পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৩৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রহিয়াছে। আর একখানি চিত্রে, শকুন্তলা দমন্তকে দেখিবার জন্য চরণ হইতে কালপনিক কুশাঙ্কুর মক্ত করি তেছেন—অনসিয়া প্রিয়ম্বদা হাসিতেছে—শকুন্তলা ক্ৰোধে ও লজজায় মািখ তুলিতেছেন না—দােমন্তের দিকে চাহিতেও পারিতেছেন না—যাইতেও পারিতেছেন না। আর এক চিত্রে, রণসজিজত হইয়া সিংহ শাবকতুল্য প্রতাপশালী কুমার অভিমন্য উত্তরার নিকট যাদ্ধযাত্রার জন্য বিদায় লইতেছেন—উত্তরা যাদ্ধে যাইতে দিবেন না বলিয়া দবার রদ্ধ করিয়া আপনি দাবারে দাঁড়াইয়াছেন। অভিমন্যু তাঁহার ভয় দেখিয়া হাসিতেছেন, আর কেমন করিয়া অবলীলাক্রমে ব্যুহ ভেদ করিবেন, তাহা মাটিতে তরবারির অগ্রভাগের দবারা অঙ্কিত করিয়া দেখাইতেছেন। উত্তরা তাহা কিছই দেখিতেছেন না। চক্ষে দই হস্ত দিয়া কাঁদিতেছেন। আর একখানি চিত্রে সত্যভামার তুলাৱত চিত্রিত হইয়াছে। বিস্তৃত প্রস্তরনিৰ্ম্মিত প্রাঙ্গণ, তাহার পাশে উচ্চ সৌধপরিশোভিত রাজপরী সাবণ চড়ার সহিত দীপিত পাইতেছে। প্রাঙ্গণমধ্যে এক অত্যুচ্চ রাজতনিশ্চিমত তুলাযন্ত্র স্থাপিত হইয়াছে। তাহার এক দিকে ভর করিয়া, বিদ্যদীপ্ত নীরদখন্ডবং, নানালঙ্কারভূষিত প্রৌঢ়বয়স্ক দ্বারকাধিপতি শ্ৰীকৃষ্ণ বসিয়াছেন। তুলা যন্ত্রের সেই ভাগ ভূমিস্পশ করিতেছে; আর এক দিকে নানা রত্নাদিসহিত সবৰ্ণ রাশি সত্যুপীকৃত হইয়া রহিয়াছে, তথাপি তুলাযন্ত্রের সেই ভাগ উন্ধেবাথিত হইতেছে না। তুলাপাশেব সত্যভামা ; সত্যভামা প্রৌঢ়বয়স্কা, সন্দরী, উন্নতদেহবিশিষটা, পাটকান্তিমতী, নানাভরণভূষিতা, পঙ্কজলোচনা ; কিন্তু তুলাযন্ত্রের অবস্থা দেখিয়া তাঁহার মািখ শকাইয়াছে। তিনি অঙ্গের অলঙ্কার খালিয়া তুলায় ফেলিতেছেন, হস্তের চম্পমাকোপম অঙ্গলির দবারা কণ বিলম্বী রত্নভূষা খলিতেছেন, লজজায় কপালে বিন্দ বিন্দ, ঘৰ্ম্মম হইতেছে, দঃখে চক্ষে জল আসিতেছে, ক্ৰোধে নাসারন্ধু বিসফারিত হইতেছে, অধর দংশন করিতেছেন ; এই অবস্থায় চিত্রকর তাঁহাকে লিখিয়াছেন। পশ্চাতে দাঁড়াইয়া, সবণপ্রতিমারপিণী রক্ষ্মিণী দেখিতেছেন। তাঁহারও মািখ বিমর্ষ। তিনিও আপনার অঙ্গের অলঙ্কার খলিয়া সত্যভামাকে দিতেছেন। কিন্তু তাঁহার চক্ষ শ্ৰীকৃষ্ণের প্রতি; তিনি সর্বামিপ্রতি অপাঙ্গে দভিটপাত করিয়া, ঈষান্মাত্র অধরপ্রান্তে হাসি