পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৩২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিষবক্ষ কি ফরাইল ? সখি ? তা ত যে দিন সৰ্য্যেমখী গািহত্যাগ করিয়াছিলেন, সেই দিনই ফরাইয়াছিল। তবে এখন ফরাইল কি ? আশা। যত দিন মানষের আশা থাকে, তত দিন কিছই ফরায় না, আশা ফরাইলে সব ফরাইল! নগেন্দ্রের আজ সব ফরাইল। সেই জন্য তিনি গোবিন্দপাের। চলিলেন। গোবিন্দপারে গহে বাস করিতে চলিলেন না ; গহধৰ্ম্মেমরি নিকট জন্মের শোধ বিদায় লইতে চলিলেন। সে অনেক কাজ। বিষয়-আশয়ের বিলি ব্যবস্থা করিতে হইবে। জমিদারী ভদ্রাসনবাড়ী এবং অপরাপর সেবাপা জিজাত সন্থাবর সম্পত্তি ভাগিনেয়। সতীশচন্দ্রকে দানপত্রের দবারা লিখিয়া দিবেন— সে লেখাপড়া উকীলের বাড়ী নহিলে হইবে না। অসথাবর সম্পত্তি সকল কমলমণিকে দান করিবেন—সে সকল গছাইয়া কলিকাতায় তাঁহার বাড়ীতে পাঠাইয়া দিতে হইবে। কিছমাত্র কাগজ আপনার সঙেগ রাখিবেন—যে কয় বৎসর তিনি জীবিত থাকেন, সেই কয় বৎসর তাহাতেই তাঁহার নিজব্যয় নিৰ্ব্ববাহ হইবে। কুন্দনন্দিনীকে কমলমণির নিকটে পাঠাইবেন । বিষয়আশয়ের আয়ব্যয়ের কাগজপত্ৰসকল শ্ৰীশচন্দ্রকে বঝাইয়া দিতে হইবে। আর সহেযািমখী যে খাটে শইতেন, সেই খাটে শইয়া একবার কাঁদিবেন। সােয্যমখনীর অলঙ্কারিগলি লইয়া আসিবেন। সেগলি কমলমণিকে দিবেন না।--আপনার সঙ্গে রাখিবেন। যেখানে যাবেন, সঙ্গে লইয়া যাবেন। পরে যখন সময় উপস্থিত হইবে, তখন সেইগলি দেখিতে দেখিতে মরিবেন। এই সকল আবশ্যক কৰ্ম্ম নিববাহ করিয়া, নগেন্দ্র জন্মের শোধ ভদ্রাসন ত্যাগ করিয়া পনেকবার দেশ পৰ্যটন করিবেন। আর যত দিন বাঁচবেন, পথিবীর কোথাও এক কোণে লাকাইয়া থাকিয়া দিনযাপন করিবেন। শিবিকারোহণে এইরােপ ভাবিতে ভাবিতে নগেন্দ্ৰ চলিলেন। মন্ত, রাত্রি কী জ্যোৎস্যনাময়ী ; আকাশে তারা ; বাতাসে রাজপথিপাশাব্যস্থ টেলিগ্রাফের তার ধবনিত হইতেছিল। সে রাত্রে নগেন্দ্রের চক্ষে একটি তারাও সন্দর বোধ হইল না। জ্যোৎসনা অত্যন্ত ককােশ বোধ হইতে লাগিল। দলটি পদার্থ মাত্রই চক্ষঃশােল বলিয়া বোধ হইল। পথিবী অত্যন্ত নশংস। সখের দিনে যে শোভা ধারণ করিয়া মনোহরণ করিয়াছিল, আজি সেই শোভা বিকাশ করে কেন ? যে দীঘ তুণে চন্দ্রকিরণ প্রতিবিম্বিত