্টা করি নাই। আমার মাতৃত্যু আপনি আসিয়া উপস্থিত হইয়াছিল—এই জন্য ভরসা করিতেছিলাম। কিন্তু মরণেও আমার আনন্দ নাই। “মরণে আনন্দ নাই” এই কথা বলিতে সােয্যমখনীর কন্ঠ রন্ধ হইল। চক্ষা দিয়া জল পডিল। ব্ৰহ্মচারী কহিলেন, “যত বার মরিবার কথা হইল, তত বার তোমার চক্ষে জল পড়িল, দেখিলাম। অথচ তুমি মরিতে চাহ। মা, আমি তোমার সন্তান সদশ্য। আমাকে পত্র বিবেচনা করিয়া মনের বাসনা ব্যক্ত করিয়া বল। যদি তোমার দঃখনিবারণের কোন উপায় থাকে, আমি তাহা করিব। এই কথা বলিব বলিয়াই, হরমণিকে বিদায় দিয়া, নিজজনে তোমার কাছে আসিয়া বসিয়াছি। কথাবাত্তায় বঝিতেছি, তুমি বিশেষ ভদ্রঘরের কন্যা হইবে। তোমার যে উৎকট মনঃপীড়া আছে, তাহাও বঝিতেছি। কেন তাহা আমার সাক্ষাতে বলিবে না ? আমাকে সন্তান মনে করিয়া 'বলা।” সােয্যমখনী সজললোচনে কহিলেন, “এখন মরিতে বসিয়াছি——লজাই বা এ সময়ে কেন করি ? আর আমার মনোদঃখ কিছই নয়—কেবল মরিবার সময় যে সস্বামীর মািখ দেখিতে পাইলাম না, এই দঃখ। মরণেই আমার সখে-কিন্তু যদি তাঁহাকে না দেখিয়া মরিলাম, তবে মরণেও দঃখ। যদি এ সময়ে একবার তাঁহাকে দেখিতে পাই, তবে মরণেই আমার সখ্য।" ব্ৰহ্মচারীও চক্ষ মছিলেন। বলিলেন, “তোমার স্বামী কোথায় ? এখন তোমাকে তাঁহার কাছে লইয়া যাইবার উপায় নাই। কিন্তু তিনি যদি সংবাদ দিলে এখানে আসিতে পারেন, তবে আমি তাঁহাকে পত্রের দ্বারা সংবাদ দিই।” সােয্যমখনীর রোগক্লিন্ট ম্যুখে হৰ্ষবিকাশ হইল। তখন আবার ভগেনাৎসাহ হইয়া কহিলেন, “তিনি আসিলে আসিতে পারেন, কিন্তু আসিবেন কি না, জানি না। আমি তাঁহার কাছে গরতের অপরাধে অপরাধী—তবে তিনি আমার পক্ষে দয়াময়-ক্ষমা করিলেও করিতে পারেন। কিন্তু তিনি অনেক দরে আছেন—আমি তত দিন বাঁচিব কি ?” ব্রা। কত দরে সে। স। হরিপর জেলা। ব্ৰ। বাঁচিবে। এই বলিয়া ব্ৰহ্মচারী কাগজ কলম লইয়া আসিলেন, এবং সােয্যমখীর কথামত নিম্নলিখিত মত পত্র লিখিলেন— “আমি মহাশয়ের নিকট পরিচিত নাহি । আমি ব্রাহ্মণ—ব্রহ্মচৰ্য্যাশ্রমে আছি। আপনি কে তাহাও আমি জানি না। কেবল এইমাত্র জানি যে, শ্ৰীমতী সহেযািমদুখী দাসী আপনার ভাষ্যা। তিনি এই মধপর গ্রামে সঙ্কটাপন্ন রোগগ্ৰস্ত হইয়া হরমণি বৈষ্ণবীর বাড়ীতে আছেন। তাঁহার চিকিৎসা হইতেছে—কিন্তু বাঁচিবার আকার নহে। এই সংবাদ দিবার জন্য আপনাকে এ পত্ৰ লিখিলাম। তাঁহার মানস, মাতৃত্যুকালে একবার আপনাকে দশন করিয়া প্রাণত্যাগ করেন। যদি তাঁহার অপরাধ ক্ষমা করিতে পারেন, তবে একবার এই সন্থানে আসিবেন। আমি ইহাকে মাতৃসম্বোধন করি। পত্রিস্বরপ তাঁহার অনািমতিক্ৰমে এই পত্র লিখিলাম। তাঁহার নিজের লিখিবার শক্তি নাই। “যদি আসা মত হয়, তবে রাণীগঞ্জের পথে আসিবেন । রাণীগঞ্জে অন্যসন্ধান করিয়া শ্ৰীমান মাধবচন্দ্ৰ গোস্বামীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করিবেন। তাঁহাকে আমার নাম করিয়া বলিলে তিনি সঙ্গে লোক দিবেন। তাহা হইলে মধ পরে খাজিয়া বেড়াইতে হইবে না। “আসিতে হয় ত, শীঘ আসিবেন, আসিতে বিলম্ব হইলে, অভীস্টসিদ্ধি হইবে না। ইতি শ্ৰী শিবপ্রসাদ শম্পমা ।” পত্র লিখিয়া ব্ৰহ্মচারী জিজ্ঞাসা করিলেন, “কাহার নামে শিরোনামা দিব ?” সােয্যমখী বলিলেন, “হরমণি আসিলে বলিব।” হরমণি আসিলে নগেন্দ্রনাথ দত্তের নামে শিরোনামা দিয়া ব্ৰহ্মচারী পত্ৰখানি নিকটস্থ ডাকঘরে দিতে গেলেন। ব্ৰহ্মচারী যখন পত্র হাতে লইয়া ডাকে দিতে গেলেন, তখন সােয্যমখী সজলনয়নে, যক্তি করে, উদ্ধব্যমখে, জগদীশবরের নিকট কায়মনোবাক্যে ভিক্ষা করিলেন, “হে পরমেশবার! যদি তুমি Əbəy