হাসিতেছেন, কিন্তু শ্ৰীকৃষ্ণ সেই হাসিতে সপত্নীর আনন্দ সম্পপণ দেখিতে পাইতেছেন। শ্ৰীকৃষ্ণের মােখ। গম্ভীর, স্থির, যেন কিছই জানেন না; কিন্তু তিনি অপাঙ্গে রক্ষ্মিণীর প্রতি দলিট করিতেছেন, সে কটাক্ষেও একট, হাসি আছে। মধ্যে শত্রবসন শত্ৰকান্তি দেবষি নারদ : তিনি বড় আনন্দিতের ন্যায় সকল দেখিতেছেন, বাতাসে। তাঁহার উত্তরীয় এবং শমশ্র উড়িতেছে। চারি দিকে বহসংখ্যক পৌরবগ নানাপ্রকার বেশভূষা ধারণ করিয়া আলো করিয়া রহিয়াছে। বহসংখ্যক ভিক্ষক ব্রাহ্মণ আসিয়াছে। কত কত পােররক্ষিগণ গোল থামাইতেছে। এই চিত্রের নীচে সহেযািমদুখী স্বহস্তে লিখিয়া রাখিয়াছেন, “যেমন কম তেমনি ফল। স্বামীর সঙেগ, সোণারপোর তুলা ?” নগেন্দ্র যখন কক্ষমধ্যে একাকী প্রবেশ করিলেন, তখন রাত্ৰি দিবপ্রহর অতীত হইয়াছিল। রাত্রি অতি ভয়ানক। সন্ধ্যার পর হইতে অলপ অলপ বক্ৰিট হইয়াছিল এবং বাতাস উঠিয়াছিল। এক্ষণে ক্ষণে ক্ষণে বন্টি হইতেছিল, বায় প্রচন্ড বেগ ধারণ করিয়াছিল। গাহের কবাট যেখানে যেখানে মন্ত ছিল, সেইখানে সেইখানে বজাতুল্যশব্দে তাহার প্রতিঘাত হইতেছিল। সাসী সকল ঝন ঝন শব্দে শবিদ্যুত হইতেছিল। নগেন্দ্ৰ শয্যাগহে প্রবেশ করিয়া দবার রদ্ধ করিলেন। তখন বাত্যানিনাদ মন্দীভূত হইল। খাটের পাশেব আর একটি দবার খোলা ছিল—সে দাবার দিয়া বাতাস আসিতেছিল না, সে দাবার মন্ত রহিল। নগেন্দ্ৰ শয্যাগহে প্রবেশ করিয়া, দীঘ নিশবাস ত্যাগ করিয়া একখানি সোফার উপর উপবেশন করিলেন। নগেন্দ্র তাহাতে বসিয়া কত যে কাঁদিলেন, তাহা কেহ জানিল না। কত বার সােয্যমখীর সঙ্গে মাখামখি করিয়া সেই সোফার উপর বসিয়া। কত সখের কথা বলিয়াছিলেন। নগেন্দ্র ভূয়োভুয়ঃ সেই অচেতন আসনকে চুম্বনা লিঙ্গন করিলেন। আবার মািখ তুলিয়া সােয্যমখনীর প্রিয় চিত্রগলির প্রতি চাহিয়া দেখিলেন। গহে উক্তজবল দীপ জবলিতেছিল—তাহার চঞ্চল রাশিমতে সেই সকল চিত্ৰপাত্তলি সজীব দেখাইতেছিল। প্রতি চিত্রে নগেন্দ্র সােয্যমখীকে দেখিতে লাগিলেন। তাঁহার মনে পড়িল যে, উমার কুসমসত্মজা দেখিয়া সম্যােমখী এক দিন আপনি ফল পরিতে সাধ করিয়াছিলেন। তাহাতে নগেন্দ্র আপনি উদ্যান হইতে পাপ চয়ন করিয়া আনিয়া সর্বহস্তে সােয্যমখনীকে কুসমময়ী সাজাইয়াছিলেন। তাহাতে সহেযািমখী যে কত সখী হইয়াছিলেন—কোন রমণী রত্নময়ী সাজিয়া তত সখী হয় ? আর এক দিন সভদ্রার Ꮤ0 Ꮼ Ꮼ