হইলে হৃদয় স্নিগধ হইত, আজি সে দীঘ তুণ তেমনি সমতজবল কেন ? আজিও আকাশ তেমনি নীল, মেঘ তেমনি শোবত, নক্ষত্র তেমনি উত্তজবল, বায়, তেমনি ক্ৰীড়াশীল ! পশগণ তেমনি বিচরণ করিতেছে; মনষ্যে তেমনি হাস্যপরিহাসে রত; পথিবী তেমনি অনন্তগামিনী ; সংসারস্রোতঃ তেমনি অপ্রতিহত। জগতের দয়াশন্যতা আর সহ্য হয় না। কেন পথিবী বিদীণা হইয়া নগেন্দ্রকে শিবিকাসমেত গ্রাস করিল না ? নগেন্দ্ৰ ভাবিয়া দেখিলেন, সব তাঁরই দোষ। তাঁহার তেত্রিশ বৎসরমাত্র বয়ঃক্রম হইয়াছে। ইহারই মধ্যে তাঁহার সব ফরাইল। অথচ জগদীশবর তাঁহাকে যাহা দিয়াছিলেন, তাহার কিছই ফরাইবার নহে। যহাতে যাহাতে মনষ্যে সখী, সে সব তাঁহাকে ঈশবর যে পরিমাণে দিয়াছিলেন, সে পরিমাণে প্রায় কাহাকেও দেন না। ধন, ঐশবষ্য, সম্পদ, মান, এ সকল ভূমিস্ট হইয়াই অসাধারণ পরিমাণে পাইয়াছিলেন । বদ্ধি নাহিলে এ সকলে সখি হয় না—তাহাতে বিধাতা কাপিণ্য করেন নাই। শিক্ষায় পিতা-মাতা ত্রটি করেন নাই—তাঁহার তুল্য সশিক্ষিত কে ? রােপ, বল, স্বাস্থ্য, প্রণয়শীলতা, তাহাও ত প্রকৃতি তাঁহাকে অমিতহস্তে দিয়াছেন; ইহার অপেক্ষাও যে ধন দলভ-যে একমাত্র সামগ্রী এ সংসারে অমল্য।--অশেষ প্রণয়শালিনী সাধবী ভাষ্যা-ইহাও তাঁহার প্রসন্ন কপালে ঘাঁটিয়াছিল। সখের সামগ্রী পথিবীতে এত আর কাহার ছিল ? আজি এত অসখী পথিবীতে কে ? আজি যদি তাঁহার সব্বস্ব দিলে—ধন, সম্পদ, মান, রােপ, যৌবন, বিদ্যা, বন্ধি, সব দিলে, তিনি আপনি শিবিকার একজন বাহকের সঙেগ অবস্থাপরিবত্তন করিতে পারিতেন, তাহা হইলে সবগ সখি মনে করিতেন। বাহক কি ? ভাবিলেন, “এই দেশের রাজকারাগারে এমন কে নরঘা পাপী আছে যে, আমার অপেক্ষা সখী নয় ? অামা হতে পবিত্র নয় ? তারা ত অপরকে হত করিয়াছে, আমি সয্যেম, খীকে বধ করিয়াছি। আমি ইন্দ্রিয়দমন করিলে, সৰ্য্যেমখী বিদেশে আসিয়া কুটনীরদাহে মরিবে কেন ? আমি সত্যািমখীর বধকারী-কে এমন পিতৃঘ, মাতৃঘর, পত্ৰঘা আছে যে আমার অপেক্ষা গরতের পাপী ? সােয্যমখী কি কেবল আমার—সত্ৰী ? সত্যািমখী আমার—সব। সম্পবন্ধে স্ত্রী, সৌহান্দে ভ্রাতা, যত্নে ভগিনী, আপ্যায়িত করিতে কুটামিন্বনী, স্নেহে মাতা, ভক্তিতে কন্যা, প্রমোদে বন্ধ, পরামশে শিক্ষক, পরিচযৰ্যায় দাসী। VO SRO