পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৩৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

७क द्रbन्नाव्नीं ষট চত্বারিংশত্তম পরিচ্ছেদ ঃ পাকবািবত্তান্ত যথাসময়ে সােয্যমখী নগেন্দ্রের কৌতহ’ল নিবারণ করিলেন। বলিলেন, “আমি মারি নাই —কবিরাজ যে আমার মরার কথা বলিয়াছিলেন-সে মিথ্যা কথা। কবিরাজ জানেন না। আমি তাঁহার চিকিৎসায় সবল হইলে, তোমাকে দেখিবার জন্য গোবিন্দপারে আসিবার কারণ নিতান্ত কাতর হইলাম। ব্ৰহ্মচারীকে ব্যতিব্যস্ত করিলাম। শেষে তিনি আমাকে গোবিন্দপরে লইয়৷ আসিতে সক্ষমত হইলেন। এক দিন সন্ধ্যার পর আহারাদি করিয়া তাঁহার সঙ্গে গোবিন্দপরে আসিবার জন্য যাত্ৰা করিলাম। এখানে আসিয়া শানিলাম যে, তুমি দেশে নাই। ব্রহ্মচারী আমাকে এখােন হইতে তিন ক্লোশ দারে, এক ব্রাহ্মণের বাড়ীতে আপন কন্যা পরিচয়ে রাখিয়া, তোমার উদ্দেশ্যে গেলেন। তিনি প্রথমে কলিকাতায় গিয়া শ্ৰীশচন্দ্রের সহিত সাক্ষাৎ করিলেন। শ্ৰীশচন্দ্রের নিকট শনিলেন, তুমি মধ্যপরে আসিতেছ। ইহা শনিয়া তিনি আবার মধ্যপরে গেলেন। মধ্য পরে জানিলেন যে, যে দিন আমরা হরমণির বাটী হইতে আসি, সেই দিনেই তাহার গাহদাহ হইয়াছিল। হরমণি গহমধ্যে পড়িয়া মরিযাছিল। প্রাতে লোকে দগধ দেহ দেখিয়া চিনিতে পারে নাই। তাহাবা সিদ্ধান্ত করিল যে, এ গহে দাইটি সত্ৰীলোক থাকিত ; তাহার একটি মরিয়া গৈয়াছে—আর একটি নাই। তবে বোধ হয়, একটি পলাইয়া বাঁচিয়াছে—আর একটি পড়িয়া মরিয়াছে। যে পলাইয়াছে, সে সবল ছিল, যে রাগন, সে পলাইতে পারে নাই। এইরনুপে তাহারা সিদ্ধান্ত করিল যে, হরমণি পলাইয়াছে, আমি মরিয়াছি। যাহা প্রথমে অনামান মাত্র ছিল, তাহা জনরবে ক্ৰমে নিশ্চিত বলিয়া প্রচার হইল। রামকৃষ্ণ সেই কথা শনিয়া তোমাকে বলিয়ছিলেন। ব্রহ্মচারী এই সকল অবগত হইয়া আরও শনিলেন যে, তুমি মধ্যপরে গিয়াছিলে এবং আমার মাতৃত্যুসংবাদ শনিয়া, এই দিকে আসিয়ােছ। তিনি আমনি ব্যস্ত হইয়া তোমার সন্ধানে ফিরিলেন। কালি বৈকালে তিনি প্রতাপপরে পৌছিয়াছেন, আমিও শনিয়াছিলাম যে, তুমি দই এক দিন মধ্যে বাটী আসিবে । সেই প্রত্যাশায় আমি পরশব এখানে আসিয়াছিলাম। এখন আর তিন ক্লোশ পথ হাঁটিতে ক্লেশ হয় না—পথ হাঁটিতে শিখিয়াছি। পরশব তোমার আসা হয় নাই, শনিয়া ফিরিয়া গেলাম, আবার কাল ব্রহ্মচারীর সঙ্গে সাক্ষাতের পর গোবিন্দপরে আসিলাম । যখন এখানে পৌছিলাম, তখন এক প্রহর রাত্রি। দেখিলাম, তখনও খিড়কি দয়ার খোলা । গহমধ্যে প্রবেশ করিলাম—কেহ আমাকে দেখিল না। সিড়ির নীচে ল্যুকাইয়া রহিলাম। পরে সকলে শাইলে সিড়িতে উঠিলাম। মনে ভাবিলাম, তুমি অবশ্য এই ঘরে শয়ন করিয়া আছ। দেখিলাম, এই দয়ার খোলা। দয়ারে উকি মারিয়া দেখিলাম—তুমি মাথায় হাত দিয়া বসিয়া আছি। বড় সাধ হইল, তোমার পায়ে লটাইয়া পড়ি—কিন্তু আবার কত ভয় হইল—তোমার কাছে যে অপরাধ করিয়াছি--তুমি যদি ক্ষমা না করা ? আমি ত তোমাকে কেবল দেখিয়াই তৃপত।। কপাটের আড়াল হইতে দেখিলাম; ভাবিলাম, এই সময়ে দেখা দিই। দেখা দিবার জন্য আসিতেছিলাম –কিন্তু দয়ারে আমাকে দেখিয়াই তুমি অচেতন হইলে । সেই অবধি কোলে লইয়া বসিযা আছি। এ সখি যে আমার কপালে হইবে, তাহা জানিতাম না। কিন্তু ছি! তুমি আমায় ভালবাস না। তুমি আমার গায়ে হাত দিয়াও আমাকে চিনিতে পার নাই—আমি তোমার গায়ের বাতাস পাইলেই চিনিতে পারি।” সপতচত্বারিংশত্তম পরিচ্ছেদ ঃ সরলা এবং সপী যখন শয়নাগারে সখসাগরে ভাসিতে ভাসিতে নগেন্দ্র ও সােয্যমখী এই প্রাণস্নিগ্ৰধকর কথোপকথন করিতেছিলেন, তখন সেই গাহের অংশান্তরে এক প্রাণসংহারিক কথোপকথন হইতেছিল। কিন্তু তৎপকেব, পােববরাত্রের কথা বলা আবশ্যক। বাটী আসিয়া নগেন্দ্র কুন্দের সঙ্গে সাক্ষাৎ করিলেন না। কুন্দ আপন শয়নাগারে উপাধানে মািখ ন্যস্ত করিয়া সমস্ত রাত্রি রোদন করিল। কেবল বালিকাসলভ রোদন নহে—মম্পমান্তিক পীড়িত হইয়া রোদন করিল। যদি কেহ কাহাকে বাল্যকালে অকপটে আত্মসমপণ করিয়া যেখানে অমল্য হৃদয় দিয়াছিল, সেখানে তাহার বিনিময়ে কেবল তাচ্ছল্য প্রাপতি হইয়া থাকে, তবে Ꮼ Ꮼ Ꮼ