পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৩৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্কিম রচনাবলী । ঘর ঝাঁটাইয়া আসি। আজ দেখি যে, বৌদিদির হাতের কাছেই কে ঝাঁটা। রাখিয়া আসিয়াছে। আমি যেমন গিয়া বলিলাম, “তা যাব কি ?” অমনি বৌদিদি সেই ঝাঁটা লইয়া আমাকে তাড়াইয়া মারিতে আসিল। ভাগ্যিস পালাতে জানি, তাই পালিয়ে বাঁচালেম । নহিলে খেওগরা খেয়ে প্রাণটা গিয়েছিল। আর কি ? তব এক ঘা বঝি। পিঠে পড়েছে;—দেখ দেখি দাগ হয়েছে কিনা ?” হারাণী হাসিতে হাসিতে আমাকে পিঠ দেখাইল । মিছে কথা-দাগ ছিল না। তখন সে বলিল, “এখন কি করতে হবে বল-ক'রে আসি !” আমি। ঝাঁটা খেয়ে যাবি ? হারাণী। ঝাঁটা মেরেছে—বারণ ত করে নি। আমি বলেছিলাম, বারণ না করে ত যাব। আমি। ঝাঁটা কি বারণ না ? হারাণী। হা, দেখ দিদিমণি, বৌদিদি যখন ঝাঁটা তোলে, তখন তার ঠোঁটের কোণে একটা হাসি দেখেছিলাম। তা কি করতে হবে, বল । আমি তখন এক টকরা কাগজে লিখিলাম, “আমি আপনাকে মনঃপ্রাণ সমাপণ করিয়াছি। গ্রহণ করিবেন কি ? যদি করেন, তবে আজ রাত্ৰিতে এই বাড়ীতে শয়ন করিবেন। ঘরের দাবার যেন খোলা থাকে। সেই পচিকা ।” পত্র লিখিয়া, লজ্ঞজায় ইচ্ছা করিতে লাগিল, পাকুরের জলে ডুবিয়া থাকি, কি অন্ধকারে লকাইয়া থাকি। তা কি করিব ? বিধাতা যেমন ভাগ্য দিয়াছেন!! বঝি আর কখন কোন কুলবতীর কপালে এমন দন্দশা ঘটে নাই। কাগজটা মাড়িয়া সড়িয়া হারাণীকে দিলাম। বলিলাম, “একটা সবাের।” সভাষিণীকে বলিলাম, “একবার দাদা বাবকে ডাকিয়া পাঠাও। যাহা হয় একটা কথা বলিয়া বিদায় দিও।” সভাষিণী তাই করিল। রমণ বাবা উঠিয়া আসিলে, হারাণীকে বলিলাম, “এখন যা।” হারাণী গেল, কিছর পরে কাগজটা ফেরত দিল। তার এক কোণে লেখা আছে, “আচ্ছা।” আমি তখন হারাণীকে বলিলাম, “যদি এত করিলি, তবে আর একটা করিতে হইবে। দােপর রাত্রে আমাকে তাঁর শইবার ঘরটা দেখাইয়া দিয়া আসিতে হইবে।” হারাণী। আচ্ছা, কোন দোষ নাই ত ? আমি। কিছ না। উনি আর জন্মে। আমার স্বামী ছিলেন। হারাণী। আর জন্মে, কি এ জন্মে, ঠিক বঝিতে পারিতেছি না। আমি হাসিয়া বলিলাম, “চুপ।” হারাণী হাসিয়া বলিল, “যদি এ জন্মের হন, তবে আমি পাঁচ শত টাকা বখশিশ, নিব; নহিলে আমার ঝাঁটার ঘা ভাল হইবে না।” আমি তখন সভাষিণীর কাছে গিয়া এ সকল সংবাদ দিলাম। সভাষিণী শাশড়ীকে বলিয়া আসিল, “আজ কুমদিনীর অসদুখ হইয়াছে; সে রাঁধতে পরিবে না। সোণার মা-ই রাধক।” সোণার মা রধিতে গোল—সম্ভাষিণী আমাকে লইয়া গিয়া ঘরে কবাট দিল। আমি জিজ্ঞাসা করিলাম, “এ কি, কয়েদ কেন?” সভাষিণী বলিল, “তোমায় সাজাইব ।” তখন আমার মািখ পরিস্কার করিয়া, মছাই-স্যা দিল। চুলে। সগন্ধ তৈল মাখাইয়া, যত্নে খোঁপা বধিয়া দিল; বলিল, “এ খোঁপার হাজার টাকা। মতুল্য, সময় হইলে আমায় এ হাজার টাকা পাঠাইয়া দিস।” তার পর আপনার একখানা পরিস্কার, রমণীমনোহর বস্ত্ৰ লইয়া জোর করিয়া পরাইতে লাগিল। সে যেরপ টানাটানি করিল, বিবস্ত্রা হইবার ভয়ে আমি পরিতে বাধ্য হইলাম। তার পর আপনার অলঙকাররাশি আনিয়া পরাইতে আসিল । আমি বলিলাম, “এ আমি কিছতেই পরিব না।” তার জন্য অনেক বিবাদ বচসা হইল—-আমি কোন মতেই পরিলাম না দেখিয়া সে বলিল, “তবে, আর এক সন্ট আনিয়া রাখিয়াছি, তাই পর।” এই বলিয়া সভাষিণী একটা ফলের জাডিানিয়র হইতে বাহির করিয়া মল্লিকা ফলের তার পর এক জোড়া নািতন সোণার ইয়ার রিং বাহির করিয়া বলিল, “এ আমি নিজের টাকায় ○ Wり げ